রতুয়ায় সিপিএম কর্মী খুন
তিরিশ বছর পরে খুনের সাজা দিল সুপ্রিম কোর্ট
কাকভোরে প্রাতঃকৃত্য সারতে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির বাইরে পা বাড়াতেই মধ্যবয়সী সিপিএম কর্মী শেখ আজাদকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল জনা কয়েক দুষ্কৃতী। বেশি দূরে নয়, বাড়ির কাছেই মাঠের ধারে তাঁকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে বল্লমে খুঁচিয়ে খুন করে ফিরে যায় তারা। তিরিশ বছর আগে, ১৯৮৩-র ৬ জুন মালদহের রতুয়া থানার চাঁদমণি এলাকার সিটকাহারের ওই ঘটনা নিয়ে রাজ্যে হইচই পড়ে যায়। কারণ, সে দিনই লাগোয়া অন্য এক গ্রামে সিপিএমের বারো জন কর্মীকে পুড়িয়ে মারা হয়। সিপিএমের অভিযোগ ছিল, এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ওই সিপিএম কর্মী আজাদকে সরিয়ে দিয়ে এলাকয় কর্তৃত্ব কায়েম করতেই নৃশংস খুন।
সেই খুনের ত্রিশ বছর পরে শেখ আজাদকে খুনের ঘটনায় ১৯ জন কংগ্রেস কর্মীকে ১০ বছর জেল ও ৫ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি দীপক মিশ্র ওই রায় দেন। তবে, সিপিএম কর্মীদের পুড়িয়ে মারার ঘটনার অবশ্য কিনিরা হয়নি।
তিন দশক বাদে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের খবর চাউর হলেও এলাকায় বাদী-বিবাদী কোন পক্ষের মধ্যে তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া নেই। বরং, একটা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে কেন এত বছর লাগবে, সেই প্রশ্নেই এলাকা সরগরম।
অভিযুক্তদের মধ্যে ৪ জন ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছেন। যাঁদের সাজা ঘোষণা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১৪ জন কংগ্রেস কর্মী ইতিমধ্যে দশ বছরের বেশি সময় জেল খেটেছেন। ৫ জন জেলে রয়েছেন অন্তত ৯ বছর। যাঁরা মামলায় জেল খেটে বর্তমানে মুক্ত রয়েছেন তাঁদের মধ্যে একজন মহম্মদ এসাহক। তিনি হাড়িকুল নিম্ন বুনিয়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। এখন তাঁর বয়স ৬৫। এ দিন তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট কী রায় দিয়েছে তা এখনও হাতে আসেনি। তবে দশ বছরের বেশি জেল খেটেছি। তা হলে আর জেলে যেতে হবে না বলেই মনে হয়।”
তিন দশক আগের ওই ঘটনা আজ শুধু অভিযুক্ত নয়, আজাদ শেখের পরিবারের কাছেও ফিকে হয়ে এসেছে। তাঁর স্ত্রী নুরেসা বেওয়ার বয়স প্রায় ৭০ বছর। তাঁর ৪ ছেলে ৩ মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর পরে বেশ কিছুদিন তিনি সিপিএম অফিসে ছোটাছুটি করেছিলেন। পরে ছেলেমেয়েদের সামলাতে গিয়ে থানা-পুলিশ, পার্টি অফিসে যাতায়াত বন্ধ করে দেন। এমনকী, যে কংগ্রেসের কর্মীদের বিরুদ্ধে তাঁর স্বামীকে খুনের অভিযোগ রয়েছে, সেই দলের দিকে ক্রমশ তিনি ও তাঁর দ্বিতীয় ছেলে সাবরুদ্দিন ঝুঁকে পড়েন। বড় ছেলে আবু সামা, সেজ মনসুর ও ছোট ছেলে আনেসুর অবশ্য সিপিএমের কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। বাড়ির লোকজন সকলেই সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কথা শুনেছেন।
বাড়ির লোকজন ও পড়শিরাও বিষয়টি নিয়ে বেশি কথা বলতে চাইছেন না। আবু সামা বললেন, “৩২ বছর আগে বাবা খুন হয়েছেন। গোড়ার দিকে আমাদের এর প্রতিকার চেয়ে উদ্দীপনা ছিল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা হারিয়ে গিয়েছে অস্বীকার করে লাভ নেই। ক্রমাগত আদালতে ছোটাছুটি করতে করতে সকলেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।” আজাদ শেখের স্ত্রী নুরেসা বিবি ভাল করে চলাফেরা করতে পারেন না। বয়সের ভারে কথাও প্রায় জড়িয়ে গিয়েছে। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “মানুষটা তো আর ফিরবে না।”
২০০১ সালে মালদহের তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ আজাদ শেখকে খুনের অভিযোগে ২৬ জন কংগ্রেস কর্মীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তাঁদের মধ্যে হাই মাদ্রাসা ও প্রাথমিক স্কুলশিক্ষক ছাড়াও রেলকর্মী ছিলেন। জেলে থাকার সময় অভিযুক্তরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্ট তিনজন অভিযুক্তকে রেহাই দিয়ে বাকি ২৩ জনের বিরুদ্ধে জেলা জজের রায় বহাল রাখেন। তাঁদের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, “দেরিতে হলেও সুবিচার পেয়েছেন আজাদের পরিবার।” ওই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন যাঁরা, সকলেরই বয়স ষাট থেকে সত্তরের কোঠায়। আবদুল হাকিম, মহম্মদ এসাহাক সহ ১৪ জন কংগ্রেস কর্মী ১০ বছর জেল খেটে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জামিন পেয়েছেন। জেলে রেয়েছে চাঁদমণি ১ নম্বর পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রধান ফতেমা বিবির স্বামী মফিজুদ্দিন-সহ চার ভাই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.