কারও ছ-মাস কারও বা বছর ঘুরে গেছে। ‘বাড়ির কথা যে কী ভিষণ মনে পড়ে!’ তাঁদের হা-হুতাশ হাসপাতালের আঁশটে হন্ধ মাখা দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে মাথা কুটছে।
চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছেন ওঁরা সুস্থ। আপাতত সামান্য পথ্যেই ভাল থাকবেন। কিন্তু তাঁদের পরিবারের লোকজনের কাছে এখনও ‘আস্থাভাজন’ হয়ে উঠতে পারেননি ওঁরা। মানসিক হাসপাতালের পুরনো ঠিকানাতেই তাই ওঁদের ‘চেনা’ জীবনযাপন।
স্বজনহীন সেই সব মানুষজনের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ার প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। গত মাসে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে পরিদর্শনে এসে এমনই বেশ কয়েকজনের দেখা পেয়ে চমকে উঠেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডিরেক্টর জেনারেল অফ হেল্থ সার্ভিসেস (মেন্টাল) জগদীশ প্রসাদ। গত ১১ এপ্রিল বহরমপুর মানসিক হাসপাতাল দেখে সুস্থ হয়ে যাওয়া ৫২ জন আবাসিককে অন্য দের সঙ্গেই থাকতে দেখে হতবাক হয়ে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ওই কর্তা। রাতেই স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে জগদীশ প্রসাদ প্রস্তাব দেন, বহরমপুর মানসিক হাসপাতালেই গড়া হোক পুনর্বাসন কেন্দ্র। বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগে সেটাই হোক আবাসিকদের নতুন ঠিকানা। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে প্রকল্পের সম্ভাব্য খরচের হিসেব পাঠাতেও নিদের্শও দিয়েছেন তিনি।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস বলেন, “প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে এ রাজ্যের বহরমপুর ও কলকাতার পাভলভ হাসপাতালে এমন দুটি পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়া হবে। অন্যটি হবে চেন্নাইয়ে। ওই নতুন ভবন গড়তে কী খরচ হবে। আবাসিকদের ভরণপোষণের ব্যায় বরাদ্দই বা কী হবে সে ব্যাপারেও বিস্তারিত জানতে চেয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।” |
বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের সুপার পবিত্রচন্দ্র সরকার বলেন, “হাসপাতালে এমন অনেকেই রয়েছেন যাঁরা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সামান্য ওষুধ নিয়মিত খেলেই তাঁদের বাল থাকার কথা। কিন্তু তাঁদের পরিবারের লোকজন সে কথা বুঝলে তো! ওঁরা বাড়ি যেতে চান কিন্তু পরিজনেরা না চাইলে তো আমরা ছেনে দিতে পারিনা। তাই এখানে থেকেই পচছেন ওঁরা!”
বহরমপুর মানসিক হাসপাতালেই এমন আবাসিকের সংখ্য ৫২। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওঁদের বাড়ির ঠিকানায় পরিবারের লোকজনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ক্যুরিয়ার মারফতও চিঠি গিয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি। অনেকের বাড়িতে ফোনও করেও সাড়া মেলেনি। অনেকে স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন বাড়িতে ওঁদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাঁদের অনীহার কথা।”
বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে এখন পুরুষ ও মহিলা বিভাগে ৩২১ জন আবাসিক রয়েছেন। তার মধ্যে পুরুষ ২৮৩ জন পুরুষ। মহিলার সংখ্যা ১২৮ জন। তার মধ্যে সুস্থ হয়ে যাওয়া ২৮ জন পুরুষ ও মহিলার সংখ্যা ২৪ জন।
আপাতত ওই আবাসিকদের পুনর্বাসন দিতে হাসপাতাল চত্বরেই একটি ভবন নির্মাড় করার কথা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সুপারের প্রস্তাব, “ভবন নির্মাণ করতে সময় লাগবে। আপাতত কোথাও বাড়ি ভাড়া পেলে সেখানে ওই সুস্থ রোগীদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলে ভাল হয়। পরে ভবন নির্মাণ হলে না হয় তাঁদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে।” |