রীতি ভেঙে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে ‘কর্মদিবস’ পালন করে প্রতিষ্ঠাতার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্বভারতীতে এত দিন রবীন্দ্র জন্মোৎসব অনুষ্ঠানের পরে জরুরি পরিষেবা ছাড়া সমস্ত ভবন ও বিভাগের কাজকর্ম বন্ধ থাকত। উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের নির্দেশে বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হল। উপাচার্যের প্রশ্ন, “যিনি দিনে একটার বেশি কবিতা বা গান রচনা করছেন, তার পরিশ্রম করার ক্ষমতা কোন মাপের ছিল? তিনি কি নিজেকে একটা দিন বা একটা ঘণ্টাও ছুটি দিয়েছেন? তাহলে তাঁরই গড়া প্রতিষ্ঠানে আমরা ছুটি ছুটি করে গলা ফাটিয়ে চেঁচাচ্ছি কেন?” এই ২৫ বৈশাখ থেকে এ বিষয়ে নতুন করে ভাবনা শুরু করার কথা বলেন তিনি।
কাজ করে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, মনে করিয়ে দিচ্ছে অতীতের আরও একটি ঘটনাকে। জামশেদজি রতনজি টাটার যে দিন মৃত্যু হয়েছিল, সেদিন ‘টিস্কো’ ও ‘টেলকো’ খোলা ছিল। ওই দুই সংস্থার কর্মীরা স্বাভাবিক কাজ করেই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন।
গত বছর ২৫ বৈশাখ উপলক্ষে বিশ্বভারতীতে কিছু অনুষ্ঠান করা হলেও এ বছর জন্মোৎসবের অনুষ্ঠানের আঙ্গিকে বদল এসেছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সূচিতে যেমন বদল এসেছে, তেমনই যোগ হয়েছে রবীন্দ্রভবনে বিশেষ প্রদর্শনী, গ্রন্থন বিভাগের বই প্রকাশ ও বইমেলাও। এ দিন সকালে অবশ্য রীতি মেনে কাঁচের মন্দিরে ব্রহ্ম-উপাসনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। উপাচার্য তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, “রবীন্দ্রনাথ ধারাবাহিক ভাবে এক টানা কাজ করে গিয়েছেন। কিন্তু আমরা নানা অছিলায় ছুটি উপভোগ করি। ছুটি কমলে সমালোচনা করি। এ বার সময় এসেছে এই জন্মোৎসব শপথ নেওয়ার কাজ করবার শপথ।” তাঁর সংযোজন, “রবীন্দ্রনাথের কর্মজীবনের ব্যাপ্তি পঁচিশ হাজার দিন। কিন্তু তাঁর অবদান হিসেব করলে দেখা যায় তা ২৮ হাজারেরও উপর। দিনে একাধিক কবিতা লিখেছেন অথবা গান বা ছবি এঁকেছেন। তাই কাজ করার মাধ্যমেই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা উচিত।”
মনীষীদের জন্মদিন বা মৃত্যুদিনে ছুটি উদ্যাপন এ রাজ্যের দীর্ঘদিনের রীতি। সরকারি বদান্যতায় আম বাঙালির সেই অভ্যাসে কখনও চিড় খায়নি। এ দিনও রাজ্য জুড়ে যখন ছুটির মেজাজ, তখন এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছিল আর পাঁচটা দিনের মতো প্রায় স্বাভাবিক। এ দিন কেমন কাজ হয়েছে জানতে চাইলে সুশান্তবাবু বলেন, “আজ, আমি কাজ করেছি। আমার কর্মীরাও করেছেন। ক্লাস হয়েছে বলেও খবর পেয়েছি।”
ঘটনা হল, এ দিন বিশ্বভারতীর বিভিন্ন ভবনে পরীক্ষাগ্রহণ হয়েছে। কয়েকটি বিভাগের ফলও বেরিয়েছে। রবীন্দ্র জন্মোৎসবের অনুষ্ঠানের শরিক হওয়ায় পাঠভবনে অবশ্য কোনও ক্লাস হয়নি। তবে, শিক্ষাসত্রে ক্লাস হয়েছে অন্য দিনের মতোই। বিশ্বভারতীর পল্লিচর্চা কেন্দ্রের করণিক শিবশঙ্কর রায় বললেন, “আগে এই সময় আমরা ছুটি কাটাতাম। এ বার কিন্তু পুরোদমে কাজ হয়েছে।”
সুশান্তবাবুর এই উদ্যোগকে কর্মিসভা ও অধ্যাপকসভা স্বাগত জানালেও কর্মী, অধ্যাপক ও আধিকারিকদের একাংশের অবশ্য মুখভার। অনেকেই আগাম ‘ছুটি’ নিয়ে কলকাতা-সহ নানা জায়গায় চলে গিয়েছেন। আবার অনেকের দাবি, মঙ্গলবার বিকেলে ছুটি বাতিলের বিজ্ঞপ্তি আসায় এবং বুধবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় অনেক কর্মীই এ দিন বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকার কথা জানতে পারেননি।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে কর্মদিবস বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে। সেই নির্দেশ কার্যকর করতে সুশান্তবাবু বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হয়েছেন। প্রাথমিক আলোচনায় ছুটি কমানো নিয়ে কোনও কোনও স্তর থেকে বিরোধিতাও এসেছে। তবে, কর্মসংস্কৃতি ফেরানোয় আশাবাদী উপাচার্য। তাঁর কথায়, “আশা করছি, কাজের মাধ্যমে এই দিনটি পালন করার গুরুত্ব ক্রমে সবাই আরও ভাল করে বুঝবেন।” |