|
|
|
|
লোহারডাগার রুক্ষ মাটিতেই ল্যাংড়া, হিমসাগর |
রসালো আম ফলিয়ে থিতু হচ্ছেন ‘যাযাবরেরা’ |
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • রাঁচি |
এ যেন পাথরে ‘ফুল’ ফোটা।
মাটির অল্প নিচেই পাথরের চাটান। অথচ সেই জমিতেই ফলছে ল্যাংড়া, হিমসাগর কিংবা আম্রপালীর মতো রসালো ও সুস্বাদু আম। আর সেই আমের চাষ করেই লোহারডাগার
তিন হাজারেরও বেশি চাষি এখন ‘যাযাবর’ জীবন ছেড়ে শিকড় গেড়েছে নিজের গ্রামেই।
পাথুরে জমি। ধান কিংবা গম হয় প্রকৃতির মর্জি মেনে। তারপরে গোটা বছরই খাঁ খাঁ রুক্ষ চেহারা নেয় পাহাড় ঘেরা লোহারডাগা। পেটের দায়ে এক সময় চাষিরা কার্যত গ্রাম খালি করে সপরিবারে চলে যেতেন অন্যান্য জেলায়। ইঁট ভাটায় কাজ, চাষের কাজ করতে। যা রোজগার হত তাই সঞ্চয় করে রাখতে হত গোটা বছরের জন্য।
কিন্তু ল্যাংড়া, হিমসাগর চাষ করার পর থেকে, গত তিন-চার বছরে বদলে গিয়েছে আমূল পরিস্থিতি। |
|
আমের ফলন দেখাচ্ছেন এক চাষি। লোহারডাগায়। —নিজস্ব চিত্র |
সানি ওঁরাও ভাঙা ভাঙা বাংলায় বললেন, “অনেক বছর আগে পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলায় কাজ করতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে প্রথমে ল্যাংড়া আর হিমসাগর আমের বিষয়ে জানতে পারি। তখন কয়েকটি চারা এনে নিজের জমিতে লাগিয়ে দেখি ফলন খুব তাড়াতাড়ি হয়। এরপর আমরা বেশ কয়েকজন চাষি পরীক্ষামূলক ভাবে ল্যাংড়া আর হিমসাগর চাষ শুরু করি। সুস্বাদু আম স্থানীয় বাজারে বেশ চাহিদা তৈরি করেছিল।” ধীরে ধীরে লোহারডাগার চাষিরা ল্যাংড়া আর হিমসাগর চাষ করা শুরু করেন। দিল্লি থেকে বরাত আসায় গত বছর সেখানকার বাজারেও লোহারডাগা থেকে গিয়েছিল ল্যাংড়া আর হিমসাগর। চাষিদের দাবি, আগামী বছর থেকে রাঁচি ও জামশেদপুরের বাজারেও তাঁরা ল্যাংড়া, হিমসাগর কিংবা আম্রপালীর মতো সুগন্ধী ও সুস্বাদু আম সরবরাহ করতে পারবেন।
লোহারডাগার ধানমুঞ্জি, বিটপি, মালাংটোলির মতো গ্রামগুলিতে খেতের পরে খেতে শুধুই আমের গাছ বসানো। কোথাও আবার একই জমিতে ডাল ও আম চাষ চলছে একই সঙ্গে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে। চাষিরা জানান, এখন তাঁদের অনেকের কাছে আম চাষের জন্য মোটা পুঁজি সব সময় থাকে। সমগ্র জেলার দু’হাজার একর জমিতে এখন ল্যাংড়া, হিমসাগর, আম্রপালীর বাগান। আম গাছের চারাও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া কিংবা মালদার মতো জেলাগুলি থেকে নিয়ে আসা হয়। আমের ফলন বাড়ানো নিয়ে বর্তমানে তাঁরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, বিকাশ ভারতীর কৃষি বিশেষজ্ঞদের কাছে।
বিকাশ ভারতীর হর্টিকালচার বিশেষজ্ঞ তথা রাঁচির বীরসা মুণ্ডা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সুনীল কুমারের কথায়, “এখানকার জমি কাঁকড় আর পাথর যুক্ত। সেই জমি আমের ফলনের জন্য সারা বছর কী ভাবে ভিজিয়ে রাখতে হবে, কতটা গর্ত করে গাছের চারা বসাতে হবে, দু’টি সারির মধ্যে কতটা দূরত্ব রাখতে হবে চাষিদের সে সব বিষয়ে আমরা শিক্ষিত করেছি। চাষিরা সেইমতো কাজ করছেন।” সংস্থার মুখপাত্র সুজিত গোস্বামী বলেন, “লোহারডাগার
পরে এবার গুমলাতেও ল্যাংড়া, হিমসাগরের চাষ করার জন্য আমরা সেখানকার কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছি।” |
|
|
|
|
|