তেরো ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট মানে রাজস্থান রয়্যালস প্লে অফে পৌঁছে গিয়েছে ধরে নেওয়া যায়। বাকি তিনটে ম্যাচের মধ্যে একটা আবার ঘরের মাঠ জয়পুরে। যেখানে দ্রাবিড়ের দল সাতটা ম্যাচের সাতটায় জিতেছে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, প্লে অফে এটাই রাজস্থানের গলায় বড় কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
পেপসি আইপিএলের নিয়মে প্লে অফ থেকে ট্রফি জিততে হলে দু’টো অথবা তিনটে ম্যাচ খেলতে হবে। সেক্ষেত্রে রাজস্থানকে চ্যাম্পিয়ন হতে হলে তিনটে অ্যাওয়ে ম্যাচ বার করতে হবে। প্লে অফ-টা এ বার কোটলা আর ইডেনে পড়ায়। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখবেন, এ বার লিগে দ্রাবিড়দের হোম রেজাল্ট যত দুর্দান্ত, অ্যাওয়ে ম্যাচে পারফরম্যান্স ততটাই খারাপ। বৃহস্পতিবারই রাজস্থান অ্যাওয়েতে (মোহালি) কিংস ইলেভেন পঞ্জাবকে আট উইকেটে হারালেও ওরা অন্যত্র প্রায় সর্বত্র হেরেছে। হায়দরাবাদে হেরেছে, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, পুণে, কলকাতায় হেরেছে। রাজস্থানকে এ বার ঘরের মাঠে প্রায় অপরাজেয় দেখানোর সোজা কারণ, ওদের পেস অ্যাটাকের উপযোগী উইকেট তৈরি করে তার পুরো ফায়দা তোলা। আউটফিল্ড আর উইকেটের সবুজের মধ্যে এক-এক সময় যেন পার্থক্য করা যাচ্ছে না! তবে ফকনার, কুপার, শ্রীসন্থ, ওয়াটসনরা খুব ভাল বোলিংও করছে। |
আর শক্ত উইকেট বল ভাল ব্যাটে আসায় দ্রাবিড়, রাহানে, ওয়াটসন, সঞ্জু স্যামসনদের পক্ষে আরামসে স্ট্রোক খেলাও সম্ভব হচ্ছে। সব মিলিয়ে জমাট দেখাচ্ছে রাজস্থানকে।
যেটা অ্যাওয়ে উইকেটে কতটা দেখাবে আমার একটু সন্দেহ আছে। বিশেষ করে কোটলা আর ইডেনের পিচ লিগের ম্যাচে স্লো টার্নার ছিল। প্লে অফে হয়তো তার চেয়ে একটু শক্ত উইকেট হবে। কিন্তু কতটা আর? প্লে অফের চারটে টিমের মধ্যে যাদের বেশি ভাল স্পিনার আছে এ বার তারাই বেশি সুবিধে পাবে বলে আমার ধারণা। আর সেখানে দ্রাবিড়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা ভাল স্পিনার না থাকা। ব্র্যাড হগকে খেলাতে গেলে ওকে যে কোনও এক জন বিদেশিকে বসাতে হবে। কিন্তু রাজস্থানের প্রথম চার বিদেশিই (ওয়াটসন-কুপার-হজ-ফকনার) ভাল ফর্মে রয়েছে। প্লে অফে তাই প্রথম এগারো বাছাও দ্রাবিড়ের কাছে আর একটা চ্যালেঞ্জ। রাজস্থানকে নিয়ে তাই প্লে অফে দারুণ আশাবাদী হচ্ছি না। যদিও শেষ চারের মধ্যে ঢুকে পড়া মানে যে কোনও খেলাতেই আপনি ট্রফির কাছাকাছি পৌঁছে গেলেন। তাই রাজস্থানও শেষ ল্যাপে দুটো কী তিনটে ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হতেই পারে।
বিশেষ করে ওদের টিমে সঞ্জু স্যামসনের মতো অজানা শক্তিও যে রকম চমকে দিচ্ছে! এ দিনও সঞ্জু দারুণ পরিণতিবোধ দেখিয়ে ৩৩ বলে ৪৭ নট আউট থেকে রাহানের (৪৯ বলে ৫৯ নটআউট) সঙ্গে সহজেই ম্যাচ বার করে নিল। সঞ্জুকে প্রথম দেখেছিলাম বছর দুই আগে চেন্নাই বিমানবন্দরে। যখন আমি শুধু দেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া কেকেআর দলের অধিনায়ক হয়ে শ্রীলঙ্কায় প্রস্তুতি সফরে যাচ্ছিলাম। সেই সফরে সঞ্জু মনে রাখার মতো কিছু করেনি। তেমন প্রতিভাবানও মনে হয়নি ওকে দেখে। তবে শেখার প্রবল ইচ্ছে দেখেছিলাম। আর ভীষণ পরিশ্রমী ছেলে। ওই দু’টো গুণের জোরেই তার পর ওর উন্নতিটা লাফিয়ে লাফিয়ে হয়েছে। অনেকটা ক্লাসে পরের পর ডাবল প্রমোশনের মতো। কেরলের এই টিনএজার গত মরসুমে রঞ্জিতে দুটো সেঞ্চুরি করেছে। শ্রীলঙ্কা সফরের পর না হোক, কেকেআর সঞ্জুকে ২০১২-এ সই করিয়েছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে কোনও ম্যাচে খেলাতে পারেনি। সে জন্যই হয়তো এ বার ‘রিলিজ’ দিয়েছে। রঞ্জিতে ভাল মরসুম যাওয়া ছাড়াও সঞ্জুর সৌভাগ্য দুর্দান্ত একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি পেয়েছে। যেখানে রাহুল দ্রাবিড়ের মতো এক জন শিক্ষক আছে। আমি নিশ্চিত, সঞ্জু এ দিন মিডল স্টাম্পে পড়া যে বলটাতেও দুর্ধর্ষ লেট-কাট মারল, সেই সাহস আর টেকনিকের পিছনে আছে দ্রাবিড়ের ক্লাস। কোনও মাঝারিমানের দলের মাথার উপর এক জন অসাধারণ ক্যাপ্টেন থাকলে সেই দলও যে কতটা শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে দ্রাবিড়ের রাজস্থান রয়্যালস তার জ্বলন্ত উদাহরণ! |