বিনোদন |
ডানা মেলতে চায়
মফস্সলের ‘বন্দি’ কৈশোর
সুজিষ্ণু মাহাতো • কলকাতা |
|
|
ডুয়ার্সের একটি জনপদ। নাম শিমুলগঞ্জ। এক সময় একটি কারখানা ঘিরে আবর্তিত হত বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এই মফস্সল শহরের অর্থনীতি। কারখানা বন্ধ হওয়ার পরে গোটা জনপদই যেন থমকে গিয়েছে। সবার মতোই গতানুগতিকতার গণ্ডিতে আবদ্ধ এলাকার শিশু-কিশোরদের জীবনও। তবে এই জনপদেই রয়েছে ফড়িং। সে স্বপ্ন দেখে এক দিন বাঁধন ছিঁড়ে উড়ে যাবে সাইবেরিয়ার পরিযায়ী পাখিদের মতো। কিশোর ফড়িং, ওরফে আনন্দ সাধুখাঁর গল্প নিয়েই ছবি তৈরি করেছেন ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী। মুক্তির অপেক্ষায় সেই ছবি।
জেলার মফস্সল শহরের কৈশোর জীবনের নানা বাস্তব দিক উঠে এসেছে ছবিতে। সেই কিশোরদের জীবনের দৈনন্দিন একঘেয়েমি। অনিশ্চয়তার আবহ। কেরিয়ার সংক্রান্ত ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা। সেই সীমার মধ্যে থেকেই চাওয়া-পাওয়ার গল্প। নেশার নিষিদ্ধ টান। এমএমএসের বিনোদনের স্বাদ। ফড়িংয়ের জীবনের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে সব কিছুই। ইন্দ্রনীল বললেন, “মানুষের জীবনের নানা পর্যায়ের মধ্যে শৈশব, যৌবন নিয়ে অনেক রোম্যান্টিসিজ্ম থাকে। কিন্তু কৈশোর বা বয়ঃসন্ধির সময়টা শারীরিক বা মানসিক সব দিক থেকেই একটা অন্য রকম সময়। এই সময়টা বাকি জীবনের নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও নেয়। এই বিষয় ছবির সংখ্যা খুবই কম। ফড়িংয়ের গল্পের মাধ্যমে আমি সেই নির্মাণ প্রক্রিয়াটাকেই ধরতে চেয়েছি।” |
‘ফড়িং’ ছবির একটি দৃশ্যে কিশোর অভিনেতা আকাশ অধিকারী। |
শিমুলগঞ্জের মতোই ফড়িংয়ের জীবনটাও যেন থমকে যাওয়া। বাবা কাজ করতেন কারখানায়। সেই কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পেশা হাতুড়ে ডাক্তারি। মা আচার তৈরি করে ঘরে ঘরে বিক্রি করেন। ফড়িং কিন্তু চায় উড়ে যেতে। মুক্তির আনন্দ সে খুঁজে পায় ডিসকভারি অ্যানিম্যাল প্ল্যানেটের মতো চ্যানেলে দেখানো দেশ-বিদেশের নানান গল্পে। স্কুলের পরীক্ষায় পাশ করতে না পারলেও সিলেবাসের অনেক গল্পই তার থাকে মুখস্ত। মেট্রো শহর বাদে রাজ্যের জেলাগুলির মফস্সল শহরের কিশোরদের সিলেবাসের বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ কতটা? সেই প্রশ্নও থাকে ছবির গল্পে।
জেলার শহর বা আধা শহরের কিশোর জীবনকে মেট্রো শহরের ইঁদুর দৌড়ে যোগ দিতে হয় না। সেই জীবন পায় প্রকৃতির অনেকটা বেশি সান্নিধ্য। তবু, জেলার শহরের কিশোরদের লুকিয়ে থাকা অন্য সত্তার বিকাশের পরিসর কি থাকে? ক্লাস সেভেন-এ ফেল করে ফড়িং। সেই সময়ে স্কুলে চাকরি নিয়ে আসে প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্রী দোয়েল। ইতিহাসের শিক্ষিকা দোয়েল আবিষ্কার করে ফড়িংয়ের অনুসন্ধিৎসু মন। কল্পনাপ্রবণ সত্তা। ফড়িং দোয়েলের মাধ্যমে নিজের এই দিকগুলি চিনতে শেখে। কিন্তু বাস্তবে কি এই সব সত্তা বিকাশের সুযোগ পায়? নাকি হারিয়ে যায় গতানুগতিকতায়? ফড়িংয়ের কৈশোর জীবন তুলে দেয় সেই প্রশ্নও।
ছবিতে ফড়িং-এর চরিত্রে অভিনয় করেছেন আকাশ অধিকারী, দোয়েলের চরিত্রে সোহিনী সরকার। এছাড়াও রয়েছেন, ঋত্বিক চক্রবর্তী, দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। মুক্তি পাওয়ার আগেই পুরস্কৃত হয়েছে ছবিটি। এনএফডিসি’র ওয়ার্ক ইন প্রোগ্রেস ল্যাব-এ গত বছরের সেরা প্রজেক্ট হিসেবে পুরস্কৃত করা হয় ‘ফড়িং’-কে। পরিচালক ইন্দ্রনীল পেয়েছেন প্রসাদ স্টুডিয়োর ‘ডি আই’ পুরস্কার, যা ছবিটিকে নিখরচায় আংশিক কারিগরি সহায়তা দেবে। |