চ্যাম্পিয়ন হলেই চুলে নতুন ছাঁট বেটোর
চার্চিলকে শেষ ল্যাপে ‘গুরু’র ঢঙে তাতাচ্ছেন সুভাষ
লকাতা থেকে আসা সাংবাদিকদের থেকে আড়াল করে রাখা একটা ছোট ব্ল্যাক বোর্ড!
স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন বেঞ্চে সার দিয়ে বসে থাকে, সে রকমই ভারকা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে পরপর ধাপে বসে আছেন হেনরি, বেটো, সুনীল ছেত্রী, স্টিভন ডায়াসরা!
চক হাতে বোর্ডের সামনে হেডমাস্টারসুভাষ ভৌমিক। বোঝাচ্ছেন বিপক্ষককে ‘মেরে ফেলা’র স্ট্র্যাটেজি। মাঝেমধ্যে আই লিগ খেতাবের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা চার্চিল টিডি-র টুকরোটাকরা সংলাপ ভেসে আসছে‘‘চ্যাম্পিয়ন হতে তোমাদের কেউ সাহায্য করেনি। নিজেদের কৃতিত্বে তোমরা আজ এই জায়গায়।”
উল্টো দিকের বিশাল গির্জার সামনে ভিড়। চার্চিলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য প্রার্থনা নয়, সেখানে রবিবারের বিকেলে আংটি বদল হচ্ছে কোনও গোয়ানিজ হবু স্বামী-স্ত্রীর। মাঝেমধ্যেই বাজির ছররা ফাটছে সশব্দে। কিন্তু সেই ‘শব্দের প্রবেশ নিষেধ’ সুভাষ স্যরের ক্লাসে।
“পরশুই লিগ শেষ করতে হবে। পরের এয়ার ইন্ডিয়া ম্যাচের জন্য বসে থাকব না।”
“এক পয়েন্ট পেলেই চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু আমাদের জিততে হবে। নিজেদের মাঠে জিতব না তো কোথায় জিতব?”
ক্লাস শেষ করে পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভোম্বলবাবু’ উঠে দাঁড়ান। জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী দেরিতে আসার জন্য তাঁরও জরিমানা ধার্য করে, সিগারেটে লম্বা সুখটান দেন সুভাষ। স্বগতোক্তির ঢঙে বলেন, “এগারো মাস ধরে প্র্যাক্টিস করছে ছেলেরা। সেটা ধুয়ে কি জল খাব এখন?”
চার্চিলে যখন ভারতসেরার খেতাব পাওয়ার শেষ ল্যাপের চূড়ান্ত প্রস্তুতি, তখন রবিবারই মারগাও এয়ারপোর্টে কলকাতার এক প্রধানের প্রস্থান এবং অন্য প্রধানের প্রবেশ ঘটে গিয়েছে।

বেটো: এখন যেমন।
লাল-হলুদে তাঁর তৃতীয় মরসুমেও আই লিগ রিংয়ের বাইরে ছিটকে যাওয়ার পর দলবল সমেত কলকাতার বিমান ধরেছেন মর্গ্যান। আর দেশের সেরা ফুটবল টুর্নামেন্টে অবনমন বাঁচিয়ে করিম সবুজ-মেরুন ব্রিগেড নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের আড়াই ঘণ্টা পর পৌঁছেছেন গোয়ায়। চার্চিল-যুদ্ধে নামার আগে আকাশপথেই সমস্যায়র মুখে পড়েছিল মোহনবাগান। মুম্বইয়ে বিমান খারাপ হয়ে যাওয়ায় তীব্র টেনশনে ছিলেন ওডাফা-নবিরা।
গোয়া ছাড়ার আগে মর্গ্যান ঘুরিয়ে তোপ দেগেছেন ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের। বলেছেন, “টিমের ব্যর্থতার জন্য গোলকিপাররা অনেকটা দায়ী। বেশ কয়েকটা খারাপ গোল খেয়েছি।” ইঙ্গিতটা সন্দীপ নন্দীকে কর্তাদের তাড়ানোর দিকে। বতর্মান চার্চিল কিপার সন্দীপকে মরসুমের শুরুতে দলে রেখে দিতে বলেছিলেন সাহেব কোচ। কর্তারা পাত্তা দেননি। চ্যাম্পিয়ন হতে যাওয়া টিমের গোলের নীচে সেই সন্দীপকে দাঁড়াতে দেখে মর্গ্যানের যন্ত্রণা হওয়া স্বাভাবিক। “যারা বলছে ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে আমি এই ক্লাবে টাকা বাড়ানোর খেলা খেলছি তারা ইডিয়েট!” নিজের ইস্টবেঙ্গল-ভবিষ্যৎ নিয়েও ক্ষুব্ধ মন্তব্য মর্গ্যানের।
করিম অবশ্য তোপ-টোপ দাগার মধ্যে নেই। বিকেল-বিকেল তিলক ময়দানে প্র্যাক্টিসে নেমেছিলেন। ওডাফা নিজে চাইলেও চোট বৃদ্ধির ভয়ে টিমের সেরা ফুটবলারকে এ দিন মাঠে নামতে দেননি মোহন-কোচ। আহত টোলগে আসেননি। ওডাফা ম্যাচে না থাকলে সমূহ বিপদ। করিমের চেয়ে কে বেশি জানে?
বিপক্ষ শিবিরে কোথায় কী হচ্ছে সব নখদর্পনে সুভাষের। পেশাদাররা যা করে থাকেন। কিন্তু তা নিয়ে একবিন্দু ভাবতে রাজি নন। ‘চার্চিল বস’ পড়ে রয়েছেন নিজের দল নিয়েই। রেকর্ড (আই লিগে এই প্রথম এক জন কোচ দু’টো আলাদা দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে চলেছেন) গড়তে যাওয়ার আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে সুভাষ শান্ত-নিরুদ্বিগ্ন রাখতে চাইছেন নিজেকে।
গোয়ায় সন্ধে সাতটাতেও সূর্যের আলো ঝকঝক করছে। আরবসাগরেক উপর আছড়ে পড়া সেই আলোর টুকরো যেন বেটো-সুনীল ছেত্রী-সন্দীপ নন্দীদের চোখেমুখে। চ্যাম্পিয়নদের শরীরী ভাষা যেমন হয়, চার্চিলকে দেখাচ্ছে সে রকমই। সুভাষ নিজে এ দিন সরকারি ভাবে কিছু বলেননি। ফুটবলারদের ছেড়ে দিয়েছিলেন সাংবাদিকদের সামনে। আর গোয়ান ক্লাবের প্লেয়ারদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দেখা গেল, মঙ্গলবারই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ‘শপথ’ নিয়ে ফেলেছে গোটা টিম।
টিমের প্রাণভোমরা বেটো দ্য সিলভা বলে দিলেন, “মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়ন হলে বুধবারই চুলের স্টাইল বদলে ফেলব।” ব্রাজিলিয়ান মিডিওর চুলের বর্তমান ছাঁট অদ্ভুত। মাথা জুড়ে অসংখ্য লম্বা সিঁথি। কপাল থেকে পিছনে। “আই লিগে আমাদের প্রথম ম্যাচের আগের দিন এই হেয়ারস্টাইলটা করেছিলাম। প্রতিজ্ঞা করেছিলাম চ্যাম্পিয়ন হলে তবেই এটা বদলাব।” ফিটনেস ট্রেনিংয়ের মধ্যে বললেন ব্যারেটোর অভিন্নহৃদয় বন্ধু। পরের মরসুমেও চার্চিলে থাকবেন ঘোষণা করে বেটোর মন্তব্য, “সাত বছর আগে প্রথম বার ডেম্পোর হয়ে আই লিগ জেতার সময় যে রকম উত্তেজনা ছিল, সে রকমই হচ্ছে এ বার। কত সমস্যা পেরিয়ে লিগ পাব, ভাবলেই কেমন লাগছে!”
পর্তুগাল ফেরত সুনীল ছেত্রী তিন মাসের লিয়েনে এসেই বাজিমাতের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। তাঁর সঙ্গে হেনরির জুটির সাফল্য মনে করাচ্ছে একটা সময় ভারতীয় দলে সুনীল-ভাইচুং জুটিকে। দেশের হয়ে বারবার নেহরু কাপ জিতলেও কখনও কোনও ক্লাবের জার্সিতে আই লিগ জেতেননি সুনীল। “বহু দিনের স্বপ্নের লক্ষ্যে পৌছনোর আগে একেবারেই উত্তেজিত হতে চাইছি না। সুনীল শুধু দেশকেই ট্রফি দেয় না। ক্লাবকেও দেয় সেটা প্রমাণ করার দরকার ছিল। আর সেই সুযোগটা দিয়েছেন সুভাষদা,” বললেন ভারত অধিনায়ক। আই লিগ শেষ করেই ফিরবেন পর্তুগালে। তবে সুযোগ থাকলে সেখান থেকে রিলিজ নিয়ে আবার পাকাপাকি ভারতের ক্লাবে খেলার ইচ্ছে সুনীলের। হয়তো খেলবেন চার্চিলেই।
সন্দীপ নন্দী আবার দেখাতে চাইছেন, গোলকিপারদের ধারাবাহিক ভাল পারফরম্যান্সের জন্য বয়স কোনও বাধাই নয়। মঙ্গলবার তিলক ময়দানে গোলপোস্টের সামনে দাঁড়ানো চার্চিল কিপারের হাতে একটা অদৃশ্য প্ল্যাকার্ড থাকবে। সেটা কয়েক হাজার মাইল দূরের ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের জন্য ‘আমি ফুরিয়ে যাইনি। এখনও ভারতসেরা করতে পারি নিজের দলকে।” লেনি, তাম্বা-রাও নিজেদের নানা অভিমান-যন্ত্রণাকে মাঠে বল পায়ে আগুনে পরিণত করার লক্ষ্যে নামবেন ওডাফাদের বিরুদ্ধে। আর সেই সব যন্ত্রণা-অভিমান উসকে দিতেই ‘ক্লাস’ নেওয়ার ফাঁকে নানা গল্প শুনিয়ে তাঁর ছেলেদের তাতাচ্ছেন সুভাষ।
সাতের দশকে কে যেন এ ভাবেই ভোকল টনিক দিতেন না সুভাষ ভৌমিকদের?




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.