হুল্লোড় |
ছোট পর্দার টাকাবাজি |
এঁদের অভিনয়-বিনোদন-সঞ্চালনা রোজ মাতিয়ে রাখে আপনাকে।
চমকে যাবেন এঁদের পারিশ্রমিক জানলে। খোঁজ নিলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
রোজ সন্ধেবেলায় ওঁরা আপনার বসার ঘরে।
রাত হলে আবার শোওয়ার ঘরেও তাঁরা।
ওঁদের দুঃখে আপনার মন কেমন করে।
ওঁদের আনন্দে আপনিও সঙ্গী।
তবে কোনও দিন ভেবে দেখেছেন কী, ছোট পর্দার প্রিয় তারকারা কতটা পারিশ্রমিক পেতে পারেন? যাঁরা রোজ জাতীয় টেলিভিশনে সিরিয়াল, আইপিএল-এর অনুষ্ঠান আর রিয়েলিটি শো করে আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন?
খুব স্বাভাবিক ভাবেই জনপ্রিয়তা অনুযায়ী এঁদের পারিশ্রমিক। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এঁদের প্রতিদিনের পারিশ্রমিক এতটাই যে, শুনলে বিশ্বাস করাটাও বেশ কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
যেমন ধরুন নভজ্যোত সিংহ সিধু। আইপিএল চলাকালীন রোজ ‘এক্সট্রা ইনিংস’-এ রংবেরঙের পাগড়ি পরে সিধু হাজির। কারও পছন্দ তাঁর শায়েরি। কেউ বলেন ‘জাম্পিং ঝপাং’ নাচের স্টেপটাতে সিধুকে একদম মানায় না। |
|
অমিতাভ বচ্চন ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’-এর তিনটে সিজনে মোট ১০০ কোটি |
আন্দাজ করুন তো সিধু কত পেতে পারেন প্রত্যেক দিনের শো-এর জন্য?
না পারলে বলে দেওয়া ভাল যে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির সূত্রের খবর অনুযায়ী সিধুর প্রতিদিনের পারিশ্রমিক পাঁচ থেকে ছয় লক্ষ টাকা!
আর সঞ্চালক গৌরব কপূর বা সমীর কোচার? পায়ে চাকা লাগিয়ে এক স্টেডিয়াম থেকে আর এক স্টেডিয়ামে ঘুরে বেড়ানোর জন্য কত টাকা খরচ করছে চ্যানেল?
“ওঁদের গোটা আইপিএল-এর জন্য একটা ডিল করা হয়েছে। সেটা হয়তো ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা হবে। নবাগত মহিলা অ্যাঙ্কররা এত টাকা পান না। অভিজ্ঞতা বাড়লে টাকার অঙ্কটাও বাড়বে,’’ জানান চ্যানেলের এক সূত্র।
সিরিয়ালে অভিনয়ের ক্ষেত্রে টাকার অঙ্কটা এত বেশি নয়। অভিনেতা রনিত রায় ‘কসৌটি জিন্দেগি কি’ থেকে ‘আদালত’-এর মতো জনপ্রিয় সিরিয়াল করেছেন।
জানতে চান, কত পান ‘আদালত’-এর কে ডি পাঠক?
আনুমানিক প্রতি দিনের রোজগার প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা!
এর সঙ্গেও রনিতের আছে নিজস্ব সিকিওরিটি এজেন্সি।
|
|
|
রাম কপূর
প্রত্যেক দিন প্রায় ১ লক্ষ |
সাক্ষী তনওয়ার
দিনে ৫০ থেকে ৭০ হাজার |
|
‘বড়ে অচ্ছে লগতে হ্যায়’-এর রাম কপূর-এর জনপ্রিয়তাও রনিতের থেকে কোনও অংশে কম নয়। এক সময় রাম ‘কসম সে’ বলে একটি সিরিয়াল করতেন। তার পর রাখি সাওয়ন্ত-এর ‘স্বয়ম্বর’-এর সঞ্চালনা করে ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছেন। কয়েক মাস আগে ‘বড়ে অচ্ছে লগতে হ্যায়’ সিরিয়ালে রাম আর সাক্ষী তনওয়ার-এর ঘনিষ্ঠ দৃশ্য নিয়েও অনেক চর্চা হয়েছিল। সেই রামের আজকে প্রতি দিনের রোজগার প্রায় ১ লক্ষ।
জাতীয় টেলিভিশনের এক প্রযোজক বলছেন, “রাম আর রনিতের রোজগার সব থেকে বেশি। দর্শকের সঙ্গে এঁদের যোগাযোগটা খুব ভাল। তাই প্রযোজক বা চ্যানেল এত
টাকা দিতে রাজি থাকেন। মহিলাদের মধ্যে জনপ্রিয় হলেন শ্বেতা তিওয়ারি, মোনা ‘জসসি’ সিংহ আর আমনা শরিফ। এঁদের প্রতিদিনের পারিশ্রমিক আনুমানিক ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।
অন্যান্য অভিনেতার পারিশ্রমিক অনেকটাই কম। হয়তো দিনপিছু বড়জোর ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
আগামী এক বছরে কি এই অঙ্কটা বাড়তে পারে? সিরিয়াল প্রযোজক যশ পট্টনায়ক বলছেন সেটা হয়তো সম্ভব নয়। “কোনও চরিত্রের জন্য যদি এক জন অভিনেতাকে বিশেষ ভাবে প্রয়োজন হয়, তা হলে চ্যানেল আর প্রযোজক মিলে বেশি টাকা খরচ করতে রাজি থাকে। তবে আমার মনে
হয় না যে টাকার অঙ্কটা দিন প্রতি ১ লক্ষ ৩০ হাজার থেকে বাড়তে পারে। বরং এটা কমার সম্ভাবনাই বেশি,” জানান পট্টনায়েক। |
|
সলমন খান
‘বিগ বস ৬’-এর প্রতিটি এপিসোডে চার কোটি |
রিয়েলিটি শো অবশ্য একেবারে আলাদা। ওখানে কেউ কেউ প্যাকেজ ডিল-এ সাইন করেন। কেউ আবার প্রতি সপ্তাহ হিসেবে পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন। প্রাক্তন এক ‘ঝলক দিখলা যা’-র সেলিব্রিটি প্রতিযোগী জানান যে তিনি প্রত্যেক সপ্তাহে পারিশ্রমিক নিতেন পাঁচ লক্ষ টাকা। ‘‘কেউ কেউ আবার এমনও ডিল করেন যার সঙ্গে শো-তে হার-জিতের কোনও সম্পর্কই থাকে না। আসলে হিসেবটা হচ্ছে পুরোপুরি সময় কেনার। সেলিব্রিটি হয়ে এমন একটা প্রতিযোগিতায় কেউ যোগ দেবেন, যেখানে হার-জিতের ঝুঁকি রয়েছে। এর জন্য তো ভাল টাকা দিতেই হবে।”
গানের বা নাচের রিয়েলিটি শো-এর বিচারকেরাও বেশ মোটা টাকা পারিশ্রমিক পান। প্রত্যেক দিন অন্তত দু’টো করে এপিসোডের শ্যুটিং করা হয় মুম্বইতে। হেসেখেলে
যে কোনও বিচারককে পাঁচ থেকে
ছয় লক্ষ টাকা দেওয়া হয় একটি এপিসোডের জন্য।
বড় পর্দার তারকারা ছোট পর্দায় অনুষ্ঠান করলে তাঁদের পারিশ্রমিকের অঙ্কটাও বেশ বড় থাকে। লক্ষ থেকে অঙ্কটা তখন পৌঁছয় কোটিতে গিয়ে।
কানাঘুষোয় শোনা যায় যে গত বছর সলমন খান ‘বিগ বস ৬’-র সঞ্চালনা করার জন্য পেয়েছেন প্রত্যেক এপিসোডে চার কোটি টাকা। |
|
|
নভজ্যোত সিংহ সিধু
প্রতি দিন পাঁচ লক্ষ থেকে ছয় লক্ষ |
সমীর কোচার
আইপিএল সিজনের জন্য ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ |
|
‘সত্যমেব জয়তে’-এর সময় আমির খানকে দেওয়া হয়েছিল এপিসোড
পিছু আনুমানিক তিন কোটি টাকা। শাহরুখ খান না কি একটু পিছিয়ে। পেয়েছেন দু’কোটি টাকা ‘টোটাল ওয়াইপ আউট: জোর কা ঝটকা’-র প্রত্যেকটি এপিসোড করার জন্য। ঋত্বিক রোশনও তাই। ‘জাস্ট ডান্স’ করার জন্য পেয়েছিলেন প্রতি এপিসোডের জন্য আনুমানিক দু’কোটি টাকা। ‘খঁতরো কে খিলাড়ি (সিজন ফোর)’-এর জন্য অক্ষয় কুমার পেয়েছিলেন প্রতি পর্ব পিছু আনুমানিক দেড় কোটি টাকা।
তবে এঁদের সবার থেকে অবশ্যই আলাদা অমিতাভ বচ্চন। ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’-র তিনটে সিজন করার জন্য একসঙ্গে একশো কোটি টাকার ডিল সাইন করেছিলেন তিনি।
ছোট পর্দা হলেও টাকার অঙ্কটা কিন্তু মোটেই ছোট নয়। আর সব চেয়ে স্বস্তির বিষয় হল, এখানে চিটফান্ড কেলেঙ্কারি ভারতের জাতীয় টেলিভিশনে সেলিব্রিটিদের পারিশ্রমিকের উপর কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি। |
|