সেই ২৬/১১-র রাতের পর, মুম্বইয়ে পা রাখলেই একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়। আমি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দল থেকে ছিটকে গিয়েছি। আইপিএলে আমাদের দল মোটেই ভাল জায়গায় নেই। এ সব সত্ত্বেও এখানে পা রাখার পর থেকে ওই রাতের স্মৃতি আমাকে তাড়া করছে।
আমরা নরিমান পয়েন্টে হোটেল ট্রাইডেন্টে উঠেছি। সেই অভিশপ্ত রাতে এই হোটেলটাতেও জঙ্গি হানার ঘটনা ঘটেছিল। আমাদের বাস যখন হোটেলের সরু গেট দিয়ে এঁকেবেঁকে ঢুকছে, মনের মধ্যে অনেক রকম অনুভূতি হচ্ছিল। দুঃখ হচ্ছিল, রাগও।
হোটেলের সুইমিং পুলের কাছে ঘোরার সময় একটা স্মৃতিফলক চোখে পড়ল। জঙ্গি হানায় যে সব অতিথি এবং হোটেলের কর্মী মারা গিয়েছিলেন, তাঁদের উদ্দেশে তৈরি ওই ফলক। অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছিল। সে দিনের ওই অতিথিরা এসেছিলেন হোটেলে কিছু সময় কাটাতে। কিন্তু এখানেই থেমে গেল তাঁদের জীবনের গতি। দুঃখ হচ্ছিল, রাগও। |
হোটেলের লেভেল ২৪-এ কোণের দিকের ঘরে আছি আমি। আমার ঘরের বাঁ দিকে বিশাল মহাসমুদ্র। ডান দিকে মুম্বইয়ের বিখ্যাত স্কাইলাইন। যার পায়ের তলায় প্রাণশক্তিতে চনমনে মেরিন ড্রাইভ। হোটেলের এক রুম সার্ভিস কর্মীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। ও আমাকে সেই জায়গাটা দেখাল, যেখানে ২৬/১১-র রাতে ও লুকিয়ে ছিল।
ভাগ্যচক্রে বেঁচে যাওয়া-র কাহিনির তালিকায় এই ছেলেটার নামও আছে। ওর ঘটনাটা এই রকম। এমনিতে নর্ম্যাল ডিউটি ছিল ওর। কিন্তু বান্ধবীর জন্মদিন বলে নাইট শিফট নিয়ে নেয়। এবং বেঁচে যায়। খুব গর্বের সঙ্গে ছেলেটা আমাকে বলছিল, তারপরে সেই বান্ধবীকে ও বিয়ে করে ফেলে। কারণ, বান্ধবী ওর কাছে খুব লাকি।
আমার লেডি লাক নাতাশা আর আমি জয় ভাই (জয় মেটা)-এর বাড়িতে ডিনার করলাম। বাড়ির তৈরি দারুণ সব রান্না ছিল। ডিনারে আমাদের আলোচনায় ছিল ক্রিকেট বহির্ভূত সব ব্যাপার। কেকেআরে কিন্তু এই জিনিসটা আছে। আমার ব্যাখ্যা দিতে আপত্তি নেই, কিন্তু ঘটনা হল, জয় ভাই হোক কী শাহরুখ, ওরা ক্রিকেটীয় ব্যাপারে মোটেই মাথা গলায় না। গত বছর আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আগে থেকেই কিন্তু ব্যাপারটা চলে আসছে। আপনি আইপিএলের যে কোনও অধিনায়ক বা ক্রিকেটারকে জিজ্ঞেস করে দেখুন। এটা কিন্তু একটা বিরাট প্লাস পয়েন্ট। সাহস করে বলছি, টিমগুলো এতে অনেক সহজে কাজ করতে পারে। |
ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুমের বাইরের ব্যালকনিতে বসে এই কলামটা লিখছি। এই ব্যালকনিতে দাঁড়িয়েই আমার ক্রিকেট জীবনের অন্যতম সেরা মুহূর্তটা উপভোগ করেছিলাম ২০১১-র বিশ্বকাপ জয়। সে দিন এই ব্যালকনিতে পা রাখার জায়গা ছিল না। প্লেয়াররা ছিল, বোর্ডের কর্তারা ছিলেন, ক্রিকেটারদের পরিবার ছিল (আমি তখন ব্যাচেলর ছিলাম আর পরিবারের বাকিরা কেউ ছিল না সঙ্গে)। আমি যেন অবশ হয়ে পড়েছিলাম। ম্যাচ শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা পরে হুঁশ আসে। কী একটা রাত ছিল!
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ম্যাচটায় আমি উল্টো দিকের ব্যালকনিতে থাকব। মানে ‘অ্যাওয়ে টিমের ড্রেসিংরুমে’। আর আমি এখন ভারতীয় এক দিনের দলের সদস্যও নই। জীবনটা সত্যিই খুব দ্রুত গতিতে চলে, তাই না?
কিন্তু ট্রাইডেন্টের সুখের ছবি দেখার জন্য আমি তো অন্তত বেঁচে আছি।
|
মুম্বই মাঠের ব্যালান্স শিট ম্যাচ ৪ : জয় ১ : হার ৩ |
কেকেআর |
• ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান: ক্রিস গেইল, ৭৫ (২০১০)
• সেরা বোলিং: সুনীল নারিন — ৪-১৫ (২০১২)
• দলগত সর্বোচ্চ রান: ১৫৫ (২০১০)
• দলগত সর্বনিম্ন রান: ৬৭ (২০০৮) |
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স |
• ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান: সচিন তেন্ডুলকর — ৭১ (২০১০)
• সেরা বোলিং: শন পোলক — ৩-১২ (২০০৮)
• দলগত সর্বোচ্চ রান: ১৫৬ (২০১০)
• দলগত সর্বনিম্ন রান: ১০৮ (২০১২) |
|