স্বামীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন স্ত্রী এবং শাশুড়ি। সোমবার রাতে বালুরঘাটের থানা চকভবানী এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। একই অভিযোগে শ্বশুর এবং শ্যালকের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম মধুমিতা সরকার (বিশ্বাস) এবং স্মৃতি বিশ্বাস। গত সোমবার সকালে শহরের শেয়ারের ব্যবসায়ী সঞ্জয় সরকারের (৪২) ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বালুরঘাট শহরের সাড়ে তিন নম্বর মোড় এলাকার বসু মার্কেটে ওই ব্যবসায়ীর অফিস ঘরের সামনে সিড়ির পাশে দেহটি ঝুলে ছিল। মৃতের বাড়ি নারায়ণপুর এলাকায়। পুলিশ মৃতের পকেট থেকে খামে ভরা নয় পাতার একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করে। সরকারি আইনজীবী দেবাশিস মজুমদার জানান সুইসাইড নোটে মৃত্যুর জন্য স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও শ্যালককে দায়ী করেছেন সঞ্জয়বাবু। লেই কারণেই অভিযুক্ত সকলের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা দায়ের হয়েছে।
পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “মৃত সঞ্জয়বাবুর সুইসাইড নোটের পাশাপাশি খামে কিছু ছবি ও একটি মোবাইলের চিপ মিলেছে। তার ভিত্তিতে ওই ব্যবসায়ীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনায় অভিযুক্ত ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
ওই দিন সকালেই বাড়ি থেকে মৃতের লেখা একটি চিঠি পেয়েছেন তাঁর ভাই সুজয়বাবু। সুজয়বাবু জানান, চিঠি শেষে দাদা লেখে, ‘আমি চললাম, মেয়েকে তোরা দেখিস’। দাদার কাছে বৌদি এবং ওঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা মোটা টাকা দাবি করে চাপ দিত। ৫ মাস আগে বৌদি ৪ বছরের ভাইঝিকে নিয়ে বাপের বাড়ি বর্ধমানে চলে যান। তখন থেকে দাদা অবসাদে ভুগছিলেন।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রের খবর, মৃত সঞ্জয়বাবু সাড়ে তিন নম্বর মোড়ে ওই মার্কেটে ঘরভাড়া নিয়ে শেয়ার কেনাবেচার ব্যবসা করছিলেন। বছর পাঁচেক আগে তিনি বর্ধমানের বাসিন্দা ঠিকাদার সুনীল বিশ্বাসের মেয়ে রূপাকে বিয়ে করেন। তাঁদের ৪ বছরের মেয়ে রয়েছে। সম্প্রতি তাঁদের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে বলে অভিযোগ। স্ত্রীয়ের জন্য প্রতি মাসে মোটা টাকা ও সম্পত্তির ভাগ চেয়ে প্রায়ই শ্বশুরবাড়ি থেকে সঞ্জয়বাবুর উপরে চাপ দেওয়া হয় বলে তাঁর পরিবারের অভিযোগ।
সুইসাইড নোটে সঞ্জয়বাবু লেখেন, স্ত্রী বাপেরবাড়ি এলাকার এক শিক্ষকের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। তা নিয়ে আপত্তি করলে শ্বশুরবাড়ির লোক হুমকি দিত। সম্প্রতি শাশুড়ি ২ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা চ নিয়ে যান। প্রতিমাসে স্ত্রীর খরচ বাবদ ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। শুক্রবার বর্ধমানে মেয়েকে দেখতে গেলে শ্বশুর বাড়ির লোক তাঁকে মেরে তাড়িয়ে দেন।
গত সোমবার রাতে বর্ধমান থেকে স্ত্রী ও শাশুড়ি বালুরঘাটের চকভবানী শ্মশানে মৃতের শেষকৃত্যে যোগ দিতে এলে বাসিন্দারা তাঁদের ঘিরে ধরে তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। |