রাত পেরোলেই ২৫ বৈশাখ, রঙের পোচ পড়ছে রবীন্দ্রনাথের মূর্তিতে অথচ রঙহীন চেহারায়, ভাঙা দেওয়াল নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে কালনার রবীন্দ্রসদন। দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়ায় ঝাপসা হয়ে গিয়েছে রবীন্দ্রসদন লেখা ফলকটাও।
শহরবাসীরা জানান, স্বাধীনতার আগে তৈরি এই ভবনটির আগে নাম ছিল ভিক্টোরিয়া টাউন হল। পরে ১৯৬১ সালে মহকুমা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিতে সরকারি এই ভবনের নাম হয় রবীন্দ্রসদন। প্রথমে ঝকঝকে তকতকে থাকলেও দিন পেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে বার্ধক্য নামে ভবনে। বাইরের দেওয়াল থেকে খসতে থাকে সিমেন্টের চাঙর, ফাটল ধরে পাইপে, দেওয়ালে লাগানো টিনের গায়েও মরচে পড়ে যায়। এখন তো বোঝাই দায়, এটা জেলার সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। ভবনের ভেতরের অবস্থাও সঙ্গিন। ঘরগুলিতে বসার চেয়ার টেবিল নেই, মঞ্চও পাকা নয়। আলো, শব্দ ব্যবস্থার হালও খারাপ। একটা সময়ে এই ভবনটি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে ভাড়াও দেওয়া হয়েছিল। ব্যাঙ্ক উঠে যাওয়ার পরেও বিয়ে, শ্রাদ্ধ, রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নানা ইত্যাদি নানা কাজে ভবনটি ভাড়া দেওয়া হতে থাকে। তবে বছর দুয়েক আগে রবীন্দ্রসদন দেখভালের যে নতুন কমিটি তৈরি হয় তারা সিদ্ধান্ত নেয়, সাংস্কৃতির অনুষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনও কাজে রবীন্দ্রসদন ভাড়া দেওয়া যাবে না। |
রবীন্দ্রসদনের এমন দশায় ক্ষুব্ধ শহরবাসীও। তাঁদের অভিযোগ, সংস্কার তো হয়ই না, রবীন্দ্রজয়ন্তী ছাড়া কোনও অনুষ্ঠানও হয় না। এমনকী রবীন্দ্রজয়ন্তীটাও কোনওরকমে করা হয় বলে তাঁদের দাবি। রবীন্দ্রসদন কমিটির সম্পাদক তথা উপ-পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ জানান, খুব শীঘ্রই পুরসভার বরাদ্দ টাকা ও বিধায়ক তহবিলের টাকা দিয়ে এই ভবনের হাল ফেরানো হবে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দেড়েক আগে জেলা জুড়ে রবীন্দ্রচর্চার কেন্দ্রগুলির কী অবস্থা তা জানতে চায় জেলা প্রশাসন। উন্নয়নের পরিকল্পনা পাঠানোর কথাও বলে। সেই মতো একটি রিপোর্টও পাঠানো হয়। সেখানে শব্দ ব্যবস্থা, বসার জায়গা, রবীন্দ্রনাথের নানা ছবি নিয়ে মিউজিয়াম, বইপত্র ও আরও নানা বিষয় ঢেলে সাজানোর জন্য ৪৩ লক্ষ টাকার একটি পরিকল্পনা পাঠানো হয়। পুরপ্রধান তথা কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু বলেন, “পরিকল্পনাটি রূপায়িত হলে রবীন্দ্রসদনের চেহারা বদলে যাবে। তবে এখনও কোনও খবর আসেনি।” তিনি আরও জানান, রবীন্দ্রসদন সংস্কারের জন্য পুরসভা গত বছর এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল। বিধায়ক তহবিল থেকেও ২ লক্ষ টাকা দেওয়া হচ্ছে। এই টাকায় মঞ্চ পাকা করা-সহ বেশ কিছু কাজ করা হবে। কালনার মহকুমাশাসক শশাঙ্ক শেঠি বলেন, “পুরসভার তরফে রবীন্দ্রসদন নিয়ে যে পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে সেটির খোঁজ নিয়ে দেখব।” |