রাস্তায় অল্প অল্প দূরত্বে থাকত ঘোড়াদের জল খাওয়ার জন্য বড় বড় চৌবাচ্চা। সে সময়ে কলকাতায় ঘোড়াই ছিল যাতায়াতের মূল বাহন। পথ চলার ফাঁকে তেষ্টা পেলেই সেই সব চৌবাচ্চায় নিয়ে যাওয়া হত ঘোড়াদের। এখন অবশ্য শহরের পথে ঘোড়ার দর্শন পেতেও যেতে হয় ভিক্টোরিয়া চত্বরে। পুরনো কলকাতার সে সব চৌবাচ্চাও আর বিশেষ নেই।
এ বার ভিক্টোরিয়া চত্বরের ঘোড়াদের জন্য নতুন করে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, ঘোড়াদের জন্য ভিক্টোরিয়ার উল্টো দিকে দু’টি এবং রাস্তায় আরও চারটি জলের জায়গা তৈরি করা হয়েছে।
মহাকরণ সূত্রের খবর, ঘোড়াদের জন্য জলের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন কলকাতা পুরসভার ৭ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুস্মিতা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “ঘোড়াগুলি এখানে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত থাকে। অথচ, ওদের জন্য জলের কোনও ব্যবস্থাই নেই। সেই কারণেই আমি এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলাম। ওই জল শুধু ঘোড়াই নয়, ময়দানের প্রচুর পশুপাখিও খেতে পারবে। আমরা নিজেরাই যদি পরিবেশকে গুছিয়ে না রাখি, তা হলে তো সব মরুভূমি হয়ে যাবে।” |
ভিক্টোরিয়া চত্বরে ঘোড়াদের জলপান। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক। |
এই ব্যবস্থা আরও বড় এক পরিকল্পনার অঙ্গ। প্রতি বছরই গরম বাড়লে কলকাতা শহর জুড়ে দেখা দেয় জলের জন্য হাহাকার। সে সমস্যার সমাধানে এ বার আম-কলকাতাবাসীর জন্য পানীয় জলের বিশেষ ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পূর্ত দফতর এবং কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত এক বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বেশ কয়েকটি পানীয় জলের জায়গা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। মানুষের পাশাপাশি এই পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে ময়দানের পশুদের জন্যও।
তবে এসএসকেএম, ভিক্টোরিয়া থেকে শুরু করে ময়দান ও এসপ্লানেড চত্বর আর্সেনিক-প্রবণ এলাকা বলে পরিচিত। সেখানে মাটির তলা থেকে জল তোলা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যদিও পূর্ত দফতরের এক কর্তার ব্যাখ্যা, “আমরা বোরিং করার আগে ওই সব এলাকার জলে আর্সেনিকের পরিমাণ পরীক্ষা করে নিয়েছি। পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়ার পরেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে সবগুলি যে বোরিং করেই করা হবে, এমনটাও নয়। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে আমরা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সাহায্যেও জলের ব্যবস্থা করছি।” ওই কর্তা আরও জানিয়েছেন, ময়দান এলাকা এমনিতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে থাকে। তাই এ ধরনের প্রকল্প হাত দেওয়ার আগে সেনাবাহিনীর সঙ্গেও আলোচনা করে প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।
পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ময়দানে প্রেস ক্লাবের উল্টো দিকে একটি পানীয় জলের স্ট্যান্ড তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। পূর্ত দফতরের এক মুখপাত্র বলেন, “প্রাথমিক ভাবে আমরা ময়দান চত্বরে ২০টি জায়গায় এমন পানীয় জলের স্ট্যান্ড করার কথা ভেবেছি।” তিনি জানান, মেট্রো চ্যানেল, শহিদ মিনার, বিধান মার্কেট, কার্জন পার্ক-সহ এসপ্লানেড এলাকাতেও পানীয় জলের বেশ কয়েকটি জায়গা করা হবে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে বিধান মার্কেট এবং কার্জন পার্কের মধ্যে ঠান্ডা জলেরও ব্যবস্থা করবে পূর্ত দফতর। পূর্ত দফতরের ওই কর্তার কথায়, “মেট্রো চ্যানেল, শহিদ মিনার এলাকায় প্রায়শই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনের সভা-সমাবেশ থাকে। হাজার হাজার মানুষ সেখানে জড়ো হন। অথচ, এই প্রচণ্ড গরমের সময়ে সেখানে এক ফোঁটা জলের ব্যবস্থা থাকে না। অনেক সময়ে তাঁদের জল কিনে খেতে হয়। সে কারণেই আমরা ওই এলাকায় একাধিক জায়গায় পানীয় জলের ব্যবস্থা করার কথা ভেবেছি।” পূর্ত দফতরের এক কর্তা জানান, ইতিমধ্যে মহাকরণ এবং নব-মহাকরণ এলাকাতেও একাধিক জায়গায় ঠান্ডা পানীয় জল বা কুলারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, মহাকরণে ২০টি, নব-মহাকরণে ১০টি, ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তিনটি ও কালেক্টরেট বিল্ডিংয়ে দু’টি করে কুলার বসানো হয়েছে। |