শিলিগুড়ি শহর ও লাগোয়া তিনটি ব্যাঙ্কে সারদা গোষ্ঠীর অ্যাকাউন্টের হদিস পেল পুলিশ।
শনিবার তা জানতে পেরেই ওই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে অ্যাকাউন্টগুলিতে লেনদেন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। সারদা গোষ্ঠীর শিলিগুড়ি সদর দফতর থেকে কম্পিউটার, নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই তিনটি অ্যাকাউন্টের বেশির ভাগ টাকা মার্চের মধ্যেই তুলে নেওয়া হয়েছে। গত ১৩ এপ্রিল অবশিষ্ট টাকাও তুলে নিয়েছে সারদা।
শিলিগুড়ির অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার এ রবীন্দ্রনাথ বলেন, “ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা পুরো তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছি। তা হাতে এলে টাকার লেনদেন সম্পর্কে বিশদে জানা যাবে।” প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, গত ৯ এপ্রিল কলকাতায় শিলিগুড়ি শাখার কর্মীদের ডেকে বৈঠক করে ১৭ এপ্রিলের মধ্যে টাকা ফেরতের আশ্বাস দিয়েছিলেন সারদা-কর্তারা। এর পরেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সমস্ত টাকা তুলে নেওয়া হয়।
এ দিন সারদা গোষ্ঠীর দার্জিলিং শাখার ম্যানেজার প্রবীণ জিম্বাকে গ্রেফতারের দাবি জানাল ডিওয়াইএফ ও এসএফআই। শনিবার ডিওয়াইএফের জেলা সভাপতি রমেশ খাদারিয়া বলেন, “দার্জিলিংয়ের মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকার উপরে প্রতারণা করেছে সারদা গোষ্ঠী। ওই সংস্থার ম্যানেজার প্রবীণ জিম্বা যে কোনও সময় দার্জিলিং ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেন সে জন্য তাঁকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে। প্রবীণবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরে এ ব্যাপারে স্মারকলিপি পাঠিয়েছেন। দার্জিলিংয়ে ওই গোষ্ঠীর এক লক্ষ আমানতকারী রয়েছেন। পাঁচ হাজারের বেশি এজেন্ট রয়েছেন। ১৫ কোটি ৪২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা সারদায় জমা দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক শঙ্কর ঘোষ জানান, তাঁরা ওই ঘটনায় জড়িত সকলের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। |
পাশাপাশি, শিলিগুড়ির ‘অ্যানেক্স’ সংস্থার অফিসে তল্লাশি চালিয়ে এ দিন বেশ কিছু নথি, কম্পিউটার বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। ওই সংস্থার কর্ণধার প্রসেনজিৎ মজুমদার বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে। আলিপুরদুয়ারে তার সহযোগীদের গ্রেফতারের দাবিতে প্রায় ঘন্টাখানেক পথ অবরোধ হয়। শিলিগুড়িতে প্রসেনজিৎবাবু ও তাঁর বাবা সুব্রতবাবুর নামে একটি অ্যাকাউন্টের হদিশ পেয়েছে পুলিশ। শিলিগুড়ির তিনটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে ওই অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
অ্যানেক্সের নামে যে জমি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট কেনা হয়েছিল তা কবে, কার কাছে হাতবদল হয়েছে সে ব্যাপারেও পুলিশ কিছু তথ্য পেয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, অ্যানেক্স সংস্থাটি আমানতকারীদের দেওয়া টাকায় যে সম্পদ তৈরি করেছে তা নাম মাত্র টাকায় পরিচিত ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের এক কর্তা জানান, প্রতারণার টাকায় কেনা সম্পদ সস্তায় হাতবদল হলে ক্রেতার ভূমিকা নিয়েও তদন্ত হতে পারে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেন, “আমাদের কাছে অনেক অভিযোগই পৌঁছিয়েছে। সবই খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।” পাশাপাশি, সারদা গোষ্ঠী ও অ্যানেক্সের নামে শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকায় কোথায়, কত জমি রয়েছে এবং তা কার কাছে কবে হাতবদল হয়েছে তা নিয়েও তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ। |