পুরসভার কাজকর্মে অসন্তোষ প্রকাশ করে টেন্ডার কমিটির চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করলেন আসানসোলের কংগ্রেস কাউন্সিলর শিবদাস চট্টোপাধ্যায়। এ কথা জানিয়ে মেয়রকে চিঠিও পাঠিয়েছেন তিনি। বিষয়টি দলের প্রদেশ নেতৃত্বকেও লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, দাবি শিবদাসবাবুর। চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
কংগ্রেস ও তৃণমূল জোট বেঁধে আসানসোল পুরসভায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই টেন্ডার কমিটির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শিবদাসবাবু। তিনি জানান, পুরসভার অধিবেশনে কাউন্সিলররা ওয়ার্ডের উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে আলোচনা করার পরে একটি তালিকা তৈরি হয়। মেয়র পারিষদের সভায় সেই তালিকা অনুমোদন পায়। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দরপত্র ডেকে ঠিকাদার দিয়ে সে সব কাজ করানো হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে টেন্ডার কমিটি। কিন্তু শিবদাসবাবুর অভিযোগ, “এখন এই প্রক্রিয়া মানাই হচ্ছে না। মেয়র একতরফা ভাবে নিজেই উন্নয়নমূলক কাজের তালিকা বানাচ্ছেন। পছন্দমতো সময়ে দরপত্র ডাকছেন ও ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজ করাচ্ছেন। আমাকে দিয়ে কাঠের পুতুলের মতো কাগজপত্রে সই করিয়ে নেওয়া হচ্ছে।” তাঁর দাবি, এর ফলে পুরসভার টেন্ডার সংক্রান্ত বিষয়ে অস্বচ্ছতা ও বেনিয়ম দেখা দিচ্ছে। প্রতিবাদ করেও ফল মেলেনি, উল্টে নানা বিষয়ে অপদস্থ হতে হচ্ছে তাঁকেই। পুরসভার অধিবেশনে নানা অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। বিরোধীরা তাঁকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন। এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতেই পদ থেকে সরে যাওয়া শ্রেয় বলে মনে করছেন, দাবি শিবদাসবাবুর। তিনি বলেন, “আমি দলের প্রদেশ নেতৃত্বকেও এ ব্যপারে জানিয়েছি। এই অপমানজনক পরিস্থিতিতে আমাদের জোটে না থাকাই উচিত। নেতৃত্ব কী সিদ্ধান্ত নেন, তা জানার অপেক্ষায় রয়েছি। তার আগে পর্যন্ত পুরসভার অধিবেশনে যাব না।”
শিবদাসবাবুর চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও মেয়র তাপসবাবু এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। আসানসোল পুরসভায় শাসকপক্ষের শরিকি বিবাদ অবশ্য নতুন কিছু নয়। নানা বিষয় নিয়ে বারবার কংগ্রেস ও তৃণমূল কাউন্সিলরদের মধ্যে চাপানউতোর তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি পুর এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কটের জন্য মেয়রের দিকে আঙুল তুলেছেন পুরসভার জল দফতরের মেয়র পারিষদ কংগ্রেসের রবিউল ইসলাম। তাঁর অভিযোগ, “পুরসভার জলপ্রকল্প রূপায়ণে মেয়রের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।” পুরসভা পরিচালিত আগাবেগ উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্র ভর্তি সংক্রান্ত বেনিয়মের অভিযোগ ওঠে শিক্ষা দফতরের মেয়র পারিষদ কংগ্রেসে গোলাম সরওয়ারের বিরুদ্ধে। কংগ্রেস কাউন্সিলরদের একাংশ এ ক্ষেত্রে মেয়রও জড়িত বলে অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এই সব অভিযোগ নিয়ে অবশ্য মুখে কুলুপ মেয়রের। তবে পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের জিতেন্দ্র তিওয়ারির পাল্টা বক্তব্য, “ওরা অযথা মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে উন্নয়নের গতি রোধ করছে।”
এই পুরসভায় ৫০টি ওয়ার্ডের মধ্যে তিনটিতে আপাতত কোনও কাউন্সিলর নেই। এই অবস্থায় তৃণমূলের ১৮, কংগ্রেসের ১২ ও বামেদের ১৭ জন কাউন্সিলর রয়েছেন। শহরে দলের একটি কর্মসূচিতে এসে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, জনগণের স্বার্থে তাঁরা মাঝপথে জোটের পুরসভা থেকে সমর্থন তুলতে চান না। কংগ্রেস কাউন্সিলরদের একাংশের অবশ্য এখন দাবি, যে ভাবে নিয়মিত তাঁদের ‘বঞ্চনা’র শিকার হতে হচ্ছে, তাতে আর কত দিন চালানো সে নিয়ে তাঁরা সন্দিহান। |