সম্পাদকীয় ১...
বিপদ কাটে নাই
রাজনীতিকরা বর্তমানে বাঁচেন। আসন্ন নির্বাচনের চিন্তা তাঁহাদের যতখানি উতলা করে, ভবিষ্যৎ ততখানি ভাবায় না। কিন্তু, অর্থনীতির স্বাস্থ্যের কথা ভবিষ্যৎকে বাদ রাখিয়া ভাবা অসম্ভব। কাজেই, দীর্ঘমেয়াদের ছবিটির দিকে নজর রাখিবার কাজটি রাজনৈতিক স্বার্থহীন কোনও প্রতিষ্ঠান করিলেই মঙ্গল। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সেই দায়িত্ব তুলিয়া লইয়াছে। ব্যাঙ্কের গভর্নর দুব্বুরি সুব্বারাও এই দফায় সুদের হার সামান্য কমাইলেন বটে, কিন্তু একই সঙ্গে জানাইয়া দিয়াছেন, এই অর্থবর্ষে ফের সুদ কমিবে, সেই আশা সামান্যই। তাহার কারণ, স্বল্পমেয়াদে যতই বোধ হউক না কেন যে অর্থনীতির স্বাস্থ্য ফিরিতেছে, প্রকৃত প্রস্তাবে এতখানি নিশ্চিন্ত হওয়ার সময় এখনও আসে নাই। ব্যাঙ্ক ছয়টি আশঙ্কার কথা উল্লেখ করিয়াছে। এক, ভোগব্যয় বৃদ্ধির হার কমিবার সম্ভাবনা আছে; দুই, এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিক বর্ষার পূর্বাভাস থাকিলেও প্রয়োজনের তুলনায় কম বৃষ্টি হইতে পারে; তিন, আয়বৃদ্ধির হার ফের ধাক্কা খাইলে রাজস্বের পরিমাণ কমিতে পারে, ফলে রাজকোষ ঘাটতি বেলাগাম হইতে পারে; চার, আন্তর্জাতিক বাজার ফের অনিশ্চিত হইলে ভারতে এখন যে বিদেশি পুঁজি আসিতেছে, তাহা বিপরীতমুখী হইতে পারে; পাঁচ, আন্তর্জাতিক বাজারে টাকার জোগান বাড়িলে মূল্যস্ফীতি মাথাচাড়া দিতে পারে; ছয়, ভারতে উৎপাদন ক্ষেত্র এখনও ধুঁকিতেছে, ফলে জোগানের সমস্যা আর্থিক পুনরুত্থানের পথে বৃহৎ বাধা হইতে পারে। ব্যাঙ্কের বিশ্লেষণে স্পষ্ট, চাহিদা বাড়াইবার নীতি অর্থনীতিকে তাহার উচ্চ বৃদ্ধির হারের কক্ষপথে ফিরাইতে পারিবে না, জোগান বাড়াইবার পথেই হাঁটিতে হইবে।
ব্যাঙ্ক যে আশঙ্কাগুলির কথা উল্লেখ করিয়াছে, তাহার অনেকগুলিই ভারতের নিয়ন্ত্রণের অতীত। কিন্তু জোগান বাড়াইবার কাজটি নহে। তাহার জন্য কী করা বিধেয়, ব্যাঙ্ক সেই পথনির্দেশও দিয়াছে। প্রথম কথা, পরিকাঠামো নির্মাণে উদ্যোগী হইতে হইবে। কয়েক বৎসর পূর্বে ভারতীয় অর্থনীতি যখন বার্ষিক নয় শতাংশ হারে বাড়িতেছিল, তখন বারে বারেই অতিবৃদ্ধির আশঙ্কা ফিরিয়া আসিত। তাহার কারণ, বৃদ্ধির সেই হারকে ধরিয়া রাখিবার ন্যায় পরিকাঠামো ভারতে ছিল না। বৃদ্ধির পরিস্থিতি বদলাইয়াছে, পরিকাঠামোর ছবিটি অপরিবর্তিত। উন্নয়নের মূল সড়কে ফিরিয়া আসিতে হইলে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ভিন্ন গতি নাই। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পরিবেশ দফতরের ছাড়পত্রের প্রসঙ্গটিও উল্লেখ করিয়াছে। পরিবেশের প্রশ্নটি অবশ্যই সর্বাধিক গুরুত্বের সহিত বিবেচিত হইবার যোগ্য। কিন্তু গুরুত্ব এক কথা, আর জটিলতা আর এক। পরিবেশের ছাড়পত্র যদি শিল্পোন্নয়নের পথে বাধা হইয়া দাঁড়ায়, তবে ফের ভাবিয়া দেখা ভাল। জমি অধিগ্রহণের প্রশ্নটিও ব্যাঙ্কের বিশ্লেষণে আসিয়াছে। রাজনীতিকরা জমি অধিগ্রহণকে নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান না দিতে পারিলে ভারতের বিপদ।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলিয়াছে, বাজারে নগদ টাকার জোগান বাড়াইয়াও অবস্থার ইতরবিশেষ হয় নাই। কাজেই, আর্থিক নীতির মুখ চাহিয়া বসিয়া থাকিলে ভারতের চলিবে না। ভ্রান্ত রাজস্ব নীতিও যে একই রকম পরিত্যাজ্য, তাহা অর্থমন্ত্রী পালানিয়াপ্পন চিদম্বরমের কথা হইতে স্পষ্ট। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উত্তরাধিকারী হিসাবে অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব লওয়া ইস্তক তিনি তাঁহার পূর্বসূরির পথ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করিতেছিলেন। সম্প্রতি আরও এক বার বলিলেন, মন্দা কাটাইতে সেই আমলে যে রাজস্ব নীতি গ্রহণ করা হইয়াছিল, তাহার ফলেই আজ বৃদ্ধির হার ধাক্কা খাইয়াছে। চিদম্বরমের বিশ্লেষণে খুঁত নাই কেইনসীয় পথে যত দূর হাঁটা বিধেয় ছিল, জনমোহনের গতিজাড্যে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তাহার কিছু অধিক হাঁটিয়াছিলেন। সেই পথ হইতে ফিরিয়া আসিতে হইবে। লোকসভা নির্বাচন আসিতেছে, কাজেই চিদম্বরমের কাজটি সহজ হইবে না। কিন্তু কঠিন সময়ে কঠিন কাজ করিতে পারাই তো চারিত্রিক দৃঢ়তার পরীক্ষা। কেন্দ্রীয় সরকার দৃঢ় হউক। দেশের উৎপাদন ক্ষেত্রের হাল ফিরাইতে সচেষ্ট হউক। দেশীয় সঞ্চয়কে বিনিয়োগে রূপান্তরিত করিবার ব্যবস্থা করুক। রফতানির পরিমাণ বাড়াক। আন্তর্জাতিক বাজার ভারতের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে। কিন্তু তাহার উঠা-পড়ার ধাক্কা সামলাইবার ক্ষমতা ভারত অর্জন করিতে পারিবে কি না, তাহা নিতান্তই ভারতের হাতে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.