আইপিএলে একটা ব্যাপার দেখে অনেকেই আশ্চর্য হচ্ছেন। কেউ কেউ আমাকে জিজ্ঞাসাও করছেন, গেইল-মিলারদের বিধ্বংসী ব্যাটিং যেমন ম্যাচ জেতাচ্ছে, তেমনই রাহুল দ্রাবিড়ের মতো ধ্রুপদী ঘরনারা ক্রিকেটারদেরও থামানো যাচ্ছে না। মানে, ব্যাটিংয়ের দু’টো ঘরানাই সমান সাফল্য পাচ্ছে এ বারের আইপিএলে। প্রশ্ন উঠছে, কী ভাবে সম্ভব হচ্ছে সেটা?
দেখুন, একটা কথা আমি বরাবর বিশ্বাস করে এসেছি। আপনার যদি টেকনিক ভাল হয়, ক্রিকেটের যে কোনও ফর্ম্যাটে সাফল্য আসতে বাধ্য। আসলে আইপিএল যখন প্রথম শুরু হয়েছিল, অনেক বড় বড় ব্যাটসম্যানেরই বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল ব্যাপারটা আসলে কী? এখানে ব্যাটিংটা ঠিক কোন স্টাইলে করা উচিত? কিন্তু আইপিএলের এটা এখন ছ’নম্বর বছর। ব্যাটসম্যানরাও বুঝে গিয়েছে ক্রিকেটের এই ফর্ম্যাটেও টেকনিকই শেষ কথা। একটু খেয়াল করলেই বুঝবেন, পেপসি আইপিএলে যারাই বড় বড় রান করছে, বা দুর্ধর্ষ সব ইনিংস খেলছে, কেউ কিন্তু অক্রিকেটীয় শটে রান করছে না। গেইল থেকে শুরু করে মিলার, হাসি থেকে শুরু করে দ্রাবিড় সবাইকে একই জিনিস করতে দেখছি। ডে’ভিলিয়ার্সের মতো কেউ কেউ ইম্প্রোভাইজেশন এনেছে ঠিকই, কিন্তু আনাড়ির মতো শট মারছে, বলতে পারবে না কেউ। মানে, আইপিএলেও টেকনিকই জিতছে।
|
ধ্রুপদী বনাম ঝড় |
|
|
|
... এখনও অবধি আমাদের জন্য সব কিছু দারুণ যাচ্ছে। ওয়াটসন একটু চোট নিয়েও খেলে দিল। বিনি দু’ওভার করে পড়ে গেলেও ভাল বোলিং হল টিমের। রাহানে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সুযোগ না পাওয়ার জবাব ভালই দিচ্ছে। আগের ম্যাচে হগের মতোই এই ম্যাচে তেম্বাকে খেলানোর কারণ আমি এই টিমে সবচেয়ে বুড়ো প্লেয়ার থাকতে চাই না। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজের উইকেটের উপর বাজি ধরা যায় না।
রাহুল দ্রাবিড় |
... ভাগ্য যখন সহায় তখন তার সওয়ারি হওয়াই ন্যায্য। গোড়ার দিকে কয়েকটা বল ব্যাটের কান ঘেঁষে বেরিয়েছিল। গোটা কয়েক বাউন্ডারি ব্যাটের কানায় লেগে এসেছে। বিয়াল্লিশ রানে ক্যাচ তুলেও বেঁচেছি। তাতেই বুঝেছিলাম, ভাগ্য সঙ্গে আছে। আর তার পরেই চালাতে শুরু করে দিয়েছিলাম। গেমপ্ল্যানটা ছিল প্রথম ১০-১৫টা বল বুঝে নিয়ে তার পর পেটাও।
ডেভিড মিলার |
|
গত রাতে মিলারের ইনিংসটা দেখছিলাম। আর মঙ্গলবার দুপুরে দেখলাম দ্রাবিড়েরটা। দু’টো দু’রকমের। কিন্তু একই রকম প্রভাবশালী, কার্যকরী। মিলার একাই ম্যাচটা বার করে নিয়ে গেল আরসিবি-র হাত থেকে। দ্রাবিড় আবার ম্যাচটা মোটামুটি শেষ করে তার পর আউট হল। দ্রাবিড়কে দেখে একটা জিনিস মনে হচ্ছে। ও এ বার খোলা মনে খেলছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার আর কোনও ব্যাপার নেই। জানে, আইপিএলটাই ওর শেষ কম্পিটিটিভ টুর্নামেন্ট। আর সেই মঞ্চকেই যেন স্মার্ট ক্রিকেট খেলার জন্য বেছে নিচ্ছে দ্রাবিড়। আগে যে বল ডিফেন্স করত, এখন সেটাকেই অন দ্য রাইজে ড্রাইভ মারছে। আগে উইকেটে সেট হয়ে তার পর কাট, পুল মারত। এখন শুরু থেকেই কাট-পুল মারছে। অবিশ্বাস্য!
আর মিলার? আরসিবি-র বিরুদ্ধে শেষ পাঁচ ওভার চোখে দেখেও বিশ্বাস করতে পারিনি! আজ সকালে ব্রেকফাস্ট টেবলে অ্যালান ডোনাল্ডের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। ওকে জিজ্ঞেস করলাম, মিলার তো তোমাদেরই দেশের। ও এ রকম খেলতে পারে জানতে? ডোনাল্ড বলল, ও নাকি মিলারের ইনিংস দেখে এতটুকু আশ্চর্য নয়! বলল, মিলারের প্রতিভা নিয়ে ওদের কোনও দিনই নাকি সন্দেহ ছিল না। ওর অভাব ছিল শুধু ধারাবাহিকতার।
এই আইপিএল শেষ হলে যেটা নিয়ে আর প্রশ্ন থাকবে বলে মনে হয় না। আমি দেখেছি, ক্রিস গেইল কী ভাবে আমাদের শেষ করেছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও বলব, মিলারের চেয়ে গেইলকে আউট করা সহজ। উইকেটে ছয় ইঞ্চি বাই ছয় ইঞ্চি একটা স্পট পাবেন, যেখানে বল ফেললে গেইল আটকে যাবে। অফ স্পিনার আনলে ওর উইকেটও পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু মিলার বা ডে’ভিলিয়ার্স? নাহ্। ওরা ইয়র্কারকেও মাঠের বাইরে ফেলে দেবে! |