|
|
|
|
অভিযোগ জমি দখলের |
জঙ্গলের গ্রাম থেকে বিতাড়িত দেড়শো মানুষ |
আশিস বসু • আগরতলা |
দেশের শীর্ষ আদালত জঙ্গলবাসীদের ‘অধিকারের’ বিষয়ে যতই সতর্ক করুক, ত্রিপুরাতেও জঙ্গলবাসীরা নির্ভয়ে, নিশ্চিন্তে থাকতে পারছেন না। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ উঠেছে। জঙ্গলবাসীদের নিজ ভূমি থেকে উৎখাত করতে ত্রিপুরা সরকারের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগের অভিযোগও উঠেছে। রাজ্য বন দফতরের নির্দেশে পুলিশ অভিযান চালায় গোমতী জেলায় জামজুরি বনাঞ্চলে। অভিযানে বনবাসীদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সমস্ত অভিযানটির নেতৃত্ব দিয়েছেন বন দফতরের উদয়পুর রেঞ্জের ডিএফও অরুণ কুমার।
অভিযোগ, কোনও রকম আগাম নোটিস না দিয়েই গত কাল কাক ভোরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পুলিশ অভিযান চালায়। পালাটানা বিদ্যুৎ প্রকল্প সংলগ্ন জামজুড়ি বনাঞ্চলে প্রায় ১৫০ জন মানুষ ইন্দিরা আবাস যোজনার সাহায্যে বাড়ি তৈরি করেছিলেন। রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুৎ প্রকল্পে ওই বাড়িগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের মতে, সংরক্ষিত বনাঞ্চলে উদ্বাস্তু পরিবারগুলি ৬০-৭০ বছর ধরে প্রশাসনিক বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়েই বসবাস করছিলেন। এঁদের অধিকাংশই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত। ডিএফও অরুণ কুমার জানান, ‘‘গত দু’বছর ধরে ওঁদের নোটিস দেওয়া হয়েছে। তাঁদের দাবির সমর্থনে কোনও প্রমাণপত্র ওই জবরদখলকারীরা দেখাতে পারেননি। স্বভাবতই জঙ্গল এলাকা তাঁদের ছাড়তে হয়েছে।’’ এ দিকে দক্ষিণ ত্রিপুরার বন দফতরের কর্তা চন্দন দাসের কথায়, ‘‘সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এই পরিবারগুলি বেআইনি ভাবে বাস করছিলেন। বহু বার নোটিস দিয়ে জায়গা ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। অনুরোধ না শোনায় পুলিশের সাহায্যে বন দফতর এই অভিযান চালায়।’’ রাজ্যে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ৬২টি গ্রাম রয়েছে। সেখানে মূলত বসবাস করছেন রাজ্যের উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষরা।
কিন্তু সোনামুড়ার প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক, বর্তমানে ত্রিপুরা গ্রামীণ কংগ্রেসের নেতা সুবল ভৌমিকের অভিযোগ, ‘‘বাম জামানায় সারা ত্রিপুরায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বহু জায়গায় শাসক দলের কিছু সমর্থক-কর্মী একরে পর একর জমি দখল করে রবার বাগান বানিয়েছে। সেই সব জমিতে বন দফতর হাত দিতে পারছে না।’’ উত্তর ত্রিপুরায় বন দফতরের জমিতে এ রকম বহু বেআইনি রবার বাগান তো রয়েছেই, দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম, সোনামুড়া, বিলোনিয়া-সহ বিভিন্ন সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এই বেআইনি রবার বাগান তৈরি হয়েছে।
রাজ্যের বহু বনাঞ্চলের জমি বেহাত হয়ে গিয়েছে। সেগুলিকে আজও যে উদ্ধার করা যায়নি, সে কথা রাজ্য বন দফতরের আর এক উচ্চপদস্থ কর্তা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ ধরনের দখলিকৃত জমি উদ্ধার পর্ব আইনি জটিলতায় আটকে রয়েছে।’’ উদয়পুর বন বিভাগের ৪২ একর জমিতে বেআইনি রবার বাগিচার অস্তিত্ব স্বীকার করে নেন ডিএফও অরুণ কুমার। তিনি এ-ও বলেন, ‘‘বন দফতরের জমিতে এ ধরনের রবার বাগিচার মালিকদের নোটিস দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধেও দফতর উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’
এ দিকে, বন দফতরের সাহায্যে বনাঞ্চলে বসবাসকারী ‘ভিন্ন রাজনৈতিক’ দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে রাজ্য ‘সন্ত্রাস’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ সুবলবাবুর। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলি সবাই ভারতীয় নাগরিক। বহু দিন তাঁরা ওখানে আছেন।’’ বাস্তুচ্যুত সংখ্যালঘু এই পরিবারগুলির নয়া বাসস্থানের জন্য জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে, জানান তিনি। |
|
|
|
|
|