দুর্নীতির অভিযোগ এসজেডিএতে
আমলাদের সস্তায় জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল
বিধি ভেঙে কিছু সরকারি কর্তাকে বাজার দরের অর্ধেক দামে জমি দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলই করল শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এসজেডিএ)। এসজেডিএ-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যের আমলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা নিয়ে এসজেডিএ-এর অন্দরে তো বটেই, তৃণমূলের মধ্যেও সমালোচনা শুরু হয়েছিল। ঘরে-বাইরে চাপ সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত সম্প্রতি ওই সিদ্ধান্ত বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা এসজেডিএ-এর নতুন চেয়ারম্যান গৌতম দেব।
সংস্থা সূত্রের খবর, রুদ্রনাথবাবুর আমলেই যে সরকারি জমির বাজার দর ৪ লক্ষ টাকা কাঠা তা-ই একঝাঁক প্রাক্তন ও বর্তমান আইএএস-আইপিএসদের অর্ধেকের কম দামে দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এসজেডিএ। শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে মাটিগাড়ার হিমাঞ্চল বিহারের মতো জমজমাট এলাকার সরকারি জমি এই ভাবে বণ্টনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নানা মহলে ক্ষোভ দানা বাঁধে।
মাসখানেক আগে দায়িত্বগ্রহণের পরে বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবরের পরে গৌতমবাবু আগের নির্দেশ বাতিল করেন। সংশ্লিষ্ট আইএএস-আইপিএস অফিসারদেরও বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়। গৌতমবাবু বলেন, “সরকারি জমি বলেই যেমন খুশি দরে দেওয়া যায় না। বিধি মেনে সরকারি দফতরের ঠিক করে দেওয়া ন্যূনতম দর নির্দিষ্ট করে প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে তা বিক্রি করতে হবে। সেই নিয়ম এড়িয়ে কাউকে জমি দেওয়া সম্ভব নয়।”
এসজেডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের অগস্টের শেষে সংস্থার বোর্ড মিটিঙে ৫ জন আইএএস ও ২ জন আইপিএস অফিসারের আবেদনে সাড়া দিয়ে জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এসজেডিএ-এর ওই তালিকায় রয়েছেন প্রাক্তন আইএএস ত্রিলোক দেওয়ান (৫ কাঠা), মালদহের তৎকালীন জেলাশাসক শ্রীমতী অর্চনা (৩.৪ কাঠা), কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী (৩.৪ কাঠা)। এ ছাড়াও আইএএস অনুজানিয়া কুমার সিংহ (৫ কাঠা) ও গোদালা কিরণ কুমারকে (৫ কাঠা) জমি দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়। ওই তালিকায় আইপিএস অফিসার সঞ্জয় জৈন (৬ কাঠা) ও নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমন মিশ্রের স্ত্রী নমিতাদেবীর নামে যথাক্রমে ৬ এবং ৫ কাঠা বরাদ্দ করা হয়। তাঁদের কাঠা প্রতি ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ৮৩৬ টাকা দেওয়া হবে বলে এসজেডিএ সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে উত্তরায়ণ উপনগরী, সিটি সেন্টারের লাগোয়া হিমাঞ্চল বিহারে জমির দর এখন লাফিয়ে বাড়ছে। বেসরকারি ভাবে ওই জমি কাঠা প্রতি ৬ লক্ষ টাকা দরেও বিক্রি হচ্ছে। সেখানে আমলাদের কার্যত জলের দরে জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে চাউর হতেই নানা স্তরে আলোড়ন পড়ে। জমি প্রাপকদের মধ্যে এসজেডিএ-এর তৎকালীন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকের জি কিরণ কুমারের নামও থাকায় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ দানা বাঁধে। যদিও এসজেডিএ-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান রুদ্রনাথবাবুর দাবি, এসজেডিএ-এর যে কোনও জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য কলকাতায় নগরোন্নয়ন দফতরে পাঠানো হয়ে থাকে। তাঁর কথায়, “কেউ আবেদন করলে তা বিবেচনা করা হলেও শেষ পর্যন্ত নগরোন্নয়ন দফতরের সিলমোহর না-হওয়া অবধি তা কার্যকর হয় না।”
জি কিরণকুমারেরও যুক্তি, “এসজেডিএ-তে থাকাকালীন দেখেছি অনেক সরকারি অফিসারই জমি চেয়ে আবেদন করে থাকেন। তেমন আমিও করেছিলাম। বোর্ড মিটিঙে সব আবেদন পেশ করা হয়। বোর্ডের সিদ্ধান্ত নগরোন্নয়ন দফতরে পাঠানো হয়েছে। জমির হাতবদল তো হয়নি।”
তা হলেও সরকারি নথি অনুযায়ী এলাকায় কাঠা প্রতি যা দর, তার অর্ধেকের কম দামে জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত হল কেন? জি কিরণ কুমারের জবাব, “আমি এসজেডিএ-এর দায়িত্বে এখন নেই। কাজেই ওই দফতরের ব্যাপারে বেশি কিছু বলা আমার সাজে না।” এদিকে, এসজেডিএ-এর বর্তমান মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শরদ দ্বিবেদীর দাবি, ‘‘বিষয়টি একেবারেই সংস্থার অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তা নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলা সম্ভব নয়।”
যদিও সরকারি জমি কখনও সরকারি সংস্থার আভ্যন্তরীণ বিষয় হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন এসজেডিএ-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “সরকারি জমি মানে আমজনতার সম্পত্তি। কাজেই তা সস্তায় হাতবদলের চেষ্টা কোন উদ্দেশ্যে হয়েছিল তা তদন্ত করে প্রকাশ্যে এসজেডিএ কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। আমাদের সময়ে এমন কিছু হয়নি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.