নালিশ। সুপারিশ। এবং ফের নালিশ।
সারদা গোষ্ঠীর হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তদ্বির করে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন তিনি। দিন কয়েকের মধ্যেই একেবারে একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু) জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘ভুল’ হয়ে গিয়েছিল তাঁর।
শনিবার মালদহে ফিরে সাংবাদিক বৈঠক করে ডালুবাবু জানান, ভুলবশত সারদার প্রশংসা করে চিঠি দিলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি ওই সংস্থার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছেন। ডালুবাবু বলেন, “সারদা গোষ্ঠী মালদহে কারখানা গড়বে শুনে প্রশংসা করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে সুপারিশও করেছিলাম। এখন বুঝতে পারছি সেটা ভুল ছিল। মানুষ মাত্রই তো ভুল হয়। নিজের ভুল শুধরে নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীকে ২৬ এপ্রিল চিঠি দিয়ে তা জানিয়ে দিয়েছি। আমি চাই সারদা-র আথির্র্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআই তদন্ত হোক।” তিনি আরও বলেন, “সারদার হয়ে চিঠি লেখার জন্য কেউ যদি ভেবে থাকে আমিও আর্থিক লেনদেনে জড়িত, তা হলে সিবিআই তদন্ত হোক। প্রমাণ হলে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেব।”
বস্তুত, সারদা প্রসঙ্গে প্রধামন্ত্রীকে ডালুবাবুর এটি তৃতীয় চিঠি।
২০১১-র সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রীকে প্রথম বার চিঠি লিখে সারদা-সহ একাধিক ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নালিশ করেছিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী। সে চিঠির কথা জেনে ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন তড়িঘড়ি মালদহে গিয়ে তাঁদের নানা প্রস্তাবিত প্রকল্প নিয়ে ডালুবাবুর সঙ্গে কথা বলেন। বরফও গলেছিল। সারদার এক অনুষ্ঠানে সুদীপ্তবাবুর পাশেই ছিলেন ডালুবাবু। দু-জনকে কথা বলতেও দেখা গিয়েছিল।
কিছু দিনের মধ্যেই প্রথম চিঠির ‘ভুল’ স্বীকার করে ফের প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন ডালুবাবু। এ বার তিনি দাবি করেন, সারদা গোষ্ঠী সম্পর্কে তাঁকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। সে জন্যই তিনি ওই সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়েছিলেন। ওই সব অভিযোগ তিনি প্রত্যাহার করছেন বলে জানান তিনি।
কিন্তু কয়েক মাসের ব্যবধানে ফের সুরবদল। সুদীপ্ত সেন গ্রেফতার হওয়ার পরে তাঁর বিরুদ্ধে ফের সিবিআই তদন্ত চেয়ে বসেছেন ডালুবাবু। ক্ষণে ক্ষণে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর অবস্থান বদল নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন দিল্লির নেতারা। দলীয় এক সাংসদ বলেই দিলেন, “ডালুবাবু তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করুন।” রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী তথা মালদহ পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বলেন, “ডালুবাবু ভুল কবুল করলেও নৈতিক দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। গুরুতর অপরাধের পরে ভুল স্বীকার করলেও সাজা পেতে হয়। ডালুবাবুর মত পাল্টানোর কী রহস্য রয়েছে, তা-ও তদন্ত করে দেখা দরকার।”
|