‘কাঞ্চি’র পরিচালক বলেছিলেন শূন্য স্লেট নিয়ে সেটে আসতে। বাকিটা
উনি লিখে নেবেন। প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্তকে জানালেন চন্দন রায় সান্যাল
হিন্দি, বাংলা মিলিয়ে তো চারটে ছবি মুক্তি পাচ্ছে তিন মাসের মধ্যে... হ্যা।ঁ ‘প্রাগ’ মুক্তি পাচ্ছে। এটা একটা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার। কলকাতাতে ‘গণেশ টকিজ’ রয়েছে। এ ছাড়া নিখিল আডবানির ‘ডি ডে’। ছবিটির পটভূমি পাকিস্তান। ঋষি কপূর একজন ডন। ছবিতে আমি ওঁর ভাগ্নে। নাম ভাঞ্জা। অর্জুন রামপাল একজন ‘র এজেন্ট’। সারা ছবিতে ও আমাকে চেজ করছে। আর আছে সুভাষ ঘাইয়ের ‘কাঞ্চি’। অগস্টে মুক্তি পাবে।
সুভাষ ঘাই
‘কাঞ্চি’তে প্রথমে মিষ্টু। তার পর আপনি। এ তো বাঙালি অভিনেতাদের চাঁদের হাট বসেছে ‘কাঞ্চি’র সেটে? এসজি (সুভাষ ঘাই)-র ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরও বাঙালি। একদিন আমাদের উনি বললেনও এই কথা!
ঘাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগটা হল কী করে? ‘লাভ সেক্স ধোকা’ ছবিটিতে অভিনয় করেছিল অংশুমান ঝা। অংশুমান আমার বন্ধু। ও আবার এসজি-কে অ্যাসিস্ট করেছিল ‘ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’ ছবিটি করার সময়। এসজি অংশুমানকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘কাঞ্চি’তে একটা রোলে কোন অভিনেতাকে নিলে ঠিক মানাবে। অংশুমান বলেছিল একমাত্র চন্দন ওই রোলটা ভাল করতে পারবে।
কী রোল? একজন দুর্নীতিগ্রস্ত সাব-ইন্সপেক্টরের।
ওটা তো হিন্দি ছবিতে ক্লিশে... সেই তো নায়ক। নায়িকাও ওর প্রেমে পড়ে যায়। আমার চরিত্রটির নাম রতন। হয়তো এসজি-র পরিচালিত ‘রাম লক্ষ্মণ’য়ের লক্ষ্মণ চরিত্রটির সঙ্গে মিল আছে। তবে এইটুকু বলতে পারি এসজি-র সঙ্গে শ্যুটিং করার অভিজ্ঞতা একেবারে আলাদা।
এ রকম একটা লাইন তো অভিনেতারা বলেই থাকেন... না, তা নয়। উনি বলেন যে প্রত্যেকটি অভিনেতা তাঁর কাজের মধ্যে কিছু দিন অবধি নতুনত্ব আনতে পারেন। তার পর সব কিছুই হল রিপিটেশন। তাই উনি বলেন যে একটি ছবিতে নিজের সব কিছু শেষ করে দিয়ে দিও না। এর লজিক হল একজন অভিনেতা হয়তো ১৫টা ছবি বা চরিত্রতে নতুন কিছু করে দেখাতে পারে। তার পরে যা করে সেটা সবই এক। কিন্তু অভিনেতারা এটা মানতে চান না। ওঁর পছন্দ স্বতঃস্ফূর্ততা। প্রথম যে দিন এসজি-র বাড়িতে যাই, আমাকে এক গ্লাস লস্যি অফার করেন। বসার ঘরে চোখে পড়ল বিশাল একটা পিয়ানো। অনেকেই জানেন না যে এসজি ওয়েস্টার্ন ক্লাসিকালের খুব ভক্ত। মোজার্ট, বেটোফেন শুনতে ভালবাসেন। তাই ওর মধ্যে বেশ একটা ‘ইস্ট মিটস ওয়েস্ট’ ব্যাপার রয়েছে।
ঘাই অভিনেতা ছিলেন এককালে। পরিচালনা করার সময় কি অভিনয় করে দেখান উনি? একদম তাই। আমাকে কত গল্প বলেছিলেন কী ভাবে অভিনয় করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন মুম্বইতে।
চন্দন রায় সান্যাল
উনি তো ঋত্বিক ঘটকের দু’টো ছবিতে অভিনয় করেছেন... জানতাম না তো। নেক্সট শেডিউলে এটা জিজ্ঞেস করতেই হবে! আপনি কি জানেন যে ‘কাঞ্চি’র কোনও স্ক্রিপ্টই উনি আমাকে দেননি?
মানে? এটা কি ঘাইয়ের ফর্মুলা নাকি? আমাকে রোলটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। তার পর আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম কী ভাবে তৈরি হব। উনি বলেছিলেন আমার উপর বিশ্বাস রাখো। ইউ উইল ফ্লাই। প্রথম যখন দেখা হয় আমাকে দিলীপ কুমারের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতার গল্প করেছিলেন। দিলীপ কুমারকে উনি ডাকেন লালাজি বলে। লালাজি নাকি ওঁকে বলেছিলেন: ‘গিভ মি ওয়ান সিন। দ্যাটস অল অ্যান অ্যাক্টর নিডস’। আমিও এটাই বিশ্বাস করি। সত্যি ভাল অভিনেতা হলে একটা সিনেই সে বাজিমাত করে দেবে।
বাজিমাত তো পরের ব্যাপার। ডায়লগ মুখস্থ করতেন কখন? উনি বলতেন ‘কাম উইথ আ এম্পটি স্লেট’। আর আমি তার উপর লিখব। ডায়লগ দেওয়া হত সেটে। অথবা ক্যামেরা রোল করার একটু আগে। দারুণ পছন্দ করেন ইম্প্রোভাইজ করতে। আমার তো এ সব খুব পছন্দ। আমাকে অনেকটা স্বাধীনতা দিয়েছেন উনি। উনি একজন অভিনেতার কল্পনা শক্তিকে মাথায় রেখে ঠিক করেন তার চরিত্রের জার্নিটা কেমন হবে।
অঞ্জন দত্ত, বিশাল ভরদ্বাজ বা অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী কি এই রকম নাকি? অঞ্জনদা অনেক প্রস্তুতি নেন ছবি করার আগে। শ্যুটিংয়ের এক মাস আগে স্ক্রিপ্ট দিয়েছিলেন। শুনেছি সিন লেখার সময় কেঁদেও ফেলেন উনি। যদি কোনও অভিনেতা খুব ভাল পারফর্ম করে তা হলে মনিটরের সামনে ওঁর চোখ ছলছল করে ওঠে।
বিশাল ওয়ার্কস অন রিদম অ্যান্ড নোটস। আমার মনে আছে ‘কামিনে’ করার আগে উনি আমাকে ‘তোপে ভোপে’ সিনটা শুনিয়েছিলেন। নিজে রেকর্ড করে মেল করেছিলেন আমাকে। যাতে বোঝা যায় সিনটাতে কোন পিচে অভিনয় করতে হবে। একজন ভাল অভিনেতা জানেন সিনের কোথায় একটু ‘উঁচু অভিনয়’ করতে হয় আর কোথায় একদম সূক্ষ্ম। এটাকে বলে সিনের পিচিং। বিশাল এটা খুব সুন্দর করে বোঝান।
টোনিদা আলাদা। সব সময় মজা করে। ‘অপরাজিতা তুমি’র সেটে দেখতাম মাঝে মধ্যেই শার্টের তলায় ভুঁড়িতে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। ভাবুন তো, আমি শট দিচ্ছি আর হঠাৎ চোখ পড়ে গেল পরিচালকের দিকে। আর তখনি দেখলাম আরামে ভুঁড়িতে সুড়সুড়ি দিচ্ছে! আমি জানি টোনিদা নিজে এটা লক্ষ করে না। আমি শট দিয়ে যাই। তবে মনে মনে বেশ হাসি পায়। সেটে আবার একে ওকে জিজ্ঞেস করছে, ‘একটু ভুঁড়িটা কমেছে না রে?’
পরিচালকেরা যদি এ রকম হন, আপনি সেটে কী করেন? ওহ! আমি তো একটু পাগলামি করিই। ‘কামিনে’ করতে গিয়ে আমার হঠাৎ মনে হল কেমন হয় যদি একটা ভাটিয়ালি গান গাই? সেটেই গান বাঁধলাম- ‘আমি আর তুমি যাব স্পেন কোবা কাবানা/ ও চার্লি বন্ধু রে’। বিশালজির সেটা এত ভাল লেগেছিল যে ভোর চারটে পর্যন্ত শাহিদ আর আমাকে নিয়ে গানটা শু্যট করেছিলেন। তবে ফাইনাল এডিটে গানটা নেই। মাঝে মাঝে ইয়ার্কি করে বলি সেটে আমি যা করি তার জন্য আমাকে তো স্পেশালি এন্টারটেনমেন্ট ট্যাক্স দেওয়া উচিত!
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website
may be copied or reproduced without permission.