|
|
|
|
স্বামী খুনের তিন দশকে শুধুই আশ্বাস |
বাপি মজুমদার • হরিশ্চন্দ্রপুর |
যে পার্টির জন্য নিজের জীবন খেসারত দিতে হয়েছিল স্বামীকে, সেই দলের কাছ থেকে আশ্বাস ছাড়া কিছু পায়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন শেখ আজাদের স্ত্রী নুরেশা বেওয়া। স্বামী খুন হওয়ার পর দেরিতে হলেও অভিযুক্তদের সাজা হয়েছে শুনেছেন। কিন্তু আশ্বাস দিলেও ৩ দশকে ৪ ছেলের একজনেরও একটা হোমগার্ডের চাকরিও জোটেনি কেন সে প্রশ্ন তুললেন নুরেশা বেওয়া। মালদহের রতুয়ার সিকটাহারে ১৯৮৩ সালের ৫ মে খুন হন সক্রিয় সিপিএম নেতা শেখ আজাদ। বাড়ি থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যায় প্রতিবেশী কয়েকটি গ্রামের কংগ্রেস কর্মী সমর্থকেরা। মাঠে নিয়ে গিয়ে তাঁকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে বল্লমে খুঁচিয়ে খুন করে। বাড়ির ভিতর থেকে স্বামীকে সেই তুলে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য আজও ভুলতে পারেননি নুরেশা। কিছুদিন বাদেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর থেকে আজও রাতে ঘুমের ওষুধ না খেলে দু’চোখের পাতা এক করতে পারেন না তিনি।
আজাদ যখন খুন হন তখন রাজ্যে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান শরিক সিপিএম। স্বামী খুন হওয়ার পর অসুস্থ শরীরেই সাহায্যের আশায় সিপিএম অফিসে ছোটাছুটি করেছেন নুরেশা। কিন্তু আশ্বাসই সার। ৮ ছেলেমেয়েকে নিয়ে কীভাবে সংসার চলবে সেই চিন্তায় শেষে হতাশ হয়ে যাদের বিরুদ্ধে স্বামীকে খুনের অভিযোগ সেই কংগ্রেস দলের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন তিনি। সেই কংগ্রেস দলের উদ্যোগেই দু’বছর আগে বার্ধক্যভাতা মিলেছে। সিপিএমের বিরুদ্ধে আজও চরম অভিমান রয়ে গিয়েছে। সিপিএম সূত্রেই জানা গিয়েছে, এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন আজাদ। তাই তাকে সহ আরও কয়েকজন কর্মীকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। আজাদের সঙ্গে একইসময়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তার এক ভাইপো মহম্মদ ইয়াসিন সহ আরও ৪ জনকে। জখম হলেও প্রাণে বেঁচে যাওয়ার পর মামলার মূল সাক্ষী হন ইয়াসিন।
আজাদের বাড়ির লোকেদের প্রশ্ন, ইয়াসিনের স্ত্রীর জন্য দু’বছর বাদে আইসিডিএস-এ চাকরির ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু প্রাণ দিলেও আশ্বাস ছাড়া কিছু মেলেনি আজাদের পরিবারের। নুরেশা বেওয়া কংগ্রেস সমর্থক ছেলে সাবুরুদ্দিন ও সিপিএম সমর্থক সেজো ছেলে মনসুর রহমানকে পাশে বসিয়েই বলেন, “পার্টির জন্য স্বামী শহিদ হল। ওই সময় বড় বড় নেতারা এসে নানা সাহায্যের আশ্বাস দিলেও কিছু হয়নি।”
জেলা সিপিএমের সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, “কর্মী খুন হওয়ার পর তার জন্য দল যতটা পেরেছে করেছে। সে জন্য সরকার কেন কিছু করবে? কেউ যদি ওই সময় চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন ঠিক করেননি।” তিন দশকে অনেকটাই বদলেছে সিকটাহার। গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। গ্রামের রাস্তা ছিল না। পরে মাটির রাস্তা হয়েছে। রাস্তা কংক্রিট করার বরাদ্দও মিলেছে। অভিযুক্তদের কেউই ওই গ্রামের নন। ফলে মামলার রায় নিয়ে গ্রামে কোনও প্রতিক্রিয়া নেই। শুধু তিন দশক আগের ৫ মে ভোরে স্বামীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় তার আর্তনাদেই আটকে রয়েছেন নুরেশা বেওয়া। |
|
|
|
|
|