সঞ্চয়িতা-ওভারল্যান্ডের টাকা মেটানো অনিশ্চিত
কটির ক্ষেত্রে রিসিভার বসেছিল ১৯৮৩ সালে। অন্যটির ক্ষেত্রে ১৯৯৮-তে। প্রথমটির ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে রিসিভার বসানোর নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু সঞ্চয়িতা এবং ওভারল্যান্ড দুই আর্থিক কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রেই আমানতকারীরা এখনও পুরো টাকা ফেরত পাননি। কবে যে সব আমানতকারী টাকা ফেরত পাবেন, তা জানেন না আদালত নিযুক্ত স্পেশ্যাল অফিসারেরাও।
ওভারল্যান্ডের ক্ষেত্রে টাকা কিন্তু কোনো সমস্যা নয়। বন্ধ করে দেওয়া ওই লগ্নি সংস্থার যে সম্পত্তি রাজ্য সরকার বাজেয়াপ্ত করেছিল, তা বিক্রি করেই সব আমানতকারীর টাকা মোটানো সম্ভব বলে মনে করছে আদালত নিযুক্ত স্পেশ্যাল অফিসারের দফতর। তা হলে সব আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে এত দেরি হওয়ার কারণ কি?
স্পেশ্যাল অফিসারের দফতর সূত্রের দাবি, প্রতিটি জমি বিক্রি নিয়ে বার বার আদালতের অনুমতি নিতে হচ্ছে। তার পরে বিজ্ঞাপন দিতে হচ্ছে। এর ফলে গোটা প্রক্রিয়ায় অযথা দেরি হচ্ছে।
আর সঞ্চয়িতার ক্ষেত্রে ঠিক কত টাকা লগ্নি সংস্থাটি বাজার থেকে তুলেছিল, সেটাই এখনও পরিষ্কার নয়। পাশাপাশি সঞ্চয়িতার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার যে পরিমাণ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিল, কার্যত দেখা যাচ্ছে, তার অনেকটাই তাদের হাতে আসবে না। আদালত নিযুক্ত স্পেশ্যাল অফিসারের দফতর জানাচ্ছে, সঞ্চয়িতার বাজেয়াপ্ত করা অনেক বাড়ির ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সেগুলিকে দেখিয়ে সঞ্চয়িতা বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিল। সেই ঋণের টাকা আর শোধ করতে পারেনি সংস্থাটি। আদালতের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক ওই বাড়ির দখল নিয়েছে।
স্পেশ্যাল অফিসারের দফতর হিসেব করে দেখেছে, ১ লক্ষ ৩১ হাজার আমানতকারীর কাছ থেকে সঞ্চয়িতা যে টাকা তুলেছিল, তার মাত্র ২০ শতাংশ মূল্যের সম্পত্তি কমিশনের হাতে এসেছে। মূল সমস্যাটা সেখানেই। বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি বর্তমান বাজার দরে বিক্রি করার অনুমতি পেলে তহবিল যেমন বাড়ত, তেমনই সব আমানতকারীকে টাকা দেওয়ার গ্যারান্টিও দেওয়া যেত বলে স্পেশ্যাল অফিসারের দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছেন। সঞ্চয়িতার স্পেশ্যাল অফিসারকে আগে প্রতিটি ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে হত। তাতে অযথা সময় নষ্ট হচ্ছিল। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টকে এই দায়িত্ব দেওয়ার গোটা প্রক্রিয়াটি অনেকটাই সরল হয়েছে। তা সত্ত্বেও সঞ্চয়িতার গোটা প্রক্রিয়া কবে শেষ হবে, তার কোনও পূর্বাভাস দিতে পারেনি স্পেশ্যাল অফিসারের দফতর।
আবার ওভারল্যান্ডের জন্য গঠিত রিসিভারের অফিস সূত্রের খবর, ওই সংস্থায় টাকা খাটিয়েছিলেন ৩ লক্ষ ৪১ হাজার মানুষ। ওভারল্যান্ড মোট ৩৪ কোটি ৯ লক্ষ টাকার আমানত সংগ্রহ করেছিল। স্পেশ্যাল অফিসারের দফতরের দাবি, ৯৭ হাজার আমানতকারী ইতিমধ্যেই ৬ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা ফেরত পেয়ে গিয়েছেন। এখনও ২ লক্ষ ৪৪ হাজার আমানতকারীকে টাকা দেওয়া বাকি। তার জন্য আরও ২৭ কোটি ২১ হাজার প্রয়োজন।
কী ভাবে এত টাকা মেটালেন স্পেশ্যাল অফিসার? বাকি টাকাই বা আসবে কোথা থেকে?
ওভারল্যান্ড-কাণ্ডের স্পেশ্যাল অফিসারের দফতর সূত্রের খবর, তদন্তে নেমে পুলিশ ওভারল্যান্ডের ১ হাজার ৫৪৬ বিঘা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিল। সেই সম্পত্তি বিক্রি করেই ধীরে ধীরে আমানতকারীদের টাকা মেটানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২৩৪ বিঘা জমি বিক্রি করা হয়েছে। তা থেকে প্রাপ্ত টাকা থেকে মেটানো হয়েছে ৯৭ হাজার আমানতকারীর পাওনা।
স্পেশ্যাল অফিসারের অফিস সূত্রের খবর, ওভারল্যান্ডের বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির মধ্যে বেশ কিছু জমি রয়েছে রাজারহাট-নিউটাউন, বর্ধমান সদর এলাকায়। যেখানে জমির বর্তমান বাজারদর আকাশছোঁয়া। ওই জমি বিক্রি করে আমানতকারীদের সুদ-সহ সব টাকা মেটানো যেত। কিন্তু আমানতকারীদের শুধু আসলের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। কেন? ওভারল্যান্ডের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট নিযুক্ত স্পেশ্যাল অফিসার রণজিৎ মিত্র বলেন, “আমরা আমানতকারীদের শুধু ‘আসল’-টা ফেরত দিচ্ছি। কোনও সুদ দেওয়া হচ্ছে না। এমনটাই আদালত নির্দেশ দিয়েছিল।”
এত মূল্যবান জমি যখন সরকারের হাতে রয়েছে, তখন আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে এত দেরি হচ্ছে কেন? স্পেশ্যাল অফিসারের দফতর সূত্রে বলা হয়, গোটা প্রক্রিয়াটাই অত্যন্ত জটিল। বাজেয়াপ্ত কোনও জমিরই আর্থিক মূল্যায়ন করা হয়নি। প্রতিটি জমি বিক্রির ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশে বিজ্ঞাপন দিতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আদালতও জমির দাম ঠিক করে দিচ্ছে। তাই এত দেরি হচ্ছে। দেরিতে হলেও ওভারল্যান্ডের আমানতকারীরা একটু একটু করে তাঁদের টাকা ফের পাচ্ছেন। যে জমি সরকারের হাতে রয়েছে, তাতে সব আমানতকারীই যে তাঁদের আমানত ফেরত পাবেন সেই নিশ্চয়তা দিয়েছেন স্পেশ্যাল অফিসার। তিনি বলেছেন, “ওভারল্যান্ডের সব আমানতকারীকেই তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.