বাবা জ্ঞান দিয়ো না
হৃদয়ে
আইপিএল
ত সপ্তাহে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আমার খুব প্রিয় বন্ধু হরভজনও হাজির ছিল সেই অনুষ্ঠানে। আমাকে বলল, “অর্চনাকে আইপিএল-এ খুব মিস করছি।” ভাজ্জির কথাটা মধুর ভাবে বিস্মিত করেছিল আমায়। আর বিশ্বাস করুন, আমিও ওই মুহূর্তটায় উথলে ওঠা আবেগের একটা চোরা স্রোত টের পাচ্ছিলাম। বুঝতে পারছিলাম আমিও কী সাঙ্ঘাতিক মিস করছি আইপিএল-কে।
আমি কিন্তু মুখ ফুটে কথাগুলো বলে উঠতে পারিনি তখন। শুধু এটুকুই বলেছিলাম, ‘‘কী ভাল লাগল শুনে! জানি না, এতে তুমি সান্ত্বনা পাচ্ছ কি না, তবে আমিও তোমাকে খুব মিস করছি।”
ওই অনুষ্ঠানেই দেখা হয়েছিল সচিনের স্ত্রী অঞ্জলির সঙ্গেও । ও-ও একই কথা বলল। বলল, “আইপিএল-এ তোমাকে সত্যিই খুব মিস করছি।”
আবেগ আমাকে সহজে ধরাশায়ী করতে পারে না। বহু মানুষই আমাকে বলেছেন, এই আইপিএল সিজনে তাঁরা কতটা মিস করেছেন আমায়! শুনে আমি সত্যিই অভিভূত। এতগুলো বছরে বহু ক্রিকেটারের সঙ্গে ভাল রকম বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল আমার। এখনও দেখা হলে কী আড্ডাটাই না হয় আমাদের!
আমি জানি নতুন দুই অ্যাঙ্করকে নিয়ে অনেক বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে। খুব পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই এদের প্রতি এতটা বিরূপ হওয়ার কিন্তু সত্যিই কোনও মানে হয় না। লোকজন কী বাজে কথাই না বলছে! মহিলা অ্যাঙ্কররা যদি ‘এক্সট্রা ইনিংস’-এর গ্ল্যামার বাড়িয়ে থাকে, তাতে কি দোষের কিছু আছে? অযথা একটা সেক্সিস্ট মতামত দিয়ে এদের হয়রান করার কোনও মানেই হয় না।
হরভজন সিংহের ‘গ্যাংনাম স্টাইল’
একটা লাইভ শো অ্যাঙ্কর করা মোটেই সোজা ব্যাপার নয়। ওই মেয়েগুলোরও শিখতে কিছুটা সময় লাগবে। আমার বহু দিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই এখন আমি কিছুটা স্বস্তিতে। ব্যাপারটা কিছু দিন আগেও কিন্তু এ রকম ছিল না। আমারও শিখতে সময় লেগেছিল।
প্রত্যেকেরই নিজস্ব একটা কাজ আছে। সেটাকে খাটো করে দেখাটা কখনওই উচিত নয়।
ক্রিকেট, আর সঙ্গে এন্টারটেনমেন্ট, এটাই আইপিএল-এর শেষ কথা। তাই তো আইপিএল-কে ক্রিকেটেনমেন্ট নামেও ডাকা হয়। কোটি কোটি টাকার ব্যাপার! প্রচুর মুভি টাই-আপও জড়িয়ে আছে। সেটগুলো বানাতেও অনেক টাকা খরচ হয়। শো-টা যাতে জাস্ট একটা বোরিং ক্রিকেট শো না হয়ে ওঠে, তার জন্য শো-টাকে মুখরোচক বানানোটাও খুব প্রয়োজন।
আমি কিছুতেই বুঝি না মহিলা অ্যাঙ্কর হলেই কেন তাকে পাঞ্চিং ব্যাগ হতেই হবে! অদ্ভুত ব্যাপার, লোকজন তো আজকাল এও বলছে যে অ্যাঙ্কর আর চিয়ারলিডারদের জন্যই নাকি ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গিয়েছে। ‘স্বল্পবসনা’ মেয়েদের দেখেই নাকি পুরুষরা বেসামাল হয়ে পড়ছে যুক্তিটা ঠিক হজম করতে পারি না।
পাঁচ বছরের একটা মেয়েকে ধর্ষণ করা হল— এই ঘটনার জন্য কোন অ্যাঙ্কর, কোন চিয়ারলিডার দায়ী?
এই ঘটনার জন্য দায়ী স্রেফ আমাদের দেশের ভণ্ডামি। গ্ল্যামারাস মুখ দেখতে কে না চায়? কিন্তু মেনে নেওয়ার কথা বললেই তাদের আপত্তি!
সেক্সিস্ট নানা মন্তব্য করে মেয়েগুলোকে আরও খাটো না করে আমার তো মনে হয় এদের এই ভণ্ডামির মুখোশটা টান মেরে খুলে দেওয়া উচিত।
সচিন ও অঞ্জলি তেন্ডুলকর
একটা লেখাতে পড়লাম এই নতুন অ্যাঙ্করদের নিয়ে খুব কঠোর সব মন্তব্য করা হয়েছে। কেউ কেউ তো এও বলেছেন এই মেয়েগুলো যতটা না পারে তার থেকে অনেক বেশিই চিবিয়ে ফেলেছে। ভীষণ খারাপ লেগেছিল আমার এই নতুন মেয়েদের কথা ভেবে। একই ভাবে সবাইকে বিচার করা কী শোভনীয়? দৃষ্টিকটু সব তুলনা চলছে।
আমার ছ’বছরের ক্রিকেট জার্নির অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আইপিএল এর মতো উন্মাদনা খুব কমই দেখেছি। যখন আমি এসেছিলাম, সবাই বলত আমি কতটা ‘হট’! আমার ক্রিকেটজ্ঞান নিয়ে কিন্তু কেউ জানতে চায়নি।
কেউ একজন বলেছিলেন, যে মুহূর্তে উইকেট পড়ে, অ্যাঙ্কররা সময় নষ্ট না করেই বিশেষজ্ঞদের মতামত জানতে চান। কারণ?
তাঁরা খেলার বিষয়ে বিশেষ কিছু জানেন না। যাঁরা এই কথা বলেন, তাঁরা বোধহয় জানেন না যে অনুষ্ঠানের ফরম্যাটটাই এ রকম। উইকেট পড়লে বিশেষজ্ঞকেই সেই ব্যাপারে মতামত দিতে হয়। এখানে মহিলা অ্যাঙ্করদের দোষ কোথায়!
আমার ইনবক্স মেসেজে সব সময় ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। পাঠাচ্ছেন সেই সব মানুষ যাঁরা আমায় অনুষ্ঠানে না দেখতে পেয়ে খুব মিস করছেন। তা শুনতে কার না ভাল লাগে? আমার অনুপস্থিতিই বোধহয় আমার প্রতি এদের ভালবাসা বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমি এটাই
বলব, এখন যে অ্যাঙ্কররা আছেন, তাঁদের শুধু শুধু নিন্দে না করে মন দিয়ে খেলা উপভোগ করুন। প্রত্যেক দিন কী দারুণ সব ম্যাচ হচ্ছে!
মাঠে ক্রিস গেইল খেলছেন বা সচিনকে আউট করছেন ইশান্ত শর্মা— এ রকম সব দৃশ্য উপভোগ করুন! এ সবে মন দেওয়াটাই কি উচিত নয় এখন?
ইদানীং নানা অ্যাসাইনমেন্টের কাজে দেশের বাইরে যেতে হলেও আমি কিন্তু আইপিএল দেখছি। সত্যি বলতে ক্রিকেটকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসছি। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের খেলা দেখে তো চমকে যাচ্ছি রীতিমতো! ওদের টিম এক আছে। জাস্ট একজন নতুন কোচ এসে কী ভাবে বদলে দিয়েছেন সব কিছু!
‘গেইল স্টর্ম’য়ের ফাঁকে
আমার তো মনে হয় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ক্রিস গেইলের উপর একটু বেশি রকম ভরসা করে। বিরাটের পাশাপাশি আরও কত ভাল ক্রিকেটার ওদের টিমে। রাজস্থান রয়্যালসও টিম হিসেবে দারুণ। ঘরের মাঠে প্রত্যেকটা ম্যাচই দারুণ খেলেছে ওরা। গতবারের চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্স-এর খেলা দেখে অবশ্য আমি ভীষণই হতাশ। দিল্লি ডেয়ারডেভিলস-ও যারপরনাই খারাপ খেলছে।
শেষে তো এটাই বলব যে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মাঠে না থাকাটা আমাকে বেশ দুঃখ দেয়। সৌরভের ক্যারিশমা, মাঠে ওঁর আগ্রাসী মনোভাব দারুণ মিস করি আমি। আমাদের মতো দর্শক ছাড়াও পুণে ওয়ারিয়র্স টিমও নিশ্চয়ই সৌরভকে খুবই মিস করে। এই আইপিএল-এ সচিন আর দ্রাবিড় তো আছেই। দাদাও মাঠে থাকলে খেলাটা যে কী জমত!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.