মাঠে নামার আগে থেকেই তুমুল চাপ, মাঠে নেমে দর্শকদের চিল-চিৎকার, মাথার মধ্যে চলতে থাকা আরও নানা অঙ্ক এবং অনবরত বিপক্ষকে রোখার কৌশল তৈরি করা - এ সব সামলে ক্রিকেটে মন বসান কী করে?
ব্যাট হাতে নেমে যখন বিধ্বংসী বোলারদের সামনে দাঁড়ান, তখন মাঝে মাঝে অন্য দিকে মন চলে যায় না তো?
ঘনিষ্ঠ মহলে এমন প্রশ্ন প্রায়ই শুনতে হয়েছে ধোনি, দ্রাবিড়, লক্ষ্মণদের।
ধোনির উত্তর, “ব্যাটিংয়ের সময় মাঝে মাঝে মন অন্য দিকে চলে যায় বটে। কিন্তু তখনই ফোকাস ফিরিয়ে আনি বলটাতে। ওই সময় নিজের মনে গুনগুন করে গান গাইলে মনঃসংযোগ বজায় রাখা সোজা হয়। বোলার দৌড় শুরু করলে গান শুরু করি। গান গাইলে আর অন্য কিছু মনে পড়ে না।” মাঠে নেমে নিজের মনে গান গাওয়াটা অবশ্য নতুন কোনও ব্যাপার নয়। সচিন তেন্ডুলকর, বীরেন্দ্র সহবাগরাও ব্যাট করতে নেমে গুনগুন করেন। তবে তা চাপ সামলাতে, নিজেদের হালকা রাখতে। গানকে মনঃসংযোগ বাড়ানোর রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করায় বোধহয় ধোনিই প্রথম। |
রুডি ওয়েবস্টার (ডান দিকে)। তখন টিম ইন্ডিয়ায় গ্রেগ চ্যাপেলের সঙ্গী। |
দ্রাবিড় এই ব্যাপারে বেশ সিরিয়াস। তিনি আবার গান-টান করার পক্ষপাতী নন। এই প্রশ্নে তাঁর জবাব “নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিটা বল খেলা, এটাই আমার কাছে আসল কথা। নিজের গণ্ডির বাইরে গিয়ে বেশি ভেবে বা অযথা আগের বলগুলো নিয়ে না ভেবে খেলাটাই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটাই আমার কাছে মনঃসংযোগের সঠিক উপায়।”
আবার ভিভিএস লক্ষ্মণের সোজা সাপটা ব্যাখ্যা, “অন্য সময় মন যেখানেই পড়ে থাকুক না কেন, বোলার বল ডেলিভারি করার ঠিক আগের মুহূর্ত থেকে আমার মন পুরোপুরি থাকে সে দিকেই।”
বিখ্যাত মনোবিদ রুডি ওয়েবস্টারের নতুন বই ‘থিংক লাইক আ চ্যাম্পিয়ন’-এ উঠে এসেছে এ রকম নানা অজানা তথ্য। ভারতীয় দলের সঙ্গে থাকা ও পরে আইপিএল ফাইভে কলকাতা নাইট রাইডার্সের ক্রিকেটারদের সঙ্গে কাজ করা ক্যারিবিয়ান মনোবিদ ওয়েবস্টার তাঁর এই বইয়ে ক্রিকেটারদের মনের নানা কথা তুলে ধরেছেন।
ধোনির কথাই ধরুন। তিনি পরিষ্কার জানিয়েছেন, দলের মধ্যে তিনি কখনও একা হতে চান না। বলেছেন, “আমাকে যত কঠিন কাজই দিন না কেন, দলের সবাই যদি আমার সঙ্গে থাকে, তা হলে নিজের সেরাটা উজাড় করে দিতে আমার কোনও অসুবিধা হয় না।” ভাল ও গ্রেট ব্যাটসম্যানের মধ্যে ফারাকটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক। |
তাঁর মতে, “ভাল ব্যাটসম্যানরা ভুল করলে, তা আবার করতে পারে। গ্রেট ব্যাটসম্যানরা আর সেই ভুল করে না। তফাতটা এখানেই।” কিন্তু টি টোয়েন্টি বা ওয়ান ডে ক্রিকেটের পরই টেস্ট সিরিজ থাকলে তাঁর নিজেকে সনাতন ক্রিকেটের উপযোগী করে তোলার উপায়টাও বেশ সাদাসিধে। কী করে করেন সেটা? “প্র্যাক্টিস। শুধুই প্র্যাক্টিস। টি টোয়েন্টি বা ওয়ান ডে ক্রিকেট থাকলে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের প্রবণতা খুব বেড়ে যায়। সেই প্রবণতা কমিয়ে নিজেকে ফের টেস্টের উপযোগী ব্যাটসম্যান করে তোলার জন্য যত বেশি সম্ভব নেট প্র্যাক্টিসই আমার ভরসা।”
চাপই যে তাঁকে ভাল খেলার জন্য বাড়তি মোটিভেশন জোগায়, তাও ওয়েবস্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন ধোনি। বলেছেন, “চাপকে কিন্তু আমি কখনও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখি না। বরং চাপের মধ্যেই আমি নিজেকে ভাল খেলার প্রেরণা জোগাতে পারি। চাপ নিজের বাড়তি দায়িত্বগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়।” আর সব ব্যাপারেই যেখানে অবধারিত ভাবে এক জনের প্রসঙ্গ এসেই যায়, সেই সচিন তেন্ডুলকরকে নিয়ে ধোনির স্মরণীয় উক্তি, “সচিনের সঙ্গে খেলা আমার কাছে মর্ত্যে নেমে আসা ঈশ্বরের কাছ থেকে আশীর্বাদ পাওয়ার মতো ব্যাপার।” |