ছাত্রীদের নজরকাড়া সাফল্যে স্বীকৃতি হিসাবে কোচবিহারের দুটি ব্লকের ২৬টি স্কুলকে পুরস্কৃত করল জেলা সর্বশিক্ষা মিশন। সোমবার সিতাই ব্লকের ৮টি স্কুল ও শীতলখুচি ব্লকের ১৮টি স্কুলের হাতে কোচবিহারে এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার হিসাবে ট্রফি, খেলার সরঞ্জাম ছাড়া বহু বই দেওয়া হয়েছে।
পুরস্কারপ্রাপ্ত স্কুলগুলির ছাত্রী সংখ্যা মোট পড়ুয়ার ৫০-৬০ শতাংশ। ওই ছাত্রীদের স্কুলে গড়ে উপস্থিতির হার ৬০ শতাংশ। প্রাথমিক স্কুলগুলির ক্ষেত্রে পরীক্ষায় অন্তত ৪০ শতাংশ ছাত্রী ‘ক’ বিভাগ পেয়েছে। তারা গড়ে ৬০ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। দুটি ব্লকের ৬১টি হাইস্কুল ও ১৯২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী সংখ্যা থেকে উপস্থিতি ও পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর সংক্রান্ত পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখে ২৬টি স্কুলের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।
সর্বশিক্ষার জেলা আধিকারিক আমিনুল আহসান বলেন, “মেয়েদের শিক্ষার হারের নিরিখে পিছিয়ে থাকা দুইটি ব্লকে ছাত্রীদের স্কুলমুখী করার প্রবণতা বাড়াতে পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তাতে ভাল সাড়া মিলেছে। এতে উৎসাহ বাড়াতে সেরা ২৬টি স্কুলকে পুরস্কার দেওয়া হয়।”
২০০১ সালের জনগণনা অনুযায়ী দেশে নারী শিক্ষার হার ছিল প্রায় ৪৭ শতাংশ। দেশের ওই গড় হারের চেয়ে পিছিয়ে থাকা ব্লকের তালিকায় কোচবিহার জেলার দুটি ব্লকের নাম উঠে আসে। সিতাই ৪২ ও শীতলখুচি ৪৬ শতাংশ।
পুরস্কারপ্রাপ্ত স্কুলের তালিকায় থাকা সিতাই হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক অনিমেষ ভট্ট বলেন, “অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করে মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর সচেতনতা বাড়ানো, ১০০ ছাত্রীর নিখরচায় থাকার হস্টেল চালু, সেখানে বিনা বেতনে টিউশনের মত ধারাবাহিক পদক্ষেপে সাফল্য এসেছে।” শীতলখুচি গোপীনাথ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় বণিক বলেন, “স্কুলে ২৮৬০ পড়ুয়ার মধ্যে ১৫০০-র বেশি ছাত্রী। তাদের জন্য ক্যারাটে, হাতের কাজের প্রশিক্ষণের মত নানা ব্যবস্থা চালু করে উৎসাহ বাড়ানো গিয়েছে।”
সিতাই হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী অনামিকা বর্মন বলে, “বাবা হতদরিদ্র কৃষক। তিন বোনের পড়ার খরচও অনেক। তাই কতটা পড়তে পারব তা ভাবতাম। কিন্তু হস্টেলে নিখরচায় থাকা খাওয়া টিউশন পেয়ে নিশ্চিন্ত হয়েছি। রেজাল্টও ভাল হয়েছে।” অনামিকার মা অঞ্জলি বর্মনের বক্তব্য, “শিক্ষকরা মেয়েকে লেখাপড়া করানোর গুরুত্বটা বোঝানোয় মেয়েদের পড়াশুনো নিয়ে আমাদের ইচ্ছাটাও বেড়েছে।” আরেক অভিভাবক আজিজুল মিঁয়া বলেন, “বাড়ি থেকে স্কুল ৫ কিমি দূরে। মেয়ের যাতায়াত নিয়ে চিন্তা ছিল। হস্টেল চালু হওয়ায় উদ্বেগ কমেছে। মেয়েটাকেও মাঝপথে পড়া ছাড়তে হচ্ছে না।” শীতলখুচির দশম শ্রেণীর পড়ুয়া শ্রীপর্ণা রায়ের কথায়, “স্কুলে শিক্ষকেরা সবসময় উৎসাহ দেন। ছুটিতে বিশেষ ক্লাস নেওয়া হয়। পড়াশোনার আগ্রহ বেড়ে গিয়েছে।” |