|
|
|
|
বেহাল গোলবাজার |
রেলকে ভাড়া দিয়েও অমিল পরিষেবা, ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা |
সুমন ঘোষ • খড়্গপুর |
নিয়ম মেনে ভাড়া দিতে হয়। ভাড়া দিতে দেরি হলে দোকান সিল করে দেওয়া হয়। অথচ পরিষেবা মেলে না। নিজেদেরও কিছু করার জো নেই। দোকানের ফুটো ছাদ সারাতেও মালিককে রেলের অনুমতি নিতে হয়। সেটা পাওয়াও সহজ নয়। এ জন্য ‘তুষ্ট’ করতে হয় বাজারের দায়িত্বে থাকা রেলকর্মীদের। সব মিলিয়ে চূড়ান্ত সমস্যায় আছেন খড়্গপুর গোলবাজারের কয়েক হাজার ব্যবসায়ী।
সমস্যা মেটাতে বিক্ষোভ, বন্ধ হয়েছে। রেলের আধিকারিকেরা এসে আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। খড়্গপুর চেম্বার অব কমার্সের গোলবাজার ইউনিটের সম্পাদক টিঙ্কু ভৌমিক বলেন, “সব থেকে দুঃখের কথা হল, ভাড়া দেওয়ার পরেও বেশিরভাগ দোকানেই বিদ্যুৎ সংযোগ পর্যন্ত মেলেনি। তীব্র গরমেও সারা দিন আলো-পাখা ছাড়াই দোকন চালাতে হয়। শুধু সন্ধেটায় জেনারেটর ব্যবহার করা হয়।” রেলের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার এ কে শ্যামলের অবশ্য বক্তব্য, “কিছু সমস্যা রয়েছে। বিষয়টি আমাদের নজরেও রয়েছে। সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ করা হবে।”
রেলশহরের সব থেকে বড় বাজার হল গোলবাজার। বিশাল চত্বরে রয়েছে জনতা মার্কেট, সিমলা সেন্টার, ক্লথ মার্কেট, ভাণ্ডারীচক, চাঁদনি চক, হকার্স মার্কেট, সব্জিবাজার-সহ একাধিক ছোট ছোট বাজার। ছোট-বড় মিলিয়ে ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। বছরে কোনও দোকানের ভাড়া ৬ হাজার তো কোনও দোকানের ৪০ হাজার টাকা। প্রতি বছরই ৭ শতাংশ করে ভাড়া বাড়ে। বহু বছর আগে যখন খড়্গপুরে জংশন স্টেশন তৈরি হয়, তখন জনসংখ্যা বাড়ে। সেই সূত্রে রেলের জমিতে গড়ে ওঠে বাজার। সেই বাজারই এখন সমস্যায় জীর্ণ। |
|
ঘিঞ্জি বাজারে চলাফেরাই দায়। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
প্রথমেই রয়েছে রাস্তার সমস্যা। এখনও সব রাস্তা পাকা হয়নি। নিকাশিও বেহাল। নালা পরিষ্কার না হওয়ায় জল জমে দুর্গন্ধ ছড়ায়। মশার উৎপাত বাড়ে। পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। বিশাল বাজারে প্রস্রাবাগারও মাত্র একটি। নেই পার্কিং জোন। মোট দোকানের মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবসায়ী বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছেন। সন্ধের পর জেনারেটরের আলোয় ব্যবসা হয়। এতে বেশি খরচ পড়ে। একটি দোকানে কমপক্ষে ৩টি টিউব লাইট প্রয়োজন। প্রতিটি ইউনিটের জন্য দিনে ১০ টাকা করে দিতে হয়। পাখা চালালে দিতে হয় আরও ১০ টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ীদের কথায়, “কোনও দাবি করতে গেলেই পরদিন এসে হুমকি দেওয়া হয়, ‘দোকান তুলে দেব’। ঝড়ে ছাউনির টিন উড়ে গেলেও সারাতে পারি না। অনুনয়-বিনয়েও চিঁড়ে ভেজে না। টাকা দিতে হয়!”
অথচ ন্যূনতম পরিষেবা দেওয়া তো খুব একটা সমস্যা নয়। প্রস্রাবাগার থেকে পার্কিং জোন তৈরির জন্য জমিও রয়েছে। অব্যবহৃত সেই জমিতে এখন মাদকাসক্ত যুবকদের আড্ডা। ব্যবসায়ীরাই এই জমিতে প্রস্রাবাগার ও পার্কিং জোন তৈরি করতে রাজি। তাঁদের মতে, “আমরা পার্কিংয়ের জন্য ন্যূনতম টাকা নেব। ‘পে অ্যান্ড ইউজ টয়লেট’ ব্যবহারের জন্যও টাকা নেব। তা রক্ষণাবেক্ষণে ১০-১২ জন লোক লাকবে। তাঁদের মাইনে দেব ও রেলকেও টাকা দেব। তবু রেল তাতে রাজি হচ্ছে না।” খড়্গপুর চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক রাজা রায় বলেন, “রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে বারবার বৈঠক করেছি। সমস্যা বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তবু কাজ হয়নি।”
সম্প্রতি এ ব্যাপারে রেলের খড়্গপুর ডিভিশনের ডিআরএম গোলবাজার পরিদর্শনে এসেছিলেন। গোলবাজারের উন্নয়নে আশ্বাসও দিয়েছেন। আবারও সেই ভরসায় বুক বেঁধেছেন ব্যবসায়ীরা। এরপরেও না কাজ হলে ফের আন্দোলনের পথেই যেতে হবে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। |
|
|
|
|
|