ব্যবসায়ীদের দোকানঘর বিলি
পুনর্বাসনের তালিকায় গরমিলের অভিযোগ
রাস্তার পাশ থেকে উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন দিতে তৈরি হয়েছিল ৬০টি স্টল। অথচ আবেদনকারী ছিলেন ৬৫ জন। প্রাপকের তালিকা ঠিক করার জন্য লটারির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এডিডিএ। তার পরে সাত বছর কেটে গেলেও লটারি আর হয়ে ওঠেনি। শেষে লটারির পরে শুক্রবার ফল বেরোতে দেখা গেল, দোকানপ্রাপকের তালিকায় রয়েছেন এমন সাত জন, যারা সেই সময়ে আবেদনই করেননি। ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা। পুরো বিষয়টি নিয়ে চাপান উতোর শুরু হয়েছে দুর্গাপুর পুরসভা ও আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ তথা এডিডিএ-র মধ্যে।
ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাস, সৌমেন্দ্রনাথ ঘোষ, অসীমকুমার পাত্রের অভিযোগ, তাঁরা ২০০৫ সালে এডিডিএ-র কাছে টাকা জমা দিয়ে ঘরের জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু লটারিতে তাঁদের নাম নেই। তাঁরা বলেন, “অথচ এমন সাত জন রয়েছেন যাঁদের কোনও দিন ওখানে দোকান ছিল না।” তাঁরা বিষয়টি নিয়ে দরবার করেছেন এডিডিএ-র বর্তমান চেয়ারম্যান তথা দুর্গাপুর পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। নিখিলবাবুর দাবি, পুরসভার তরফে তালিকা তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। সেই তালিকার ভিত্তিতেই লটারি করা হয়েছে। পুরসভা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
দুর্গাপুরে এমএএমসি বি-ওয়ান মোড়ে এই ঘরগুলিই তৈরি করেছে এডিডিএ।—নিজস্ব চিত্র।
মেয়র তথা দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের তৃণমূলের বিধায়ক অপূর্ব মুখোপাধ্যায় জানান, এ বিষয়ে পুরসভার কিছু করণীয় নেই। দোকান ঘর বানিয়েছে এডিডিএ। তারাই প্রাপকতালিকা ঠিক করেছে।
এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরের বি-ওয়ান মোড়ে বহু বছর ধরে রাস্তার ধারে সরকারি জমি দখল করে দোকান চালাচ্ছিলেন প্রায় ৬০ জন দোকানদার। তাঁদের কারওর ঘড়ির, কারওর মুদির, কারও বা মাংসের দোকান রয়েছে। কেউ বা সেলুন চালান। ২০০৫ সালের গোড়ায় মোড় সংলগ্ন রাস্তাটি সংস্কার ও চওড়া করার সিদ্ধান্ত নেয় এডিডিএ। কিন্তু বেঁকে বসেন ওই দোকানদারেরা। তখন এডিডিএ-র পক্ষ থেকে তাঁদের প্রস্তাব দেওয়া হয়, অন্যত্র মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি করে তাঁদের নতুন দোকানঘর দেওয়া হবে। কিন্তু কোনওভাবেই রাস্তার ধারে সরকারি জমি জবরদখল করে থাকা যাবে না। সেইমতো উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের প্রত্যেকে ২ হাজার টাকা করে জমা দিয়ে আবেদন করেন এডিডিএতে। দেখা যায়, অতিরিক্ত ৫ জন আবেদন করেছেন। তখনই এডিডিএ জানায়, ৬৫টি ঘর তৈরির অর্থ তাদের নেই। সেক্ষেত্রে লটারি করে ঘর দেওয়া হবে।
২০০৬ সালে স্থানীয় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পাশে প্রায় সাড়ে চার একর জমিতে ২০০৬ সালে ৬০টি স্টলের একটি মার্কেট কমপ্লেক্স গড়ার কাজ শুরু করে এডিডিএ। বরাদ্দ করা হয় প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা। নির্মাণ কাজ শেষ হতে বছর তিনেক গড়িয়ে যায়। ২০১১ সালের ৩ মার্চ দোকানগুলি ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন বাম পরিচালিত এডিডিএ বোর্ড। কিন্তু ১ মার্চ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের নিয়ম মেনে দোকানঘর বিলি বণ্টন প্রক্রিয়া আটকে যায়। নির্বাচনের পরে রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হয়। এডিডিএ-র দখলও বামেদের হাত থেকে চলে যায় তৃণমূলের হাতে। কিন্তু সেভাবে নতুন বোর্ড দোকানঘরগুলি বিলির ব্যাপারে উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা। এডিডিএ-র তৎকালীন চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ব্যবসায়ীদের যে তালিকা আগের বোর্ড তৈরি করেছিল তা নিয়ে বিতর্ক আছে। নতুন করে তালিকা তৈরি করে দ্রুত দোকানঘরগুলি বিলিবণ্টন করা হবে। তারপরেও গড়িয়ে যায় বছর খানেক। এত দিন ওই পুরনো জায়গার কাছেই অস্থায়াভাবে দোকান চালাচ্ছিলেন ব্যবসায়ীরা। শেষ পর্যন্ত গত শুক্রবার এডিডিএ লটারির ফল প্রকাশ করে। এরপরেই শুরু হয় নতুন বিতর্ক। বঞ্চিত দোকানদারদের আরও অভিযোগ, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ তাদের অনুগত কর্মী-সমর্থকদের দোকান পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। মেয়র তথা তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ববাবু বলেন, “পুরো বিষয়টি এডিডিএ দেখছে। সেখানে এই ধরনের অভিযোগ তোলা অর্থহীন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.