গল্পটা চেনা, স্থান-কাল-পাত্র আলাদা। লগ্নি সংস্থার জালিয়াতির কারবারে শুধু পশ্চিমবঙ্গই জর্জরিত নয়। মানুষ ঠকিয়ে টাকা হাতানোর কারবার মাথা তুলেছে ব্রিটেনেও। শুধু তাই নয়, লগ্নি সংস্থায় বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের তালিকায় উঠে আসছে সমাজের উঁচু স্তরের বিখ্যাত মানুষদের নাম।
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত লেখক হানিফ কুরেশি। ‘মাই বিউটিফুল লন্ড্রেট’, ‘বুদ্ধা অফ সাবার্বিয়া’ ইত্যাদি বেস্টসেলার বইয়ের রচয়িতা। তাঁর সারা জীবনের সঞ্চয় এক লক্ষ ২০ হাজার পাউন্ড খুইয়েছেন এ রকমই একটি সংস্থায় জমি-বাড়ি সংক্রান্ত বিনিয়োগে।
ব্যক্তিগত হিসাব রক্ষক অ্যাডাম ওয়রিকরের প্রস্তাবেই লগ্নি সংস্থায় অর্থ বিনিয়োগ করতে রাজি হন কুরেশি। উত্তর লন্ডনের একটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট সংস্থা ফিশার ফিলিপসের অংশীদার ছিলেন ওয়রিকর। কুরেশি স্বীকার করেছেন, অর্থনৈতিক লেনদেনের ব্যাপারে তাঁর জ্ঞান সীমিত। তাই প্রস্তাবিত সংস্থায় কুরেশিকে বিনিয়োগে রাজি করাতে ওয়রিকরকে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয়নি।
গত বছর ওয়রিকর কুরেশিকে একটি লোভনীয় বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, তাঁর অনেক মক্কেলই এই বিনিয়োগে উৎসাহী, বহু লেখকও তাঁর প্রস্তাবিত লগ্নি সংস্থায় বিনিয়োগ করছেন। এক রকম ভাবনাচিন্তা না করেই সায় দিয়ে বসেন কুরেশি। ফিশার ফিলিপস সংস্থার লেটার হেডে লেখা একটি চিঠিও পান কুরেশি। চিঠিটির মর্মার্থ ছিল, ১২০ দিনের জন্য লগ্নি করলে মূল টাকার ১৫ শতাংশ অতিরিক্ত পাওয়া যাবে। চিঠিটি যে নেহাতই জাল ছিল, তা বুঝতে পারেননি লেখক মানুষটি।
প্রথম বার ৫০ হাজার পাউন্ড লগ্নি করার পর প্রতিশ্রুতি মতোই নির্ধারিত অঙ্কের সুদ পান তিনি। তার পর গত বছর মে মাসে ৭০ হাজার পাউন্ডের দ্বিতীয় লগ্নিটিও করে বসেন।
এর পরেই একটি ফোন আসে ফিশার ফিলিপস সংস্থার পক্ষ থেকে। কুরেশি বলেছেন, “কর্তৃপক্ষ জানান, অ্যাডাম ওয়রিকরকে সংস্থা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমার টাকা ফেরতের আশা নেই। ক্ষতিপূরণ দূরের কথা, কোনও কথাই শুনতে চান না তাঁরা।” শুক্রবার সংস্থার পক্ষ থেকে সরাসরি অস্বীকার করা হয় কুরেশির লগ্নির কথা। জানানো হয়, ওয়রিকর তাঁদের সংস্থায় কাজই করতেন না। বিনিয়োগের সব অর্থ ওয়রিকরের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। মার্চে গ্রেফতার হয়েছে ওয়রিকর।
সম্প্রতি ‘কম্যান্ডার অফ দি অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার’ সম্মানে ভূষিত হানিফ কুরেশি বলেছেন, “যে অর্থ খোয়া গেল তা আমার সারা লেখক জীবনের যাবতীয় ওঠাপড়া থেকে সঞ্চিত হয়েছিল।” |