|
|
|
|
চিঠিতে ডালুর ভোলবদলের কারণ খুঁজছে সিট |
সুরবেক বিশ্বাস • কলকাতা |
এক বার তিনি নালিশ ঠোকেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এক বার করেন প্রশংসা। কেন এবং কী পরিস্থিতিতে সারদা ও অন্য কয়েকটি অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে বার বার অবস্থান পাল্টেছিলেন আবু হাসেম খান চৌধুরী ওরফে ডালুবাবু বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-ও তা খতিয়ে দেখছে। কংগ্রেসের এই সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী চার বার চিঠি লিখেছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। প্রতি বারই অভিযোগের নিশানায় কিছু বদল হয়েছে। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ওই চিঠিগুলির কপি শ্যামল সেন কমিশনে জমা দিয়েছে। রাজ্য সরকারের গড়া সিট-ও এ বার তদন্তে নেমেছে বিষয়টি নিয়ে। জানার চেষ্টা করছে, কেন প্রধানমন্ত্রীকে লেখা পর পর দু’টি চিঠিতে সারদা সংস্থা ও তার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার আট মাসের মধ্যে তৃতীয় চিঠিতে পুরো একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেল ডালুবাবুর মত। তৃতীয় চিঠিতে তিনি সারদা-র বিরুদ্দে করা অভিযোগ প্রত্যাহারই শুধু করেননি, উল্টে ঢালাও প্রংশসা করেছিলেন সংস্থাটির। সারদা-র কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকেও এ বিষয়ে নির্দিষ্ট ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। |
|
সিট-এর সদস্য, রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, “সারদা-র বিষয়ে ডালুবাবু কেন বার বার অবস্থান বদলেছেন, সে ব্যাপারে আমরা খোঁজ করছি।” তিনি জানান, সারদা-র বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ডালুবাবু প্রথম চিঠিটি দেন ২০১১-র ৪ অগস্ট। দ্বিতীয়টি ১৯ অগস্ট। পরে ২০১২-র ১৫ মার্চ তৃতীয় চিঠিতে তিনি জানান, সারদা যাবতীয় আইন মেনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে। মাসখানেক পর, ১৮ এপ্রিল তিনি ফের একটি চিঠি দেন প্রধানমন্ত্রীকে। সেখানে অন্য চারটি অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানান।
ডালুবাবু রবিবার বলেন, “আমি আমার বিবেকের কাছে পরিষ্কার। আমার ওই সমস্ত চিঠি নিয়ে তদন্ত হলে হোক।” সারদা ও সুদীপ্ত সেন সম্পর্কে তাঁর মত বদলের কারণ কী? কংগ্রেস সাংসদের বক্তব্য, “প্রথম চিঠিতে আমি সুদীপ্ত সেনকে ভুলবশত সঞ্চয়নীর কর্ণধার ভূদেব সেনের ছেলে বলে উল্লেখ করি। পরে সারদা-র তরফে আমাকে এ-ও জানানো হয় যে, সারদা রিয়েলটি লিমিটেড অর্থলগ্নি সংস্থা নয়। আমি ওদের কথা বিশ্বাস করেছিলাম। সে জন্যই পরে প্রধানমন্ত্রীকে অন্য রকম চিঠি দিই।”
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে লেখা ডালুবাবুর প্রথম দু’টি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রককে লেখা একটি চিঠিতে সেবি ইঙ্গিত দেয়, সারদা রিয়েলটি লিমিটেড-এর কাজকর্মের উপর তারা নজর রাখছে এবং সংস্থাটি ১৯৯৯-এর সেবি কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিমস রেগুলেশনস ভেঙে কাজ-কারবার চালাচ্ছে। ২০১২-র ১৩ ফেব্রুয়ারি সেবি-র ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিভিশন অফ কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিমস) এস মধুসুধানন কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের যুগ্মসচিব অলোক নিগমকে লেখা চিঠিতে ওই কথা জানান। এই প্রসঙ্গ তুলতেই ডালুবাবুর জবাব, “বললাম তো, ওদের কথায় বিশ্বাস করেছিলাম। সে জন্যই পরে অন্য রকম চিঠি দিই। আমার কথা কি ভারতীয় সংবিধান নাকি? সেবি তাদের অনুসন্ধানে অন্য রকম কিছু পেতেই পারে!”
তদন্তকারীদের দাবি, প্রথম দু’টি চিঠির জন্য সারদা সংস্থা মামলা করার হুমকি দিয়েছিল। ডালুবাবু বলেন, “বছর দেড়েক আগেকার কথা। মামলার হুমকি দিয়েছিল কি না, এখন মনে করতে পারছি না। তবে আমাকে বলা হয়েছিল, আমার চিঠির ফলে ওরা আঘাত পেয়েছে, ওদের কাজকর্মের ক্ষতি হচ্ছে।” এক তদন্তকারীর কথায়, “সারদা সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন যে সঞ্চয়নী সংস্থার ভূদেব সেনের পুত্র নন, এটুকু জানিয়ে চিঠি দিলেই আর মামলার ভয় থাকত না। কিন্তু ডালুবাবু সারদা সংস্থার প্রশংসা করতে গেলেন কেন? পরের চিঠিতে তিনি সারদা সংস্থার তদানীন্তন গ্রুপ মিডিয়া সিইও-র দিকে অভিযোগের আঙুল তুললেন, কিন্তু সংস্থার নাম উল্লেখ করেননি।” ওই চিঠিতে তিনি অভিযোগ করেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের কাছ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা পাচ্ছে এবং গরিব মানুষকে ঠকিয়ে ওই সংস্থাগুলির তোলা কোটি কোটি টাকা তৃণমূলের তহবিলে ঢুকছে।’ ওই চিঠিতে উল্লেখ ছিল, ‘রাজ্যসভার এক তৃণমূল সাংসদ (যিনি সম্প্রতি নির্বাচিত হয়েছেন এবং পেশায় সাংবাদিক) রাজ্যের শাসক দল এবং অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির মধ্যে প্রধান মধ্যস্থাকারীর ভূমিকা নিচ্ছেন।’
কংগ্রেস হাইকম্যান্ড ও প্রদেশ নেতৃত্ব এখনও ডালুবাবুর পাশেই। পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত দলীয় নেতা শাকিল আহমেদ এ দিন বলেন, “ডালুবাবু যে ভাবে গোটা বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন, তাতে আমরা সন্তুষ্ট। তবে তদন্তে যদি তাঁর বিরুদ্ধে কিছু উঠে আসে, দল তখন সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করবে।” প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “ডালুবাবু আমাকে জানিয়েছেন, পুরোপুরি ভুল বুঝে ও চাপে পড়ে গিয়ে তিনি সারদা সংস্থার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।” আর এক কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীও বলেন, “ডালুদা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কিছু করেননি। কখনও কখনও আমরা অন্য কারও উপর বড্ড বেশি নির্ভরশীল হয়ে যাই। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছিল। তবে ডালুদার অনেক বেশি সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।”
|
পুরনো খবর: সারদা নিয়ে ফের ভোলবদল ডালুর |
|
|
|
|
|