শহরের অনেক জায়গাতেই রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করা হয়। কিন্তু এই অনুষ্ঠানটির ছবিটা একটু আলাদা। অনুষ্ঠানের পিছনে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের মধ্যে মহিলারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।
প্রতি বছর এই সময়ে বহরমপুর রবীন্দ্রসদনের ভিতরের মূল মঞ্চে ও প্রাঙ্গনের মুক্তমঞ্চে রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠান হয়। ‘বহরমপুর রবীন্দ্রমেলা’র পূর্বতন সম্পাদক বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, “পাঁচ দিন ধরে রবীন্দ্রসদনের ভিতরের মূল মঞ্চে অনুষ্ঠান হবে। তবে মুক্তমঞ্চ না পাওয়ায় এ বার সেই অনুষ্ঠান হবে রবীন্দ্রসদনের উল্টো দিকে সুইমিং অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ের মাঠে।” বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “সংস্থার ১২৫ জন সদস্যর মধ্যে ৭৫ জনই মহিলা। বাকি ৫০ জন পুরুষ।” এ ছাড়াও রয়েছেন ১৭৫ জন ‘বন্ধু সদস্য’।” সংস্থার বর্তমান সম্পাদিকা ভাস্বতী চক্রবর্তী বলেন, “ওই বন্ধু সদস্যদের কাছ থেকে বার্ষিক ২০০ টাকা সাহায্য নেওয়া হয়। দেওয়া হয় ‘রবীন্দ্রমনন ও চর্চার আঙিনায় আপনিও আমাদের সঙ্গী’ লেখা একটি বিশেষ আমন্ত্রণপত্র।’’ |
কথার পিঠেই উঠে আসে উৎসবের বিগত চল্লিশ বছরের ইতিহাস।
বহরমপুর শহরে তখন বহুতল আবাসন অথবা ঝাঁ চকচকে রাজপথের কথা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। সেই সময় শহরে রবীন্দ্রচর্চার বীজ পুঁতেছিলেন ‘দাপুটে মহিলা’ বহরমপুর গার্লস কলেজের প্রবাদপ্রতিম অধ্যক্ষা প্রীতি গুপ্ত। বহরমপুর গার্লস কলেজে নাগরিক সভা ডেকে গড়া হয়েছিল ‘বহরমপুর রবীন্দ্রমেলা’। ছিলেন কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যাপক নৃপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ও কাশীশ্বরী গালর্স হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষিকা অপরাজিতা দাশগুপ্ত।
১৯৭৩ সালের ৮ মে, অর্থাৎ ২৫শে বৈশাখ সকালে শক্তিমন্দির ক্লাব প্রাঙ্গণে উদ্বোধন হয় সপ্তাহব্যাপী রবীন্দ্রস্মরণ অনুষ্ঠানের। রবীন্দ্রমেলার সেই বীজ আজ মহীরুহে পরিণত হয়েছে। আগামী রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে ওই সংস্থা পরিচালিত ৪১ তম বছরের রবীন্দ্রজন্মোৎসব। তার জন্য গত এপ্রিল মাসের ৪টি রবিবার জুড়ে হয়ে গেল রবীন্দ্রনৃত্য, রবীন্দ্রসংগীত, রবীন্দ্রনাথ অথবা তাঁর শিল্পকর্ম নিয়ে আঁকা, গদ্যপাঠের প্রতিযোগিতা। ভাস্বতী চক্রবর্তী জানান, এর মধ্যে ১৬০ জনকে পুরস্কৃত করা হবে পাঁচ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের মঞ্চে।
মেলায় ইতিপূর্বে যোগদান করছেন অধ্যাপক ভূদেব চৌধুরি, অধাপক নির্মলকুমার দাস, শান্তিদেব ঘোষ, সুচিত্রা মিত্র, অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়, রেজওয়ানা চৌধুরি প্রমুখব্যক্তিত্বরা।
কোন টানে উদ্যোক্তারা এত কিছু করেন? ভাস্বতীদবী বলেন, “বহরমপুরের কাশিমবাজারের রাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর রাজবাড়িতে প্রথম বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতি ছিলেন কবিগুরু। তাঁকে স্মরণ করার অনুষ্ঠানটাই তো স্বাভাবিক।” |