‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’-এ
চাপা পড়ল গম্ভীর
স্বজনপোষণ, রাজনীতির একটা সীমা থাকে। শনিবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল নির্বাচনী সভার পরিণতি দেখে মনে হচ্ছে, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কাছে রাজনীতির ক্লাস নিতে পারেন আমাদের দেশের নেতারা!
আমাকে বলতে পারেন, কোন যুক্তিতে গৌতম গম্ভীরের জায়গায় নেওয়া হয় মুরলী বিজয়কে? চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হবে ইংল্যান্ডে। বল মুভ করবে। ওখানে যেমন ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান দরকার, ঠিক তেমনই টেকনিক্যালি সাউন্ড ব্যাটসম্যানকেও লাগবে। বিশেষ করে যখন স্লটটা ওপেনারের। নতুন বল সামলে দ্রুত রান করার ব্যাপারে গম্ভীর কিন্তু বিজয়ের থেকে কয়েকশো মাইল এগিয়ে।
তা হলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল কেন এ রকম হল? সাধারণ বোধবুদ্ধিতে এমন দল নির্বাচনের ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। দেখে মনে হল আইপিএলের পারফরম্যান্সকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আইপিএলই যদি মাপকাঠি হবে, তা হলেও গম্ভীরকে বাইরে রাখার যুক্তি নেই। কী ভাবে ওর জায়গায় ঢুকে পড়ল আইপিএলে কিছুই না করা মুরলী বিজয়?
সবচেয়ে আশ্চর্য হচ্ছি দেখে যে, মুরলীকে চেন্নাই বসিয়ে রেখেছে। ওর জায়গায় ঋদ্ধিমান সাহাকে দিয়ে ওপেন করাচ্ছে। বলা হচ্ছে মুরলীর নাকি চোট আছে। যা নিয়ে আমি খুব একটা নিশ্চিত হতে পারছি না। আর চোটই যদি থাকে, তা হলে জাতীয় দলে ঢোকানো হল কেন? কেন ফিটনেস টেস্ট নেওয়া হল না?
আমার তো মনে হয়, গম্ভীর ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’-এ চাপা পড়ল। যত দিন যাচ্ছে, দেখছি ধোনি (ও তো আর ঝাড়খণ্ডের নয়, এখন চেন্নাইয়েরই ছেলে) আস্তে আস্তে টিম থেকে সিনিয়রদের ছেঁটে ফেলছে। তার উপর ওর সঙ্গে যে রয়েছে স্বয়ং সুপার সিলেক্টর। বোর্ড প্রেসিডেন্ট শ্রীনিবাসনের হাত মাথায় থাকলে আর সমস্যা কী? যা চাইছে, তাই তো পেয়ে যাচ্ছে ধোনি।
এই অবস্থায় মানসিক ভাবে গম্ভীর একটা বিরাট ধাক্কা খাবে। আমি গম্ভীর হলে আজ নিজেকে জিজ্ঞেস করতাম, তা হলে কি আমি ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলছি না? আইপিএলে কি এতই খারাপ করলাম যে ভারতের পনেরো জনের টিমে থাকার যোগ্যতাও আমার নেই?
আইপিএল সিক্সে
মুরলী বিজয়
ম্যাচ ৮, রান ১২২, সর্বোচ্চ ৫০ ন. আ, গড় ১৭.৪২, স্ট্রাইক রেট ৯৩.৮৪
গৌতম গম্ভীর
ম্যাচ ১১, রান ৩২০, সর্বোচ্চ ৬০, গড় ২৯.০৯, স্ট্রাইক রেট ১২৯.০৩
ভারতের জার্সিতে
মুরলী বিজয় (ওয়ান ডে-তে ফেব্রুয়ারি ’১০ থেকে জানুয়ারি ’১১)
ম্যাচ ১১, রান ১৯৬, সর্বোচ্চ ৩৩, গড় ১৭.৮১, স্ট্রাইক রেট ৬১.৮২
গৌতম গম্ভীর (শেষ ১০ ওয়ান ডে ম্যাচে)
রান ২৪৯, সর্বোচ্চ ৮৮, গড় ২৪.৯০, স্ট্রাইক রেট ৭১.৩৫
শুনলাম ২০১৫ বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে দল বাছা হয়েছে। যার জন্য অভিজ্ঞতার বদলে তারুণ্যের আমদানি। সেখানেও আমার প্রশ্ন থাকছে। বলতে পারেন, কেন রোহিত শর্মা ম্যাচের পর ম্যাচ ব্যর্থ হয়েও টিমে থাকবে, আর বাংলার মনোজ তিওয়ারি সেঞ্চুরি করেও বাইরে? বলতে পারেন, কী ভাবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজে দুর্দান্ত বল করা সামি আহমেদের জায়গায় ঢুকে পড়ে বিনয় কুমার?
আসলে মুশকিল হল, ভারতীয় ক্রিকেটে এখন চেন্নাই লাইনটা খুব চলছে। আপনি সিএসকে-র ক্রিকেটার হলে দলে জায়গা পেতে বিশেষ অসুবিধে হবে না। বা অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনির স্নেহধন্য। রোহিত শর্মাকেই দেখুন। কী করেছে রোহিত? প্রায় একশোটা ওয়ান ডে খেলে ফেলল। একটাও বলার মতো পারফরম্যান্স আছে? গড় তো কুড়িরও কম! শুধু আইপিএল পারফরম্যান্স দিয়েই দলে থেকে গেল।
আমি বুঝে পাচ্ছি না, একটা ওয়ান ডে সিরিজের দল নির্বাচন কী ভাবে টি-টোয়েন্টি পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে হয়? টিমের নামগুলো দেখলে ধাঁধায় পড়ে যাবেন। মনে হবে খারাপটা কী হয়েছে? কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, জুনের ইংল্যান্ডে সুইং সামলাতে না পেরে ভারত যদি ১০-৩ হয়ে যায়, তা হলে টিমটাকে ধরবে কে? শিখর ধবন, কোহলি, রায়না, জাডেজা সবাই তো চালাতে ভালবাসে। দীনেশ কার্তিককে দেখলাম দ্বিতীয় কিপার হিসেবে নেওয়া হয়েছে। টুর্নামেন্ট লম্বা হলে, ম্যাচ বেশি খেলতে হলে দ্বিতীয় উইকেটকিপার দরকার হয়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তো খেলতে হবে পাঁচ-ছ’টা ম্যাচ। দীনেশকে কি খুব দরকার ছিল? বিনয় কুমার আইপিএলে ভাল বল করেছে। কিন্তু আইপিএলের স্লগ ওভারে দশ রান দিলেও সেটা ভাল বোলিং। ওয়ান ডে-তে একই জিনিস ঘটলে টিম ডুববে।
সব দেখে মনে হচ্ছে নির্বাচকেরা অনেক কিছুর সঙ্গেই আপস করেছেন। এক-এক জনের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে এক-এক রকম মাপকাঠি। তবে হ্যাঁ, একটা কথা বলতেই হবে। যুবরাজ সিংহ-কে বাদ দেওয়াটা কিন্তু সাহসী সিদ্ধান্ত। দেখে মনে হচ্ছে ও পুরো ফিট নয়। তা ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপের সময় ওর বয়স হবে ৩৩। সব কিছু মাথায় রেখে বলব, নির্বাচকদের এই সিদ্ধান্তের জন্য অন্তত ওদের সমালোচনা করাটা ঠিক হবে না।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দলে নেই গম্ভীর, যুবরাজ
আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য পনেরো জনের ভারতীয় স্কোয়াড থেকে বাদ পড়লেন গৌতম গম্ভীর ও যুবরাজ সিংহ। প্রায় তিন বছর পরে জাতীয় দলে ডাক পেলেন দীনেশ কার্তিক। যিনি পেপসি আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে দশ ম্যাচে ৩৩১ রান করে ফেলেছেন। চোট সারিয়ে দলে ফিরলেন পেসার উমেশ যাদব। এ ছাড়া পনেরো জনের স্কোয়াডে আছেন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে শিরোনামে উঠে আসা শিখর ধবন, ইরফান পাঠান, বিনয় কুমার এবং মুরলী বিজয়। দুই সিনিয়র বীরেন্দ্র সহবাগ ও হরভজন সিংহের জায়গা হয়নি। গত জানুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ ওয়ান ডে সিরিজ খেলে ভারত। গম্ভীর ও যুবরাজ ছাড়া সেই দল থেকে বাদ পড়েছেন চোট পাওয়া চেতেশ্বর পূজারা, অজিঙ্ক রাহানে ও বাংলার দুই পেসার অশোক দিন্দা এবং সামি আহমেদ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠেয় সিরিজে অবশ্য দলে ফিরতে পারেন গম্ভীর। ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ-শ্রীলঙ্কা ত্রিদেশীয় ওয়ান ডে সিরিজের স্কোয়াডে তাঁর নাম রয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পনেরো জন সম্ভাব্য ক্রিকেটার ছাড়াও ওই সিরিজের একুশ জনের স্কোয়াডে রয়েছেন গম্ভীর, মনোজ তিওয়ারি, প্রবীণ কুমার, সামি আহমেদ, অম্বাতি রায়ডু এবং রাহুল শর্মা।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পনেরো জনের দল
ধোনি (অধিনায়ক, উইকেটকিপার), শিখর ধবন, বিরাট কোহলি, সুরেশ রায়না, দীনেশ কার্তিক, মুরলী বিজয়, রোহিত শর্মা, রবীন্দ্র জাডেজা, অশ্বিন, ইরফান পাঠান, উমেশ যাদব, ভুবনেশ্বর কুমার, ইশান্ত শর্মা, অমিত মিশ্র, বিনয় কুমার।

এলেন: শিখর ধবন, দীনেশ কার্তিক, মুরলী বিজয়, ইরফান পাঠান, উমেশ যাদব, বিনয় কুমার।
গেলেন: অশোক দিন্দা, গৌতম গম্ভীর, সামি আহমেদ, যুবরাজ সিংহ, চেতেশ্বর পূজারা, অজিঙ্ক রাহানে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.