মন্টা ঘরে ফেরেনি। মনটা তাই ভাল নেই বিধায়কের।
কাশীপুরের তৃণমূল বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার এই মন খারাপের শরিক এলাকার তৃণমূল কর্মীরাও। সেই বৃহস্পতিবার থেকে গরু খোঁজা চলছে মন্টার হদিস পেতে। কোথাও পাওয়া যায়নি তাকে। পুলিশকেও মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন স্বপনবাবু।
মন্টার ভাল নাম মন্টু। হৃষ্টপুষ্ট, ভারিক্কি চেহারা। এমন নয়, যে সে এলাকার রাস্তাঘাট চেনে না। এমনটাও নয় যে মন্টাকে এলাকার বাসিন্দারা চেনেন না। এ দিক-ও দিক ঘুরে বেড়ালেও সন্ধ্যার মুখে ঠিক ফিরত বিধায়কের বাড়িতে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবারের বারবেলা থেকে সে বেমালুম হাওয়া।
সেই থেকে মনটা খচখচ করছে স্বপনবাবুর। কারণ, মন্টা নামের এই খাসির মালিক যে তিনিই। পুরুলিয়া জেলার এই দাপুটে বিধায়কের পশুপাখি প্রেমের কথা শুধু তৃণমূল কর্মীরাই নন, স্থানীয় মানুষজনও বিলক্ষণ জানেন। কাশীপুরের কল্লোলী এলাকায় বিধায়কের বাড়িতে একাধিক গবাদি পশু রয়েছে। আছে কুকুর, পায়রা, খরগোশও। তাদের সঙ্গেই মন্টা মিলেমিশে দিব্যি ছিল এত দিন। স্থানীয় বাসিন্দা তথা তৃণমূল কর্মী বিমল বাউরির কথায়, “খাসিটা বহু দিন ধরে ছিল। হারিয়ে যাওয়ায় দাদার এখন খারাপ লাগছে।” আর এক দলীয় কর্মী বললেন, “খারাপ তো লাগবেই! পশুপাখিদের প্রতি স্বপনদার টান যে দীর্ঘদিনের।” |
বিধায়কের ছড়ানো বাড়ির চৌহদ্দিই যে খাসিটির বিচরণক্ষেত্র ছিল, এমনটা নয়। কালো ছোপওয়ালা বাদামি রঙা মন্টা কখনও একা, কখনও বা দলবল নিয়ে ঘুরে বেড়াত রাস্তায় বা মাঠে। স্বপনবাবুর ছেলে সৌমেন বলেন, “সন্ধ্যার গোড়ায় ঠিক বাড়ি ফিরত। বাবা যখন ওকে কিনেছিলেন, তখন এইটুকুনি ছিল। নয়-নয় করে বছর আটেক রয়েছে ও। মন্টার উপরে বাড়ির সবার টান ছিল।”
বৃহস্পতিবার থেকেই বিভিন্ন জায়গায়, এমনকী, লাগোয়া বাঁকুড়ার দিকেও মন্টার খোঁজ করেছেন সৌমেনরা। তাঁর কথায়, “আমাদের কর্মীরাও বিভিন্ন দিকে খোঁজ করেছেন। নানা জায়গায় ফোনও করছেন। কিন্তু কোনও খবর নেই।” ছাগলের তো আর নিখোঁজ-ডায়েরি হয় না। তাই পুলিশকে মৌখিক ভাবেই বিষয়টি জানিয়েছেন তাঁরা। পুলিশকর্মীরাও কথায় কথায় বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে মন্টার খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে, ওই পর্যন্তই।
বিধায়ক নিজে কী বলছেন?
“সেই কবে ওকে কাশীপুরের হাট থেকে কিনেছিলাম। এত দিন আমার কাছে রয়েছে, একটা মায়া পড়ে গিয়েছিল। খারাপ তো লাগবেই! ও হঠাৎ করে চলে যেতে পারে না!” বলছিলেন স্বপনবাবু। তা হলে গেল কোথায়? বিধায়কের ধারণা, বৃহস্পতিবার এলাকায় বড় হাট বসে। বাইরের লোক আসে। ভিড়ের সুযোগে কে বা কারা মন্টাকে তুলে নিয়ে গিয়ে থাকতে পারে।
পুলিশেরও তেমনটাই অনুমান। তৃণমূলের এক কর্মীও বলছিলেন, “স্বপনদার বাড়িতে খেয়েদেয়ে চকচকে হয়ে গিয়েছিল মন্টা। অমন নধর খাসির দিকে কারও নজর পড়বে না, তা কি হয়? সবার মনটা তো আর সমান হয় না।” |