একের পর এক অর্থলগ্নি সংস্থার অফিসে তালা, ধরপাকড়, বিক্ষোভ। রাজ্য জুড়ে সারদা কেলেঙ্কারির জের চলছেই।
সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন গ্রেফতার হওয়ার পরই বিভিন্ন জেলায় সংস্থার অফিসে হানা দিতে শুরু করে পুলিশ। সেই প্রক্রিয়া এখনও চলছে। রবিবার সারদার বোলপুর শাখা অফিস ‘সিল’ করে দেয় পুলিশ। এপ্রিল মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই তালাবন্ধ পড়েছিল অফিসটি। এ দিন পুলিশ গিয়ে দু’টি কম্পিউটার, বেশ কিছু ফাইলপত্র, একটি আলমারি, দু’টি টেবিল, আটটি চেয়ার-সহ নানা আসবাব বাজেয়াপ্ত করে। বীরভূমের পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা বলেন, “আমানতকারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছিল। নিয়ম মেনে অফিসটি সিল করা হয়েছে।”
আমানতকারী ও এজেন্টদের অভিযোগের ভিত্তিতে এ দিন সারদা গোষ্ঠীর ক্যানিং শাখা অফিসও সিল করেছে পুলিশ। ছ’টি কম্পিউটার, ব্ল্যাঙ্ক চেক-সহ বিভিন্ন নথিপত্র আটক করা হয়েছে। ক্যানিংয়ে ‘গ্রেট ওভারসিজ কমার্শিয়াল লিমিটেড’ নামে এক লগ্নি সংস্থার অফিসেও এ দিন পুলিশি অভিযান চলে। কম্পিউটার ও নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করে অফিসটি সিল করে দেওয়া হয়।
প্রতারণার অভিযোগে ধরপাকড়ও চলছে সমান্তরাল ভাবে। মালদহের অর্থলগ্নি সংস্থা ‘আদিত্য গ্লোবাল’-এর ম্যানেজার মোস্তাক আহমেদকে রবিবার গ্রেফতার করেছে কালিয়াচক থানার পুলিশ। কালিয়াচকের গরুরহাটে সংস্থার অফিসও সিল করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এক এজেন্টের অভিযোগের ভিত্তিতে এই পদক্ষেপ। অভিযোগকারী এজেন্ট সাহাদুল খান বলেন, “৪০ লক্ষ টাকার বেশি ওই সংস্থায় জমা রয়েছে। টাকা না পেয়ে অভিযোগ করেছি।” ধৃত ম্যানেজারের বক্তব্য, “মেয়াদ শেষের আগে টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। আমানতকারী ও এজেন্টদের হামলার আশঙ্কায় অফিস বন্ধ করা হয়েছিল। অন্য উদ্দেশ্য নেই।” তিন বছর আগে ‘অ্যাঞ্জেল অ্যাগ্রো ইন্ডিয়া লিমিটেড’ নাম নিয়ে এই লগ্নি সংস্থা কালিয়াচকে ব্যবসা শুরু করে। দু’বছরের মাথায় তারা নাম পাল্টায়। প্রায় ৫ কোটি টাকার আমানত সংস্থাটি সংগ্রহ করে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এ দিন শ্রীরামপুর থেকে এটিএম গ্রুপের এক আধিকারিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃত প্রদীপ দাস সংস্থার চিফ এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর। আমানতকারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ক’দিন আগে এটিএম গোষ্ঠীর ঝাড়গ্রাম শাখা অফিস থেকে ম্যানেজার-সহ চার কর্মীকে ধরেছিল পুলিশ। সেই মামলাতেই প্রদীপবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আমানতকারীদের কাছ থেকে রেহাই পেতে ‘সানমার্গ সুরাহা মাইক্রো ফিনান্স’ নামে একটি অর্থলগ্নি সংস্থার শতাধিক ঘরছাড়া এজেন্ট রবিবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেনের বাড়ির সামনে ধর্নায় বসেন। এজেন্টরা সকলেই তৃণমূল সমর্থক। এই জেলা পরিষদ তৃণমূল পরিচালিত। মামুদ হোসেন দলের জেলা সাধারণ সম্পাদকও বটে। তাই সুরাহা চেয়ে তাঁর কাছে গিয়েছিলেন এজেন্টরা। মামুদ তাঁদের পুলিশের কাছে যেতে বলেন। ধর্না-অবস্থান উঠলেও ত্রস্ত এজেন্টরা বাড়ি ফেরার সাহস পাননি। |