ব্যাগ খুলতেই বিস্ফোরণে যুবকের মৃত্যু, জখম ৪
দাদার বিয়ের অনুষ্ঠান সেরে গয়া থেকে বাড়ি ফেরার এক দিন পরেই ব্যাগ খুলতে গিয়ে বিস্ফোরণে মৃত্যু হল এক যুবকের। আহত হয়েছেন তাঁর দিদি এবং ছোট তিন বোনপো। রবিবার সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটে রিষড়ার রেলপার্ক লিলুয়াপাড়ায়। মৃতের নাম সনু সিংহ ওরফে গোরা (১৯)। আহতদের শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই ব্যাগে ডিটোনেটর ছিল। তারই কয়েকটি ফেটে ওই দুর্ঘটনা। মৃতের দাদা পাপ্পু এবং জামাইবাবু জিতেন্দ্র সিংহ পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, ফেরার সময়ে ট্রেনে তাঁদের একটি ব্যাগ খোয়া যায়। দাবিদারহীন অন্য একটি ব্যাগ নিয়ে তাঁরা নেমে পড়েন। পরে ওই ব্যাগের জিনিসপত্র বেচে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ব্যাগ খুলতে গিয়েই দুর্ঘটনা। পরে জিতেন্দ্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পাপ্পুকে আটক করা হয়েছে।
বাবার কোলে জখম হিমাংশু।
হুগলির পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “মৃতের আত্মীয়দের কথাবার্তায় অসঙ্গতি রয়েছে। তাঁরা যে সব দাবি করছেন, তার সত্যতা বিচার করতে বিহার পুলিশ এবং আইবি-র সাহায্য নিচ্ছি। বিস্ফোরক রাখার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে এক জনকে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লিলুয়াপাড়ায় জীবন গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ির একতলার তিনটি ঘর ভাড়া নিয়ে মাস চারেক ধরে গোরা-সহ চার ছেলের সঙ্গে বসবাস করছেন এক প্রৌঢ়া। ভাইদের মধ্যে গোরা সেজো। তিনি বড়বাজারে কাপড়ের সেল্সম্যানের কাজ করতেন বড়দা পাপ্পুর সঙ্গে। পাপ্পুর বিয়ে দেওয়ার জন্য গত ৩০ এপ্রিল বাড়ির সকলে গয়ায় যান। বিয়ে হয় ১ মে। ফেরার জন্য ২ মে তাঁরা গয়া প্যাসেঞ্জারে ওঠেন। পরের দিন বাড়ি ফেরেন। সেই দলে গোরার দিদি রেখা, জামাইবাবু জিতেন্দ্র সিংহ এবং তাঁদের তিন শিশুপুত্রও ছিল। রেখা-জিতেন্দ্র ওই পাড়াতেই থাকেন।
রবিবার সকালে রেখা-জিতেন্দ্র তাঁদের সন্তানদের নিয়ে গোরাদের বাড়িতে আসেন। সেই সময়ে বাড়িতে গোরা ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ গোরা কালো রঙের ব্যাগটি খুলতেই বিস্ফোরণ। জখম অবস্থায় গোরা, রেখা এবং তাঁর তিন ছেলেকে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিস্ফোরণ স্থল থেকে বিস্ফোরক ভরা ব্যাগটি উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে বম্ব স্কোয়াড।
কিছু ক্ষণের মধ্যে সেখানেই মারা যান গোরা। বাকিদের কারও আঘাত অবশ্য গুরুতর নয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের সুপার ত্রিদিব মুস্তাফি।
বিস্ফোরণের খবর ছড়াতেই ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ এবং বম্ব স্কোয়াডের লোকজন। তারা বাড়িটি ঘিরে ফেলে। ঘটনাস্থল থেকে কালো রঙের ওই ব্যাগ এবং এক গোছা তার উদ্ধার করে পুলিশ। তবে, এই ঘটনায় বেশ কিছু প্রশ্ন তদন্তকারীদের ভাবাচ্ছে। যেমন, দাবিদারহীন ব্যাগ বুঝেও ট্রেন থেকে কেন তা নিল ওই পরিবার? কেন রেল পুলিশকে জানানো হল না? ফিরে আসার পরও পরিবারটি কেন পুলিশকে ব্যাগের কথা জানাল না? এক দিন পরে ব্যাগ খোলা হচ্ছিল কেন?
জিতেন্দ্র বা পাপ্পুর কাছ থেকে এই সব প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর মেলেনি বলে দাবি করছেন তদন্তকারীরা। এ দিন পাপ্পু প্রথমে বলেন, “ফেরার পথে ট্রেনে ব্যাগ বদলে যায়। তাঁরা সে কথা রিষড়া রেল পুলিশকে জানানোর কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু ব্যাগ থেকে তার বেরিয়ে থাকতে দেখে কৌতূহলে গোরা সেটা খুলতেই বিস্ফোরণ হয়।” তদন্তকারীদের কাছে জিতেন্দ্র অবশ্য ব্যাগ বদলের কথা জানাননি।
গোরাদের বাড়ির মালিক জীবনবাবু বলেন, “আগে পরিবারটি এখানকারই দাসপাড়ায় থাকত। মাস চারেক আগে আমার বাড়িতে ভাড়া আসে। ওদের সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানি না। তবে, মুখ চেনা বলে ভাড়া দিই।” ওই এলাকারই বাসিন্দা লালন শর্মা বলেন, “পরিবারটিকে চিনি। ওরা সকলেই খুব নিরীহ। কারও সঙ্গে ঝুটঝামেলায় জড়াতে দেখিনি।”

ছবি: প্রকাশ পাল



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.