ওয়াংখেড়ে ফ্লাডলাইটের আলো চলে যাওয়াটা ছিল সাময়িক। কিন্তু মুম্বই ম্যাচের পর কেকেআর যে অন্ধকারে ডুবে গেল, তা এই আইপিএলে আর কাটবে বলে মনে হয় না।
ম্যাচটা এমন একটা লড়াই ছিল, যেখানে সামান্য ভুল করা মানেই পা হড়কে যাওয়া। আর গম্ভীর কী করল? শুরু থেকেই এমন সব ভুল করে গেল, যা ক্ষমাহীন। এত ভুল করলে মুম্বইয়ের মতো মেগা টিমকে হারানো যায় না। গেলও না। টিমটা বাছতে ভুল করল, বোলিং পরিবর্তন তো আরও খারাপ।
এমন একটা ভুলে ভরা দিনে মনটা ভাল হয়ে গেল এক জনকে দেখে। ভিন্টেজ সচিন। এই আইপিএলটায় চেনা সচিনকে সে ভাবে দেখা যাচ্ছিল না। এ দিন যেন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে নেমেছিল ও। শটগুলো প্রথম থেকে নিখুঁত হয়েছে। স্টেপ আউট করে পেসারদের মেরেছে। ম্যাকলারেনকে পর পর পাঁচটা চার যে ভাবে মারল, তাতে সেই প্রথম দিককার আইপিএলের আগ্রাসী সচিনকে মনে পড়ে যাচ্ছিল। ২৮ বলে ৪৮ রান করে ও-ই ম্যান অব দ্য ম্যাচ।
|
টুইটারে মনোজ
আজ আমার ক্রিকেটজীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন। সারা জীবনে এই দিনটা হজম করতে পারব না। (সন্ধে ৭-৪৫)
আমার টুইটার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে। আমার জীবনের খারাপ দিন-টিন নিয়ে কেউ একটা মিথ্যে টুইট করেছে। আমি একদম ঠিক আছি!!! (রাত ১০ টা) |
|
সচিন আর স্মিথের ওপেনিং জুটিটাই মুম্বইয়ের ১৭০ রানের ভিতটা তৈরি করে দেয়। আর ম্যাকলারেনকে মারা ওই পাঁচটা বাউন্ডারির মধ্যে এতটাই ঔদ্ধত্য ছিল যে নাইটদের কাঁধ তখন থেকেই ঝুলে যেতে শুরু করে।
মরণ-বাঁচন ম্যাচে প্রথম শর্তটাই হল, সেরা টিম নামাতে হবে। গম্ভীর শুরুতেই ভুল এগারো নামিয়ে খেলা শুরুর আগেই ‘অ্যাডভান্টেজ মুম্বই’ করে দিল। মনোজ তিওয়ারি ফিট হওয়া সত্ত্বেও কেন ওকে খেলানো হল না, বুঝলাম না। বিশেষ করে যেখানে কেকেআরের ব্যাটিংটা এত নড়বড়ে।
এর পর দেখলাম, সেনানায়কেকে বসিয়ে এক জন পেসারকে দলে রেখেছে কেকেআর। খুব ভাল কথা। কিন্তু কোন যুক্তিতে ব্রেট লি না হয়ে নামটা ম্যাকলারেন হল, বোঝা গেল না।
মুম্বই ম্যাচ হারার জন্য এখন অনেকেই ম্যাকলারেনকে দোষ দিচ্ছেন। দিতেই পারেন। ছেলেটা ৪ ওভারে ৬০ দিয়েছে। শেষ ওভারে ২৪ (প্লাস ১ বাই)। কিন্তু ম্যাকলারেনকে দায়ী করার পাশাপাশি আমি গম্ভীরকেও কাঠগড়ায় তুলতে চাই। শেষ ওভারটা ম্যাকলারেনকে কেন দিল ও? যেখানে বালাজির এক ওভার হাতে ছিল? কালিস-ভাটিয়াও তিনটে করে ওভার করেছিল? |
বালাজি তো প্রথম তিন ওভারে একটা মেডেন-সহ মাত্র ৭ রান দিয়েছিল। ওয়াংখেড়ের পিচের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই বল করছিল। বাউন্স পাচ্ছিল, প্রথম দিকে বল মুভও করাতে পেরেছে। প্রথম স্পেলে ও রকম বল করে ওর আত্মবিশ্বাসটাও ভাল জায়গায় ছিল। আর বালাজিতে ভরসা না থাকলে কালিস তো ছিল। এ রকম পরিস্থিতিতে ওর অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগানো যেত। কিন্তু কোনও ভাবেই ম্যাকলারেনকে বল দেওয়া যায় না। বিশেষ করে যে বোলার প্রথম স্পেলে সচিন তেন্ডুলকরের কাছে পরপর পাঁচটা চার খেয়েছে।
ওয়াংখেড়ের উইকেটে এই রান তাড়া করাটা সব সময় কঠিন। বিশেষ করে মুম্বইয়ের মতো বোলিং লাইনের বিরুদ্ধে। জনসনের পেস-সুইং, মালিঙ্গার ইয়র্কার, হরভজন-ওঝার স্পিন কোনওটাই তো খেলতে পারল না নাইট ব্যাটসম্যানরা। এই ম্যাচটা হারার পর বলেই দেওয়া যায়, গত বারের চ্যাম্পিয়নদের বিদায় হয়ে গেল পেপসি আইপিএল থেকে। কেউ কেউ হয়তো বলবেন, অঙ্কের বিচারে এখনও ক্ষীণতম আশা অবশিষ্ট রয়েছে গম্ভীরদের। আমি ও সব অঙ্কের কচকচানির মধ্যে ঢুকছি না। মঙ্গলবার ওয়াংখেড়েতে গম্ভীরদের টিমের যা হাল দেখলাম, তাতে ওরা শেষ চারটে ম্যাচের একটাতেও জিতবে কি না, তা নিয়েই আমার সন্দেহ আছে! |
হিট সচিন
|
মুম্বইকে জিতিয়ে সচিন
• এই মরসুমে ক্রিজে বেশি সময় কাটাতে পারিনি। তবে যখনই নেমেছি, আক্রমণাত্মক খেলার চেষ্টা করেছি। আজ প্রথম থেকেই ব্যাটে-বলে হচ্ছিল। সিদ্ধান্ত নিই আজ আমিই আগ্রাসী ভূমিকাটা নেব।
• ড্রেসিংরুমে আমার সঙ্গে তরুণদের সম্পর্কটা মোটেই ‘ওয়ান ওয়ে ট্র্যাফিক’ নয়। মানে শুধু জ্ঞান দিয়ে গেলাম আর ওরা শুনল। নতুনদের থেকেও শিখছি।
• ক্রিকেট খেলাটার জন্য আমার আবেগ এখনও আগের মতোই তীব্র। আই অ্যাম ইন লাভ উইথ দ্য গেম। |
|
প্লে অফের অঙ্ক |
চেন্নাই (১২ ম্যাচে ১৮) এখনও শীর্ষে। নাইটদের হারিয়ে মুম্বই (১২ ম্যাচে ১৬) দুইয়ে। রাজস্থান (১২ ম্যাচে ১৬) তিনে। নেট রানরেটে মুম্বইয়ের চেয়ে পিছিয়ে। চতুর্থ স্থানে থাকা বেঙ্গালুরুর ১২ ম্যাচে এবং পঞ্চম স্থানে থাকা সানরাইজার্সের ১১ ম্যাচে ১৪। প্লে অফের চার দল হওয়ার লড়াই আপাতত এই পাঁচ ফ্র্যাঞ্চাইজির মধ্যেই। কেকেআর ১২ ম্যাচে ৮ পয়েন্টে লিগ টেবলে সাতে। গত বারের চ্যাম্পিয়নদের অঙ্কের বিচারেও প্লে অফে ওঠার পথ এখন জটিল। |
বিস্তারিত স্কোর |
|