গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে না গিয়ে অষ্টম শ্রেণির সবুজ গিয়েছিল তার মোবাইলের চিপে গান ডাউনলোড করতে। জানতে পেরে এক ঘর লোকের সামনে গালে থাপ্পড় মেরে বাবা বলেছিলেন, “বাড়ি চল। আজ তোকে কেটে ফেলব।”
সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেনি নবদ্বীপ জাতীয় বিদ্যালয় বয়েজ-এর ছাত্র সায়ন কর্মকার। রাত ন’টা নাগাদ নবদ্বীপ বৌবাজারের বাজারের মাসির বাড়ি থেকে কপালীপাড়ায় বাড়ি ফেরার পথে নিজের সাইকেল নিয়ে দে ছুট। অন্য সাইকেলে ছিলেন বাবা । পিছনের রিকশায় মা। আর তারপর বাবা-মার চোখের সামনে দিয়েই ঝড়ের গতিতে সাইকেল ছুটিয়ে শুক্রবার রাতে মিলিয়ে গিয়েছিল সে।
তারপর প্রায় অন্ধকার এসটিকেকে রোড ধরে মধ্যরাত পর্যন্ত কেবলই সাইকেল চালিয়ে যাওয়া। পথের ক্লান্তিতে সাইকেল যখন থামল তখন রাত প্রায় ১২টা। ততক্ষণে নবদ্বীপ থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে বড়ডাঙা মোড়ে পৌঁছে গিয়েছে সবুজ। খিদে-তেষ্টায় একটা টিউবওয়েলের সামনে দাঁড়িয়ে জল খাচ্ছিল সে। তখনই তাকে খেয়াল করেন স্থানীয় গ্যারেজ মালিক ছকু শেখ। তিনি বলেন, ‘সেদিন রাতে আইপিএল-এ নাইট রাইডার্সের খেলা দেখছিলাম। গরমের রাত। তখনই ওকে দেখি। চেহারা দেখেই সন্দেহ হয়। নির্ঘাত বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। আর যেতে দিইনি।”
তিনি বলেন, ‘সবুজ আমাকে বলেছিল ওর বাবা-মা নেই। জেঠু মেরেছে তাই চলে এসেছে।
বাড়ি নবদ্বীপ।”
শুক্রবার রাতেই নবদ্বীপ থানায় ছেলের নিখোঁজের বিবরণ জানান সবুজের বাবা। তারপর শুরু হয় খোঁজ। সবুজের ছবি ও ফোন নম্বর দেওয়া পোস্টার লাগানো হয় সব জায়গায়। সোমবার সকালে এরকমই একটা পোস্টার চোখে পড়ে ছকুর। তাঁরা যোগাযোগ করেন। বাড়ির লোকেরা সেখান থেকে নিয়ে আসেন সবুজকে।
কিন্তু কেন পালিয়েছিল সে? উত্তরে বাবার কোল ঘেঁষে বসে সবুজ বলে, “ভয় পেয়ে পালিয়েছিলাম।” কোথায় যেতে চেয়েছিলের উত্তরে সে বলে, “মাসির বাড়ি।” গ্যারেজের লোকেদের কাছে বাব-মা নেই বলেছিলে কেন? উত্তর মেলেনি।
তিন দিন ধরে গাড়ির গ্যারেজে কাটিয়ে আসার স্মৃতিতে এখনও ডুবে রয়েছে সবুজ। বলে, “ওখানে খুব আনন্দে ছিলাম। ছকু শেখ আমাকে খুব ভালোবাসতো। সামসুলদা, নাজিরদার সঙ্গে কোনও দিন মাংস, কোনও দিন ডিম খেয়েছি। ওরা সারদিন খুব পরিশ্রম করে। তবে সবাই খুব মজায়ও থাকে। আমি বড় গাড়ির চাকায় হাওয়া দেওয়াও
শিখে এসেছি।”
বাড়ির থেকে কি তাহলে ওই খানেই সে আনন্দে ছিল? সজোরে ঘাড় নেড়ে সবুজ বলে, “রাতে শুয়ে বাড়ির কথা আর বাড়ির বিছানার কথা খুব মনে পড়ত।” |