ফের আবিষ্কৃত সিরোই লিলি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে। স্বাধীন হয়েছে ভারত। ইংরেজ উদ্ভিদবিদ তথা ব্রিটিশ সেনার গুপ্তচর ফ্র্যাঙ্ক কিংডন কিন্তু ভারত ছেড়ে যাওয়ার নাম করছেন না! ষাট পার করেও সদ্য বর্মা হয়ে মণিপুরে এসেছেন তিনি। চষে ফেলছেন পাহাড়ি জেলা, উখরুল। এখনও উত্তর-পূর্বে কত গাছ যে তাঁর চেনা বাকি! তাঁকে তো এমনি এমনি ‘গাছ-শিকারি’ নামে ডাকা হয় না। এমন কী লন্ডনে তাঁর বাড়িটিকেও পাথরে, গাছে একেবারে হিমালয়ের ধাঁচে বানিয়েছেন।
সেই ফ্র্যাঙ্কের চোখেই প্রথম ধরা দেয় সাদা-বেগুনি-গোলাপি রং-মিশেলের পাহাড়ি লিলি। সদ্য বিবাহিত দ্বিতীয়া স্ত্রী, জেন ম্যাকলিনের নামে ফ্র্যাঙ্ক সেই লিলির নাম দেন ‘লিলিয়াম ম্যাকলিনি’। যাকে আজকের মণিপুর ‘সিরোই লিলি’ নামে চেনে। রাজ্যের জাতীয় প্রতীক এই সিরোই লিলি বর্তমানে বিপন্ন। জানা ছিল, গোটা রাজ্যের মধ্যে কেবলমাত্র সিরোই পাহাড়ের চুড়োতেই এই ফুলের দেখা মেলে। সেখানেও মানুষের গতিবিধি আর বাঁশের ফলন বৃদ্ধির ফলে সিরোই লিলির ফলন কমে গিয়েছে। তবে এতদিনে সিরোই লিলি নিজের বাঁচার তাগিদে নিজেই বিকল্প বাসস্থান খুঁজে নিয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, সিরোই পাহাড়ের অদূরে, আরও উঁচু গানু ও গারে পাহাড়ের প্রায় নয় হাজার ফুট উচ্চতায় এই দুর্লভ ফুল ফুটতে দেখা গিয়েছে।
সিরোই লিলির সঙ্গে রাজ্যবাসীর কবিতা, গান, প্রেমের বহু আবেগ মিশে রয়েছে। মিশে রয়েছে বিস্মৃতপ্রায় এক ‘গাছ শিকারি’-র গল্পও। অন্য ইংরেজরা যখন উত্তর-পূর্বের প্রাণীসম্পদ শিকারে ব্যস্ত, ব্যস্ত সম্পদ-শোষণে, তখনই ম্যাঞ্চেস্টারের এই ইংরেজ উদ্ভিদবিদ তিব্বত, উত্তর-পশ্চিম চিন, বর্মা, অসমের হিমালয়ে কেবল নতুন গাছ খুঁজে বেড়িয়েছেন।
হিমালয়ের নীল পপি, সাদা-গোলাপি রডোডেনড্রন ‘ওয়ার্ডি’, প্রথম স্ত্রী ফ্লোরিন্ডার নামাঙ্কিত প্রাইমুলাস ফ্লোরিনডাই-এর মতো বহু অনাবিষ্কৃত ফুল ফ্রাঙ্কের হাত ছুঁয়ে প্রকাশ্যে এসেছে। ৬২ বছর বয়সে দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন ফ্র্যাঙ্ক। স্ত্রীকে নিয়েই সোজা উখরুলে পাড়ি। ন’হাজার ফুট পাহাড় চড়ে সিরোই লিলির দেখা পান তাঁরা। সেখানেও থামেননি। ৬৮ বছর বয়সে বর্মার ১১ হাজার ফুট পাহাড় ভেঙে নতুন অভিযান। আবিষ্কার করেন, ‘রসকোয়া অস্ট্রালিস’। শেষ অবধি ৭২ বছর বয়সে আজীবন ফুলের অভিযাত্রীটির মৃত্যু হয়।
১৯৮৯ সালে সিরোই লিলি মণিপুরের ‘রাষ্ট্রীয় প্রতীক’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
সিরোই লিলি সাধারণত সাত থেকে ন’হাজার ফুট উচ্চতায়, মে-জুন মাসে ফোটে। এতদিন জানা ছিল, কেবল ফ্রাঙ্কের অভিযান চালানো সিরোই পাহাড়েই এই ফুল ফোটে। কিন্তু স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাছে খবর পেয়ে রাজ্য পরিবেশ দফতরের কর্তারা সম্প্রতি গানু ও গারে পাহাড়ে অভিযান চালান। অভিযানকারী দলের অন্যতম সদস্য, মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পি কুমার জানান, দু’টি পাহাড়ে দু-একটি নয়, প্রচুর সংখ্যায় সিরোই লিলির গাছ দেখে বিশেষজ্ঞরা বিস্মিত। তাঁর মতে, গাছগুলি মানুষের লাগানো নয়। সম্ভবত পরিবেশের পরিবর্তনেই সিরোই লিলি তাদের বাসা বদল করছে। পরিবেশবিদ আর কে রঞ্জন বলেন, “সিরোই হিলে ‘টেনোয়া’ বাঁশের অতি ফলনের ধাক্কায় সিরোই লিলির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল। কিন্তু এত সিরোই লিলি কতদিন থেকে ওই পাহাড়গুলিতে ফুটতে শুরু করেছে, কী ভাবে এই স্থান-বদল ঘটল তা নিয়ে বিশদ গবেষণা প্রয়োজন।” রাজ্যে ‘গ্রিন ইন্ডিয়া মিশন’-এর অধীনে যে ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে, সেই টাকায় সিরোই পাহাড়ের আশপাশের পরিবেশ বদল নিয়ে প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.