সিপিএম কর্মী সন্তোষ সাহানিকে হাতে বেড়ি পড়িয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রাখার ঘটনায় পাঁচজন কারারক্ষীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার মত জানাল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি অনুজ শর্মার তদন্ত রিপোর্ট অনুসারে সোমবার ওই মতামত জানান কমিশনের তিন সদস্যদের বিচারকমণ্ডলী। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, কারারক্ষী রাকেশ প্রধান, সমর দে, অনুপ রায়, অশোক লাহা এবং দেবাশিস রায় মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন বলে আইজি রিপোর্ট দিয়েছেন। ওই রিপোর্ট এবং বিচারপতিদের মতামত রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং কারা দফতরের আইজিকে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন কমিশনের রেজিস্টার রবীন্দ্রনাথ সামন্ত। তিনি বলেন, “শীঘ্রই রিপোর্ট এবং রায়ের কপি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।”
ইতিমধ্যেই অবশ্য দেবাশিস রায়কে কোচবিহার সংশোধনাগারে বদলি করে দিয়েছেন শিলিগুড়ি বিশেষ সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানিয়েছেন, ১৬ এপ্রিল যেদিন সন্তোষ সাহানিকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, ওইদিন দেবাশিসবাবু নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। শিলিগুড়ি বিশেষ সংশোধনাগারের সুপার থুপদেন ভুটিয়া বলেন, “ওইদিন যিনি নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন তাঁকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার কমিশনের বিষয়টি আমার জানা নেই।” সংশোধানাগার সূত্রের খবর, দেবাশিসবাবু ওইদিন থাকলেও তার আগে এবং পরে দফায় দফায় ওই নিরাপত্তারক্ষীরা দায়িত্বে ছিলেন। আইজি বলেন, “ওই ঘটনায় আমাকে তদন্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। যা ঘটনা হয়েছে, আমি যা তদন্তে পেয়েছি তা রিপোর্ট তৈরি করে মানবাধিকার কমিশনকে জমা দিয়েছি।”
পুলিশ সূত্রের খবর, গত ১০ এপ্রিল শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে অনিল বিশ্বাস ভবনের সামনে গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়ে সিপিএম ও তৃণমূল। সেই সময় ওই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ৫১ জন সিপিএম কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সিপিএমের তরুণ কর্মী সন্তোষ সাহানি। অসুস্থ হয়ে পড়ায় ১১ এপ্রিল তাঁকে শিলিগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে বিশেষ সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়া হলে ফের সন্তোষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অভিযোগ, মেডিক্যাল কলেজে সন্তোষকে হাতে বেড়ি পড়িয়ে রাখেন সংশোধনাগারের রক্ষীরা। ঘটনার অভিযোগ পেয়ে উত্তরবঙ্গের আইজি অনুজ শর্মাকে তদন্তের নির্দেশ দেয় মানবাধিকার কমিশন। ওই তদন্ত শুরু হওয়ার মধ্যে ফের আরও তিন জন বন্দিকে বেড়ি পড়িয়ে হাসপাতালে ভর্তি রাখার অভিযোগ ওঠে।
সম্প্রতি আইজি ওই রিপোর্ট মানবাধিকার কমিশনে জমা দেন। কমিশন সূত্রের খবর, আইজি ওই পাঁচ কারারক্ষীর নাম উল্লেখ করে জানিয়েছেন তাঁরা মানবধিকার লঙ্ঘন করেছেন। পাশাপাশি, কেন তাঁদের হাতে বেড়ি পড়ানো হল সে ব্যপারেও বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে রিপোর্ট দেন। এ ছাড়া বাকি তিন বন্দির হাতে বেড়ি পড়ানো নিয়ে এপিডিআর মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ জানায়। ওই অভিযোগপত্র বিচারতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়, নারায়ণ চন্দ্র শীল, সৌরিন রায়ের এজলাসে জমা দেয়। চারটি ঘটনাকে একসঙ্গে বিচার করে বিচারপতিরা ওই রায় দিয়েছেন বলে কমিশন সূত্রের খবর। |