ধর্ষণ-সহ নারী-নির্যাতনের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে মহিলাদের সম্মানহানি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, চার পাশে যা হচ্ছে, তা দেখে কি নিজেদের মাথা উঁচু রাখা সম্ভব?
রবিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা নিয়ে তৈরি ওয়েবসাইট ‘বিচিত্রা’র উদ্বোধন করেন প্রণববাবু। সেই অনুষ্ঠানেই রবীন্দ্রনাথের ভাবাদর্শের কথা বলতে গিয়ে মহিলাদের সম্মানহানি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
ইদানীং রাজধানী দিল্লি-সহ গোটা দেশে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় নিত্যদিনই সংবাদমাধ্যমে এমন সব খবর শিরোনামে আসছে। শিশু থেকে বৃদ্ধা অত্যাচার
থেকে রেহাই পাচ্ছেন না কেউই। অনেক ক্ষেত্রে নির্যাতিতাদের মৃত্যুও হয়েছে। ব্যতিক্রম নয় পশ্চিমবঙ্গও। পার্ক স্ট্রিট, কাটোয়া, পূর্ব যাদবপুরে একের পর এক ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটিকে ‘সাজানো ঘটনা’ বলে চিহ্নিত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সেই মন্তব্য নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। |
পরামর্শ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ছবি: সুমন বল্লভ |
রাষ্ট্রপতি এ দিন অবশ্য নারী-নির্যীতনের বিশেষ কোনও ঘটনার উল্লেখ করেননি। কিন্তু রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সামনেই তিনি বলেন, “আমরা কোন দিকে যাচ্ছি, সেটা নিজেদেরই প্রশ্ন করে দেখা উচিত। আমাদের নৈতিক দিক্-নির্ণায়ক যন্ত্র (মরাল কম্পাস) কোন দিকে ইঙ্গিত করছে? সভ্যতার উষালগ্ন থেকে আমরা শিখেছি, মাকে সম্মান করতে হবে। মহিলাদের সম্মান কখনও লঙ্ঘন করা যায় না।” কিন্তু নারী-নিগ্রহের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরে মাথা আর উঁচু রাখা সম্ভব কি না, সেই প্রশ্ন তোলেন প্রণববাবু।
এই প্রসঙ্গেই রবীন্দ্রনাথের নীতিবোধের উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি। জানান, রবীন্দ্রনাথের কাজ আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ শুরু করার সময় এসেছে। প্রণববাবু বলেন, “নিজেদের নৈতিক দিক্-নির্ণায়ক যন্ত্রটিরই ঠিক দিক নির্দিষ্ট করে দিতে হবে।” শিল্পমন্ত্রী পার্থবাবু অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন রাষ্ট্রপতির (যাঁকে তিনি ‘প্রণবদা’ বলে সম্বোধন করেন) আগে। তিনি বলেন, “নিজেদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য সকলের কাছে তুলে ধরতে আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর।”
এ দিন রাষ্ট্রপতি যে-ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেন, সেটি কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক অনুদানে তৈরি। প্রণববাবু জানান, রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতবর্ষ উদ্যাপনের জন্য ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়া হয়েছিল। তারই একটি সাব-কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণববাবু। রবিবারের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই কমিটিতে ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় কাজ, তার পরিমার্জন, সংশোধন-সহ সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়াই ছিল আমাদের লক্ষ্য। এই ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করে ওই সাব-কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান হিসেবে আমি আনন্দিত। মনে হচ্ছে, একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল।”
ওই ওয়েবসাইট তৈরির অন্যতম কারিগর, অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী পরে জানান, ‘বিচিত্রা’ ওয়েবসাইট তৈরির জন্য খরচ হয়েছে দু’কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। ভবিষ্যতে এই প্রকল্প আরও উন্নত করার জন্য কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফে সাহায্যের আশ্বাস মিলেছে বলে জানান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। |