প্রয়াত তৃণমূল সাংসদ অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে যেতে গিয়ে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের বিতর্কে জড়ালেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীররঞ্জন চৌধুরী। অভিযোগ, আসন্ন উপনির্বাচন উপলক্ষে হাওড়ায় নির্বাচনী বিধি কার্যকর হওয়ার পরেও সেখানে লালবাতি লাগানো গাড়ি নিয়ে ঢুকেছিলেন তিনি।
হাওড়া সদর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ অম্বিকাবাবু গত ২৫ এপ্রিল মারা যান। আগামী ২ জুন ওই কেন্দ্রে উপনির্বাচন হওয়ার কথা। গত শুক্রবার (৩ মে) নির্বাচন কমিশন ভোটের দিন ঘোষণা করেছে। এ দিন দুপুরে সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে জেলাশাসকের বৈঠকে জানিয়ে দেওয়া হয়, মন্ত্রী-নেতা, রাজনৈতিক কর্মী সবাইকেই নির্বাচন কমিশনের আচরণ বিধি মেনে চলতে হবে।
এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই অধীর লালবাতি লাগানো গাড়ি নিয়ে হাওড়ায় ঢোকেন বলে অভিযোগ। শিবপুরের অপরিসর গলিতে অধীরের প্যাজেরো গাড়ির সামনে ‘পাইলট’ লেখা একটি জিপের মাথায় লালবাতি দপদপ করতে দেখা যায়। সঙ্গে-সঙ্গে আসরে নামে তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়ের কথায়, “নির্বাচনী বিধি চালু হওয়ার পরে আমি নিজেও লালবাতি লাগানো গাড়িতে চড়া ছেড়ে দিয়েছি। অধীরবাবু একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েও কী ভাবে নিয়ম ভেঙে লালবাতির গাড়ি নিয়ে হুটার বাজিয়ে এলাকায় ঢোকেন?” |
অধীরবাবু অবশ্য এক কথায় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমি লালবাতি লাগানো গাড়ি চড়ি না। মন্ত্রী হওয়ার পরেও লালবাতি লাগানো গাড়ি ব্যবহার করি না।” যে গাড়িতে করে তিনি অম্বিকাবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন, সেটিও সরকারি গাড়ি নয় বলে অধীরবাবু দাবি করেছেন।
টিভি-র ফুটেজে অধীরবাবুর গাড়ির সামনে পাইলট জিপের মাথায় অবশ্য লালবাতি জ্বলতে দেখা গিয়েছে। কেন? অধীরবাবু পুরো বিষয়টার দায় স্থানীয় পুলিশের উপরে চাপিয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “আমার গাড়িতে লালবাতি ছিল না। তবে হাওড়া পুলিশ একটা লালবাতি লাগানো এসকর্ট জিপ দিয়েছিল। হয়তো সেটিকেই আমার গাড়ি বলে কেউ ভুল করে থাকবেন।”
হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার অজেয় রানাডের পাল্টা দাবি, পুলিশের তরফে রেল প্রতিমন্ত্রীকে কোনও এসকর্ট গাড়ি দেওয়ার খবরই তাঁর জানা নেই। তিনি বলেন, “উনি আমাদের কাছে কোনও গাড়ি চাননি। সিটি পুলিশের তরফে এসকর্ট দেওয়া হয়েছে বলেও কোনও খবর নেই।” হাওড়ার জেলাশাসক শান্তনু বসুও বলেন, “উনি (অধীর) যে আসছেন, সেটাই আমরা জানতাম না। কারণ, কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এলে আগেই আমাদের কাছে তাঁর সফরসূচি চলে আসে। কিন্তু সে-রকম কিছু আমাদের কাছে আসেনি। তাই মন্ত্রী হিসেবে উনি আসেননি বলেই ধরা যেতে পারে।”
তা হলে ওই লালবাতি লাগানো গাড়িটি কাদের? একটি সূত্রের বক্তব্য, রেলমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী রাজ্যে এলে রেলের নিজস্ব নিরাপত্তাবাহিনী থাকেই। অধীরবাবুর কনভয়ের সামনে ওই এসকর্ট গাড়িটি সম্ভবত রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর।
এই বিতর্কের আবহেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুনীল গুপ্ত জানান, “অধীরবাবু লালবাতি লাগানো গাড়ি নিয়ে শিবপুরে ঢুকেছিলেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। হাওড়ার জেলাশাসককে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
এ দিন বিকেল পাঁচটার কিছু পরে তিনটি গাড়ির কনভয় নিয়ে শিবপুরে অম্বিকাবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন অধীর। সেখানে আধ ঘণ্টা ছিলেন তিনি। অম্বিকাবাবুর স্ত্রী বেলাদেবী এবং দুই মেয়ে সুস্মিতা মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেন রেল প্রতিমন্ত্রী। পরে তিনি বলেন, “অম্বিকাবাবুর সঙ্গে দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। উনি মারা গিয়েছেন শুনে খুবই দুঃখ পেয়েছি। তাই ওঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে ওঁকে শ্রদ্ধা জানাতেই গিয়েছিলাম।” |