বাংলাদেশের পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। মৌলবাদী ‘হেফাজত-এ-ইসলামি’ সংগঠন আওয়ামি লিগ সরকাররের উপর চাপ সৃষ্টি করিতেছে ‘ধর্মদ্রোহ আইন’ প্রণয়নের দাবিতে, যে-আইন ইসলাম ও পয়গম্বরের অমর্যাদা রোধ করিবে। এখনই এই আইনের দাবি করার পিছনে লক্ষ্য একটাই১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত মোল্লা-মৌলবিদের বিচারের যে প্রক্রিয়া বিশেষ ট্রাইবুনালে শুরু হইয়াছে, তাহাতে অন্তর্ঘাত করা। রবিবার এই সংগঠনের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি হিংসাত্মক হইয়া উঠিলে সরকারকে তাহা কড়া হাতে দমন করিতে হয়। মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িতেছে। আওয়ামি লিগের স্বেচ্ছাসেবকরা ময়দানে নামিলে হানাহানি আরও ব্যাপক হওয়ারই আশঙ্কা।
লক্ষণীয়, বাংলাদেশ এই মুহূর্তে অন্য এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্য দিয়া চলিয়াছে। একটি বহুতল ভবন ধ্বংস হইয়া অন্তত ছয় শত মানুষের মৃত্যু হইয়াছে। ধ্বংসস্তূপ এখনও পুরোপুরি সরানো যায় নাই। এমন সঙ্কটের সময়েও মৌলবাদীরা কিন্তু ‘ধর্মদ্রোহ’ লইয়া ভয়ানক বিচলিত, এতগুলি নিরীহ মানুষের প্রাণহানি লইয়া নয়। উপরন্তু সেই বিচলনকে সহিংস তাণ্ডবে পরিণত করিয়া দেশের অর্থনীতি ও স্বাভাবিক জনজীবনকে অচল করিয়া দিবার ষড়যন্ত্রেও লিপ্ত হইয়াছে। দুর্ভাগ্য, দেশের প্রধান বিরোধী দল বি এন পি-ও হেফাজত-এ-ইসলামির হিংসা ও তাণ্ডবের কর্মসূচিতে সোৎসাহে যোগ দিয়াছে। দেশের বর্তমান সন্ধিক্ষণে, বিশেষত যখন ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা ও গণধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত রাজাকার ও মৌলবাদী পাক-পন্থী প্রতিক্রিয়াশীলদের বিচারের কাঠগড়ায় তোলা হইতেছে, তখনও বি এন পি তাহাদেরই সপক্ষে দাঁড়াইয়া আছে, ইহা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
তবে এই নেতিবাচক, ধর্মোন্মাদ হিংসার তাণ্ডবের মধ্যেও আশার কথা একটাই। আওয়ামি লিগের সরকার অন্তত এখনও পর্যন্ত একাত্তরের মৌলবাদী ঘাতক ও তাহাদের সাম্প্রতিক সমর্থকদের চাপের কাছে নত হয় নাই, বরং কঠোর হস্তে তাহাদের উচ্ছৃঙ্খলতা দমন করিতেছে। সরকার এই কঠোর অনমনীয়তার প্রেরণা পাইতেছে সম্ভবত ‘শাহবাগ’ প্রজন্মের কাছ হইতে। এই নবীন প্রজন্মের আপসহীন ধর্মনিরপেক্ষতা বাংলাদেশে এক অভিনব বসন্তের আবাহন করিয়াছে, ‘আরব বসন্ত’ হইতে যাহার চরিত্র আলাদা। আন্দোলনমুখরতায় আরব বসন্তের অনুরূপ হইলেও বাংলাদেশের শাহবাগ প্রজন্ম ধর্মীয় মৌলবাদের সহিত আপস করে নাই, আগ্রাসী মৌলবাদের প্রতিদ্বন্দ্বে প্রশাসনিক দৃঢ়তাকে তুলিয়া ধরিতেছে। আরব বসন্তে যেখানে গণতন্ত্রকে স্বৈরাচারের কায়েমি স্বার্থের জাল ছিঁড়িয়া প্রতিষ্ঠা করিতে হয়, শাহবাগ প্রজন্মের আন্দোলনে সেখানে জেহাদি মৌলবাদের হাত হইতে দেশের নবীন গণতন্ত্রকে রক্ষা করার দায় আছে। শেখ হাসিনা ওয়াজেদের সরকারকে দেশের তরুণ প্রজন্মের এই ধর্মনিরপেক্ষ অভিযানের অভিভাবক হইয়া উঠিতে হইবে। সরকার তথা শাসক দলের নেতৃত্বের সম্মুখে চ্যালেঞ্জটি অত্যন্ত কঠিন। |