রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ১...
ঘুরপথে কেল্লা ফতে
খনও ‘পরিবর্তন’ আসেনি। শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই নিয়মিত ঝাল ঝাল মন্তব্যে নিজেদের দলকে চাঙ্গা করে চলছে। চাপানউতোরের ঠাসঠাস দ্রুমদ্রামে রোজই ঘ্যামচ্যাক হেডলাইন। এই সময়ই এক বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট নেতা তাঁর দলের মহিলা-কর্মীদের পরামর্শ দিলেন প্রতিবাদ কর্মসূচি হিসেবে বিরোধীদের ‘পাছা দেখানো’র। ব্যস, তুমুল হইচই। বঙ্গের অমন ধোপদুরস্ত কাপড়ে এ কী ভয়ানক কাদার ছিটে! মহা গেরোয় পড়লেন কমরেড। বিস্তর বইপত্র ঘেঁটে প্রমাণ দাখিল করলেন, তিনি যা বলেছেন, তা আদৌ অশ্লীল কথা নয়। কিন্তু শোনে কে! তা, কমরেডের জেনে রাখা ভাল যে, ‘নিতম্ব-প্রদর্শন’ থেরাপির স্বত্ব কেবল তাঁরই একচেটিয়া নয়। কানাডাতেও এক বার এমনই আবেদন গিয়েছিল নাগরিকদের কাছে। সেটা আবার ফাঁকা আওয়াজেই আটকে থাকেনি। রীতিমত স্টেজ পারফরমেন্সও হয়ে গিয়েছিল।
সেটা ২০০৯ সালের মাঝামাঝি। কানাডার সার্নিয়ায় এক নজরদার বেলুনকে নিয়ে বাসিন্দারা দারুণ অস্বস্তিতে পড়ে গেল। দিনকয়েক আগেই তাকে পোর্ট হুরন-এর আকাশে উড়িয়েছে এক বেসরকারি সংস্থা। হাই-টেক প্রযুক্তি। বেলুনটার মধ্যে ফিট করা রয়েছে প্রচণ্ড শক্তিশালী ক্যামেরা। ১৪ কিলোমিটার দূরের জাহাজের নামও অনায়াসে পড়তে পারে। এক বার যদি ইউ এস হোমল্যান্ড সিকিয়োরিটি-র নজরে আনা যায়, কোম্পানির পোয়া বারো। কিন্তু ক্যামেরা বসানো হল ঠিক শহরের দিকে তাক করে। খুব কম দূরত্বে এমন শক্তিশালী ক্যামেরা বসালে যা হয়। পুরোপুরি বেআব্রু হয়ে গেল জনজীবন। সরকারি দফতর থেকে শুরু করে বাড়ির টয়লেট— এক অদৃশ্য কৌতূহলী দৃষ্টি মেপে নিচ্ছে সব কিছু। রাস্তাঘাটে দোকানপাটের আড়ালে কেউ একটু শান্তিতে পরকীয়া করতেও পারবে না! কে বলতে পারে, উড়ন্ত পরদার ফাঁক দিয়ে একান্ত গোপন কর্মটিও হয়তো গিলে খাচ্ছে মনিটরের সামনে বসা কয়েক জোড়া চোখ। ফলে বেজায় চটল সাধারণ মানুষ। নাগরিকদের কাছে আবেদন গেল, এই বেয়াদপির প্রতিবাদ জানাও বেলুনকে পশ্চাদ্দেশ দেখিয়ে। হলও তা-ই। ১৫ অগস্ট সেন্টেনিয়াল পার্কে জড়ো হলেন ১৫০-২০০ জন মানুষ। জোর গলায় চলল কাউন্টডাউন। তার পর যেই না থ্রি-টু-ওয়ান-জিরো, অমনি এক সঙ্গে সব্বাই প্যান্ট, স্কার্ট ইত্যাদি খুলে বেলুনকে পশ্চাদ্দেশ দেখিয়ে ঝটপট বেরিয়ে গেলেন পার্ক ছেড়ে।
ওই বছরই মেয়েদের অন্তর্বাসকে হাতিয়ার করে ভারতে অন্য ধরনের এক প্রতিবাদ কর্মসূচি দানা বেঁধেছিল। ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র দিনকয়েক আগের ঘটনা। ম্যাঙ্গালোরের একটি পানশালায় তাণ্ডব চালাল এক উগ্র হিন্দু সংগঠন। অভিযোগ, ভারতীয় সংস্কৃতির গায়ে আচ্ছাসে কাদা মাখাচ্ছে পানশালায় হাজির ওই মেয়েরা। গোটা দেশ যখন এই তাণ্ডবকে ছি-ছি করছে, ঠিক তখনই এক কট্টরপন্থী হিন্দু দলের প্রধান জোর গলায় সমর্থন করলেন এই আক্রমণকে— যা হয়েছে, উচিত কাজই হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, খোলাখুলি হুমকি দিলেন— ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে প্রেমিক-প্রেমিকা এক সঙ্গে বেরোলেই সোজা ছাঁদনাতলায় নিয়ে যাওয়া হবে। এই দল আবার নিছক বুলি কপচানোতে নয়, হাতেকলমে করে দেখানোর জন্য বিখ্যাত। তো, এদের রুখতে প্রথাগত পদ্ধতিগুলো কী? তুমুল লেখালিখি, চ্যানেলে চ্যানেলে আলোচনা, খানিক ধরপাকড়? প্রতিবাদ হল, কিন্তু অন্য কায়দায়। সৌজন্যে ‘কনসর্টিয়াম অব পাব-গোয়িং, লুজ অ্যান্ড ফরওয়ার্ড উইমেন’। সোশাল নেটওয়ার্কিং সিস্টেমকে হাতিয়ার করে ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র দিনই সেই নেতার অফিসের ঠিকানায় গোলাপি চাড্ডি (প্যান্টি) পাঠানোর আবেদন গেল সারা দেশের কাছে। ‘পিঙ্ক চাড্ডি ক্যাম্পেন’। সঙ্গে সঙ্গে বিপুল সাড়া। এক দিনেই নাকি প্রায় পাঁচশো প্যান্টি কুরিয়ার মারফত পৌঁছেছিল নির্দিষ্ট ঠিকানায়। ভয়ানক বিব্রত সেই নেতা শেষমেশ তাঁর হুমকি ফিরিয়ে নেন।
দুই-ই প্রতিবাদ। কিন্তু একেবারে অন্য ধারার। পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানারে মোড়া কাগুজে বিক্ষোভ নয়, যখনতখন রাস্তার মোড় ঘিরে ছাত্রছাত্রী-অফিসযাত্রীদের কালঘাম ছুটিয়ে দেওয়া নয়, হরতাল ডেকে দিন-আনি-দিন-খাই’দের পেটে কিল মারাও নয়। মিছিল-হরতাল আমজনতার সমর্থনের চেয়ে গালাগাল কুড়োয় অনেক বেশি। তাই অল্প সময়ে প্রবল হইচই পাকিয়ে দিতে এবং সবার নজর টেনে আনতে দরকার জবরদস্ত এক ধাক্কা। যার জেরে মুখ লুকোনোর জায়গাটুকু যেন হাতড়ে ফেরে অপকম্মের পান্ডা।
ইংল্যান্ডের এক কাফে-মালিকের যে দশা করে ছেড়েছিল ‘ল্যাকটিভিস্ট’-রা! ওই কাফে-তে এক মা তাঁর দুধের শিশুকে ব্রেস্টফিডিং করিয়েছিলেন সকলের চোখের সামনেই, আড়ালটাড়াল না মেনে। এর জন্য পরিবেশনকারী মহিলা তাঁকে যাচ্ছেতাই অপমান করে। খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় শ’দুয়েক মা নিজেদের ‘ল্যাকটিভিস্ট’ নাম দিয়ে সন্তান কোলে হাজির হন কাফে-র সামনে। খুল্লমখুল্লা চলে শিশুকে স্তন্যপান করানো। ক’দিন পর দেখা যায় দোকানে সামনে একটি বোর্ড টাঙানো— এখানে স্তন্যপানে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই।
লাইবেরিয়া। ১৪ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে গোটা দেশের গায়ে তখন দগদগে কালশিটে। তাই, যত দিন না দেশে শান্তি ফেরে, তত দিন পর্যন্ত মেয়েরা স্বামীদের সঙ্গে মিলিত হবে না— এমনই প্রতিরোধের ডাক দেয় লাইবেরিয়ার ‘উইমেন অব লাইবেরিয়া মাস অ্যাকশন ফর পিস’ নামের একটি সংগঠন, ২০০৩ সালে। এমন প্রতিবাদ কত দূর সফল হতে পারে, তা নিয়ে এর আগে তর্ক চলেছে বহু। আগামীতেও চলবে। কিন্তু ঘটনা হল, ২০০৩ সালেই লাইবেরিয়ায় শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করা হয় এবং আফ্রিকা পায় তার প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি। যৌন-অবরোধ হয়তো একেবারে ব্যর্থ হয়নি। তাই আফ্রিকার আর এক দেশ টোগো-তে প্রেসিডেন্ট ফয়্র নাসিংবে-র পরিবার যখন চার দশকের বেশি সময় ধরে গদি কামড়ে থাকে, তখন টোগোর মেয়েরাও ঝুলি থেকে একই অস্ত্র বের করেন। এই অস্ত্রের মূল কাজটা কি পুরুষদের বলা, যদি সমাধান না খোঁজো, তবে যৌন উপোসের কষ্ট পাও? না কি, পুরুষ যাতে অন্য কিছুতে ব্যস্ত না থেকে, রাজনৈতিক আন্দোলনে প্রাণপণ মন দেয়, তার অনুপ্রেরণা জোগানো? হয়তো দু’টোই। তবে, সেক্স-স্ট্রাইক একেবারেই হাল-আমলের প্রতিবাদ নয়। অ্যারিস্টোফেনিস-এর গ্রিক কমেডি ‘লাইসিস্ত্রাতা’য় নারী-চরিত্ররাও পেলোপনেশিয় যুদ্ধের অবসান চেয়ে স্বামীদের সঙ্গে সহবাসে দাঁড়ি টেনেছিলেন। তবে, টোগো-য় যত দিন ধরে অবরোধ চালানোর কথা বলা হয়েছিল, তা নিয়ে বিস্তর আপত্তি উঠেছিল।
তা, প্রতীকী প্রতিবাদের গায়ে এমন টুকটাক বিতর্ক লেগেই থাকে। লেজুড় হিসেবে। তার তোয়াক্কা প্রতিবাদীরা তেমন করেন না। ডিভোর্সের পর সন্তানের কাস্টডি মা পেলে, বাবারা ইচ্ছেমত ছেলেমেয়েকে কাছে পান না। ধীরে ধীরে সন্তানের জীবন থেকে তাঁরা হারিয়েই যান। এই অবিচার রুখতে ইংল্যান্ডে এক বার ডিভোর্সি বাবারা স্পাইডারম্যান, ব্যাটম্যানের মতো সুপারহিরোর পোশাক পরে শহরের কয়েকটি উঁচু স্থাপত্যের মাথায় চড়ে বসেন। জোরালো দাবি। কিন্তু তাকে টেক্কা দিয়ে বেরিয়ে যায় এই মজার পোশাক-পরিকল্পনা। এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু এই আজব প্রতিবাদের ধাক্কায় গোটা শহরে যানবাহন যখন তালগোল পাকিয়ে যায়, মানুষ প্রবল খাপ্পা হয়ে ওঠেন।
স্পেনের এক দল মানুষ ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক সংকট আর ব্যয়সংকোচের প্রতিবাদ জানাতে ডায়াপার পরে পথে নামেন। ডায়াপারের সঙ্গে দাবির সুতো কোনখানে বাঁধা, তা অনেকেই বুঝে উঠতে পারেননি। কিন্তু বিচিত্র আইডিয়ার কল্যাণে সে বিক্ষোভও খবরের কাগজে ঠাঁই করে নেয়। কেন ডায়াপার, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই অর্ধেক দেশ জেনে ফেলে আসলে দাবিটা কী ছিল।
সাম্প্রতিক জুতো ছোড়ার ঘটনাগুলিকেই ধরা যাক। টার্গেট-তালিকা জুড়ে রয়েছেন হেভিওয়েটরা। সে আমলের মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে দিয়ে শুরু। ভারতে রয়েছেন মনমোহন সিংহ থেকে শুরু করে পি চিদম্বরম, ইয়েদুরাপ্পা, লালকৃষ্ণ আডবাণী। বিশ্ব তালিকা আলো করে আছেন ওয়েন জিয়াবাও, টোনি ব্লেয়ার, মাহমুদ আহমেদিনেজাদ। প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফও সদ্য এই তালিকায় নাম তুলেছেন। কিন্তু ক’জন কাজটাকে সমর্থন করেছেন! রাষ্ট্রনায়কদের দিকে জুতো ছুড়ে কোন সমস্যাই বা রাতারাতি মিটেছে! কিন্তু ওই যে, বিরাট হেডলাইন হয়েছে, এই মতে বিশ্বাসীরা সাধুবাদ জানিয়েছেন। এবং মিডিয়ার আনুকুল্যে আরও বড় পরিসরে পৌঁছতে পেরেছে দাবিটা। তাই তামাম সমালোচনাকে উড়িয়ে ক্রমশ লম্বা হচ্ছে জুতো ছোড়ার লিস্ট। রাজনৈতিক নেতা ও জুতোর বৈচিত্র যে ভাবে বেড়ে চলেছে, এই স্টাইলের প্রতিবাদ ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
কী ধরনের প্রতিবাদ হতে পারে, তা আগেভাগে বোঝা গেলে তাকে আটকানোও সহজ হয়। কিন্তু ওস্তাদের মারের আগাম আঁচ না মিললে ভারী গোলমাল। নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল ব্রাসেল্স-এর পুলিশদের। প্রতিবাদীদের অস্ত্র গোলাগুলি নয়, ইট-পাথর নয়, স্রেফ দুধ। তখন প্রচুর উৎপাদনে বাজারে দুধের দাম পড়েই চলেছে। প্রতিবাদ জানাতে এক দিন প্রায় আড়াই হাজার দুধ-চাষি ব্রাসেল্স-এ ‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন’-এর সদর দফতরের বাইরে জড়ো হন। ত্রিপল দিয়ে বানানো হয় একটা কৃত্রিম দুধপুকুর। বিশাল পাইপ দিয়ে লিটার লিটার দুধ ঢালা হতে থাকে তাতে। শুধু তা-ই নয়, পুলিশ যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে এল, তখন তাদের দিকে তাক করে গরুর বাঁট থেকে দুধ ছোড়া শুরু হল। ঢাল-তরোয়াল হাতে নিয়েও পুলিশ তখন নিধিরাম সর্দার। যথাসময়ে দুধ-বৃষ্টির হাতে পুলিশের নাজেহাল হওয়ার ছবি মহা আড়ম্বরে সংবাদপত্রে ঠাঁই পায়।
২০০৯ সালে কানেক্টিকাটের এক স্কুল কর্তৃপক্ষ সমস্ত ছাত্রছাত্রীর অভিভাবকদের হাতে একখানি চিঠি ধরান। চিঠির মূল বক্তব্য ছিল, স্কুল কম্পাউন্ড-এর ভিতর ছাত্রছাত্রীরা কেউ কাউকে শারীরিক ভাবে স্পর্শ করতে পারবে না। এমনকী পড়ুয়াদের ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ নিরিমিষ জড়িয়ে ধরা, পিঠ-চাপড়ানিকেও সাদা চোখে দেখা হবে না মোটেই। এর প্রতিবাদে স্কুলেরই এক পড়ুয়া ক্লাসে আসে নিজেকে ডাক্ট-টেপ দিয়ে মুড়ে। মনে পড়তে পারে, অস্কার-মঞ্চে গানের ‘অশ্লীল’ শব্দ সেন্সর করার প্রতিবাদে বিখ্যাত মার্কিন অভিনেতা রবিন উইলিয়াম্স ঠোঁটে ডাক্ট-টেপ এঁটে স্টেজে উঠেছিলেন।
কমিউনিস্ট চিনেও মাঝেমধ্যেই বিক্ষোভটিক্ষোভ হয়েই থাকে। কিন্তু প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাকে ‘চোপরও!’ হেঁকে ফের লাল দরজার আড়ালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তা-ও কিছু কিছু ফাঁক গলে বেরিয়ে পড়ে। এক বার এক জুতো কারখানার শ্রমিকরা মজুরির দাবিতে প্রতিবাদ শুরু করে। ধর্মঘটেও যোগ দেয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের বোজা চোখ কিছুতেই আর খোলে না। বাধ্য হয়ে শ্রমিকরা ফের কাজে যোগ দেন। তবে, অন্য স্ট্র্যাটেজি নিয়ে। বরাত পাওয়া সমস্ত জুতোর মাত্র একটি করে পাটি বানাতে থাকেন। লক্ষ ডলারের ক্ষতিতে হুঁশ ফেরে কর্তৃপক্ষের। শ্রমিকদের দাবি শেষমেশ মেটানো হয়। এ বছরের গোড়ার দিকে নাকি ফের চিনে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা গিয়েছে। একটি নাইটক্লাব নির্মাণের পর নির্মাণসংস্থাটি তার শ্রমিকদের বকেয়া টাকাকড়ি মেটায়নি। সুতরাং মালিকদের উদ্দেশ্যে তারা ‘গ্যাংনাম স্টাইল’ নেচেছে।
চিনেরই আর একটা ঘটনা। গুয়াংঝাও প্রদেশে রোববারের এক সকাল। হন্তদন্ত হয়ে পুরুষদের টয়লেটের দিকে এগোচ্ছিলেন ভদ্রলোক। ঠিক ঢোকার মুখে গেলেন আটকে। ‘স্যর, প্লিজ আপনি আর কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন। মেয়েদের বাথরুমের সামনে বিরাট লাইন। তাই ওই ভদ্রমহিলাকে আগে যেতে দেবেন প্লিজ’— অনুরোধ এক ছাত্রীর। পুরুষদের বাথরুমের দখল সে-দিন গিয়েছে এক দল কলেজ-পড়ুয়া কন্যের হাতে। তাদের দাবি, যদিও নারী-পুরুষ টয়লেটের অনুপাত প্রায় ১:১, তবু মহিলাদের টয়লেটের সামনে সর্ব ক্ষণ বিশাল লাইন। পুরুষরা তো যত্র-তত্র-সর্বত্র... মেয়েদের সে উপায় আছে না কি? ফলে, আজ খানিক অপেক্ষা করুক ওরাও। প্রতিবাদের পদ্ধতিতে চটে লাল পুরুষেরা। লাল-রঙা কর্তৃপক্ষ চটেমটে নতুন টয়লেট বানিয়েছেন কি না, জানা নেই।
আমাদের শহরে এমন উদ্ভট প্রতিবাদের কিস্সা নেই ভেবেছেন? একটি সংগঠন ২০০২-এ বলল, প্রেমিক-প্রেমিকাদের পক্ষে কলকাতা আদৌ নিরাপদ নয়। শহর জুড়ে চমৎকার বাগান, গঙ্গার ঘাট, লেকের ফুরফুরে হাওয়া— আছে সবই। ঝোপঝাড়েরও কমতি নেই। কিন্তু একটু আড়াল দেখে নিজেরটিকে নিয়ে যে-ই একটু ঘনিষ্ঠ হবেন, অমনি রুলের গুঁতো। আর চুমু খেলে তো রক্ষে নেই! ফাইন, গালাগাল, থানা। সুতরাং শহরে চাই নিরিবিলি একটি ‘লাভার্স পাকর্’। যেখানে খাকি উর্দির বেমক্কা দাপাদাপি নেই, দুর্বল মুহূর্তে ফোটোগ্রাফারের তোলা ছবি খবরের কাগজে ছেপে গিয়ে প্রবল দুর্বিপাক নেই। এই দাবিতে, বেরোল লাভার্স র্যালি। মেয়রের কাছে জমা দেওয়া হবে স্মারকলিপি। তার আগে, সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে প্রকাশ্যে যুগলরা পরস্পরকে চুমু খেয়েই জানাবে প্রতিবাদ। পরিকল্পনা মোতাবেক জমায়েত হল। কিন্তু একটি ছেলে তার পাশের মেয়েটিকে চুমু খেতেই মহা বিপত্তি। ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠল মেয়ে। চুমু খাওয়া ছেলেটি নাকি তার জামাইবাবু! বেড়াতে এনেছিল। মুখরোচক প্রতিবাদে কখন ভিড়ে গেছে, শালিটি জানতেই পারেনি!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.