অন্য রোগী নিয়ে ছুটে বেড়ান অসুস্থ সুস্মিতা
কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লেই ডাক পড়ে মেয়েটির। তিনি এসে ভরসা জোগান। হাসপাতালে ভর্তি করানো থেকে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলা বা রক্তের কার্ড জোগাড় করা সবই করেন হাসি মুখে।
মাত্র আট বছর বয়সে ‘ই-বিটা থ্যলাসেমিয়া’ ধরা পড়েছিল বেলুড়ের সুস্মিতা নাথের। তিন সপ্তাহ অন্তর রক্ত নিতে হয়। নিয়মিত নানা পরীক্ষা করাতে হয়। কিন্তু তাতে কি? টিউশনির টাকায় অন্যদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে যান সিনেমায়, পিকনিকে। নিজের ওষুধের ভাঁড়ারে টান পড়লেও পরোয়া করেন না।
মঙ্গলবারই নবম শ্রেণির ছাত্র সুদামকুমার নায়ককে ডাক্তার দেখাতে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন সুস্মিতা। আদতে ওড়িশার বাসিন্দা সুদাম থাকে বেলুড় মঠের কাছেই। তাকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন সুস্মিতাই। বাড়িতে পড়ানও তিনি। শুধু সুদাম নয়, আরও অনেক থ্যালাসেমিয়া রোগীকেই নিজের পায়ে দাঁড় করানোর চেষ্টা করে চলেছেন সুস্মিতা। কাউকে সব্জির দোকান করতে টাকা দিয়েছেন, তো কাউকে অটোরিকশার লাইসেন্স বের করতে। পরিণামে কখনও শুনতে হয়েছে পরিহাস। অসুস্থ শিশুকে স্কুলে ভর্তি করাতে গিয়ে অধ্যক্ষের মুখে শুনেছেন, ‘এ ছেলেকে ভর্তি করালে অন্যদেরও থ্যালাসেমিয়া হবে।’
সুস্মিতা নাথ
সুস্মিতা কিন্তু দমতে জানেন না। নিজে তিনি বেলুড়ের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে আইসিএসসি পাশ করে মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজ থেকে বিএসসি করেছেন। নিয়েছেন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ। নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ করেছেন। এখন ইন্দিরা গাঁধী জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন ‘মাস্টার অব সোশ্যাল ওয়ার্ক’ পাঠ্যক্রম। তাঁর আর্জি, থ্যালাসেময়িা আক্রান্তদের সরকারি তত্ত্বাবধানে পড়ানোর ব্যবস্থাটুকু অন্তত হোক।
মারণরোগের বিরুদ্ধে এই নিরন্তর লড়াইয়ের কারণেই সুস্মিতাকে চিনে গিয়েছেন বহু চিকিৎসক-সমাজকর্মী। কলকাতা মেডিক্যালের চিকিৎসক প্রান্তর চক্রবর্তী তো রীতিমতো উচ্ছ্বসিত। তাঁর কথায়, “ও সত্যিকারের হিরোইন। নিজে অসুস্থ হয়েও যে ভাবে অন্যদের পাশে দাঁড়ায়, ভাবা যায় না।”
এই যুদ্ধের খরচ যোগাড় করতেই তৃতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পর্যন্ত জনা ত্রিশ ছেলেমেয়েকে পড়ান সুস্মিতা। বাড়ির কাছে একটি ‘ফ্রি কোচিং সেন্টার’ও চলে। দুঃস্থ ছেলেমেয়েরা ছাড়াও থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তেরা সেখানে পড়তে আসে। ছোটবেলা থেকে পাড়ার লোক ‘পুটপুটি’ নামে যে মা-মরা রুগ্ণ মেয়েটিকে চিনত, এখন ‘মিসের বাড়ি’ বললে তাঁরাই পথ দেখিয়ে দেন। বড় হয়েছেন বাবা, দিদির কাছে। বাবা, রেলকর্মী পুলিনকুমার নাথ এক সময়ে ইস্টার্ন রেল ফুটবল দলের কোচিংও করিয়েছেন। এখন তিনি শয্যাশায়ী, তাঁর পরিচর্যাও সুস্মিতার হাতেই। সারা দিনের ক্লান্তি চেপে সুস্মিতা বলেন, “একটা সরকারি চাকরি পেলে খুব ভাল হয়, জানেন? নিজের চিকিৎসার খরচটাও চালাতে পারব, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত দুঃস্থদের পাশেও দাঁড়াতে পারব।” তবে সুস্মিতার আসল আর্জিটা অন্য “একটু সচেতন হোন সকলে। তা হলে কাউকে আর আমাদের মতো রোগ বয়ে বেড়াতে হবে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.