বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ চালুর উদ্যোগ ঘাটাল উপসংশোধনাগারে
বন্দিরা মজে আঁকায়, ধর্মপাঠে
যে হাতে খুন করেছিলেন বলে অভিযোগ, সেই হাতেই আঁকছেন বিবেকানন্দের ছবি। বধূ নির্র্যাতনে অভিযুক্ত বন্দি খাতায় ফুটিয়ে তুলছেন প্রকৃতি মুগ্ধতার ছবি। কেউ মন দিয়েছেন ধর্মীয় পাঠে, কেউবা খেলাধুলাতে। কেউ চলেছেন বই বগলে নিয়ে। এমন ভাবেই সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ‘ধর্ম’ থেকে ‘জিরাফ’-এ মেতেছে ঘাটালের উপ-সংশোধনাগারের বন্দিরা। তাঁদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া মেলায় কর্তৃপক্ষ এ বার বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ চালুতে উদ্যোগী হচ্ছে বলে সংশোধনাগার সূত্রের খবর।
১৯৯২ সালে ‘কারেকশনাল সার্ভিসেস’ আইন তৈরি হলেও লাগু হয় প্রায় এক দশক পরে। তখন থেকেই কারাগার শব্দটি পাল্টে হয় সংশোধনাগার। বাড়ে বন্দিদের জন্য সুযোগ-সুবিধা। সেলগুলিতে টিভি, পর্যাপ্ত পাখা, প্যারোলে ছুটি, খাবারের মান বাড়ানো-সহ একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
পাশাপাশি বন্দিরা যাতে সংশোধনাগারে থেকেও পড়াশোনা করতে পারে, ছবি আঁকা, নাটক, নাচ-গান-সহ বিনোদনমূলক বিষয়গুলিতে যুক্ত থাকতে পারে তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। ইতিমধ্যেই এই রাজ্যের বিভিন্ন সংশোধনাগারে এই সমস্ত কর্মসূচি চালু হয়েছে। ঘাটাল উপ-সংশোধনাগারেও মাস সাতেক ধরে চলছে এমনই একাধিক উদ্যোগ। এই সংশোধনাগারে সাধারণত বিচারাধীন বন্দিরাই থাকেন। এঁদের মধ্যে অনেকেই সাক্ষর নন। তাঁদের নিয়ে শুরু হয়েছে পাঠশালা। প্রতি দিন সকাল-সন্ধ্যা সাক্ষর বন্দিরা নিরক্ষর বন্দিদের পাঠশালায় নিয়ে গিয়ে ক্লাস করান। চলছে অঙ্কন প্রশিক্ষণও। কলকাতা আর্ট কলেজের ছাত্র তথা ঘাটালের বাসিন্দা মানস কুইল্যা সপ্তাহে একবার নিখরচায় বন্দিদের এই প্রশিক্ষণ দেন। সঙ্গে প্রতি দিন প্রার্থনা ছাড়াও বিভিন্ন মনীষীদের বাণী পাঠ করা হয়। মানসিক প্রশান্তির জন্য ধ্যান, ভক্তিমূলক গান শোনানো হয়। মাসে দু’বার নাটক, উত্‌সাহ বাড়াতে পুরস্কারের ব্যবস্থা থেকে একাধিক কাজ হয়। সাব-জেলার পুলক মণ্ডল বলেন, “দ্রুতই শুরু হবে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ক্লাসও। তা চালু হলে বেকার যুবক-যুবতীরা হাতে-কলমে কাজ শিখে (রেডিও, টিভি, ফ্রিজ সারানো, সেলাই-সহ নানাবিধ) বন্দি জীবন থেকে মুক্ত হয়ে স্বনির্ভর হতে পারেন। এর জন্য আমরা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে অনুরোধ করেছি। ওই সংস্থা তাতে রাজিও হয়েছে।”
উপসংশোধনাগারের ভোলবদলের কৃতিত্ব পুলকবাবুকে দিয়ে দফতরের ডিআইজি (পশ্চিমাঞ্চল) শোভন দীন বলেন, “ঘাটালের সাব-জেলার বন্দিদের প্রকৃত সংশোধনে উদ্যোগী হয়েছেন। যদি সব সাব-জেলাররা এই সমস্ত কর্মসূচি শুরু করেন তা হলে ভাল হবে। আমি ঘাটালের এই উদ্যোগের কথা অন্য সাব-জেলারদের বলেছি।”
ঘাটাল উপ-সংশোধনাগারের অধ্যক্ষ তথা ঘাটালের মহকুমাশাসক অংশুমান অধিকারীও এই উদ্যোগের জন্য পুলকবাবুর প্রশাংসা করেছেন। সাব-জেলার পুলক মণ্ডল বলেন, “আমি দফতরে যোগ দেওয়ার পরই এই নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করি। শিলিগুড়িতে ছিলাম যখন আমার লেখা নাটক বন্দিদের দিয়ে অভিনয় করিয়েছিলাম। তারপর বদলি হয়ে ঘাটালে এসেও তা করে চলেছি।” তিনি জানান, সরকার থেকে প্রয়োজনীয় অর্থসাহায্য পাওয়া যায় না বলে রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ ভাব প্রচার পরিষদ-সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্যে কাজ করা হচ্ছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.