সকাল থেকেই ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি আর মেঘ রোদের লুকোচুরি। গরমের ছুটি কাটাতে আসা পর্যটকেরা বৃষ্টি মাথায় ভিড় করেন চৌরাস্তা, ম্যালের চার পাশে। রবিবারের ছুটির সকালটা স্বাভাবিক ছন্দে চলছিল দার্জিলিঙে। যদিও বেলা বাড়তেই ছবিটা দ্রুত বদলে যায়। কার্শিয়াঙের সৈরিনি এলাকায় মোর্চা-জিএনএলএফ সংঘর্ষের খবরে মুহূর্তে সব দোকান বন্ধ হয়ে শুরু করে দার্জিলিঙে। রংবেরঙের ছাতা মাথায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো পর্যটক আতঙ্কিত মুখে হোটেলে ফিরতে শুরু করেন। মোর্চার ডাকা অনির্দিষ্ট কালের পাহাড় বন্ধের ঘোষণার পরে পর্যটকদের মধ্যে দার্জিলিং ছাড়ার হিড়িক পড়ে যায়। তবে বিকেলের পরে ২৪ ঘণ্টার বন্ধ শিথিলের ঘোষণায় সাময়িক স্বস্তি ফেরে। তবে আশঙ্কা কাটেনি। সকলেই পাহাড় সফর কাটছাট করছেন বলে ট্যুর অপারেটারদের সূত্রে জানা যায়।
বিকেল থেকে সন্ধে ম্যালে কাটিয়ে সোমবার টাইগার হিলে সূযোর্দয় দেখা। রবিবার দার্জিলিঙে পৌঁছে এমনটাই ঠিক করে রেখেছিলেন নদিয়ার শ্যামল বন্দোপাধ্যায়। বিকেলে নেমে এসেছেন শিলিগুড়ি সমতলে। |
শুধু শ্যামলবাবুই নন, রবিবার আচমকা মোর্চার অনির্দিষ্ট কালের বন্ধ ঘোষণার পরে বৃষ্টি মাথাতেই দার্জিলিঙের বাস স্ট্যান্ডে ভিড় করতে শুরু করেন পর্যটকরা। শহরের দোকান সহ বেসরকারি বাস ও গাড়ি চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। তবে, পাহাড়ে গোলমালের খবরে সমতলের ভাড়া গাড়িগুলি পাহাড় থেকে নামতে শুরু করে। সেই গাড়িতেই দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে শিলিগুড়ি পৌঁছতে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি শ্যামলবাবুর। তিনি বলেন, “প্রাতরাশ করে ম্যালে গিয়েছিলাম। রোদ-বৃষ্টি মিলিয়ে খুবই উপভোগ্য পরিবেশ ছিল। ভালই কাটছিল। হঠাৎ শুনি কোথায় নাকি গোলমাল হয়েছে, সব দোকান বন্ধ হয়ে গেল। তখনই খটকা লেগেছিল। পরে শুনলাম বনধ চলবে। পরিবার নিয়ে এসেছি, কখন কী হয়ে যায়, তাই দেরি না করেই পাহাড় ছেড়ে চলে এসেছি। বুকিঙের কয়েক হাজার টাকা জলে গেল।”
বন্ধের খবর শুনে তড়িঘড়ি পাহাড় ছেড়ে এসেছেন দিল্লির বাসিন্দা দীপক অগ্রবাল। রবিবার সকালে সপরিবার দার্জিলিঙে পৌঁছন তাঁরা। যদিও কয়েক ঘণ্টা পরেই ফের নেমে আসতে বাধ্য হন সমতলে। উদ্বেগ-আতঙ্ক আর টানা যাত্রার ধকলে অসুস্থ তাঁর স্ত্রী। দীপক বলেন, “এর পরে দার্জিলিঙে আসব কি না ভেবে দেখতে হবে। ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে এসেছিলাম। এখন আবার বাড়ি ফিরে যেতে হবে। ছুটিটাই নষ্ট।”
আচমকা বনধের ঘোষণায় ক্ষুদ্ধ হয়েছেন ট্যুর অপারেটার সংস্থাগুলিও। জলপাইগুড়ির একটি সংস্থার মুখপাত্র তাপস দে বলেছেন, “লাগাতার বনধ আর জঙ্গি আন্দোলনের জেরেই এক সময়ে পর্যটকেরা পাহাড় থেকে মুখ ফিরিয়েছিল। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে ফের স্বাভাবিক ছন্দে ফেরে পাহাড়। এদিনের ঘটনার পরে পর্যটকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। আগাম বুকিং বাতিল হতে শুরু করেছেন।” শিলিগুড়ির একটি সংস্থার কর্ণধার সম্রাট সান্যাল বলেন, “দুপুর থেকেই পাহাড়ের পর্যটকদের ঘন ঘন ফোন আসতে শুরু করে। তবে রবিবার রাত পর্যন্ত পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। আমরাও পরিস্থিতির ওপরে নজর রেখে চলেছি।” |