প্রায় ২১ বছর আগে কলকাতার একটি হাসপাতালে মারা যান শিলিগুড়ির বাবুপাড়ার বাসিন্দা পূবালী সেনগুপ্ত। শহরের প্রবীণ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ কৃষ্ণচন্দ্র মিত্রে’র বিরুদ্ধে স্ত্রী’র চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে আদালতের দ্বারস্থ হন স্বামী বিপ্লব সেনগুপ্ত। দুই দশক মামলা চলার পর গত মঙ্গলবার শিলিগুড়ির সিভিল জজ (সিনিয়র ডিভিশন) সঞ্জয় পাল ওই চিকিৎসককে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫ লক্ষ টাকা তিন মাসের মধ্যে বিপ্লববাবুকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যথায়, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছে আদালত। পাশাপাশি, ওই চিকিৎসকের করা বিপ্লববাবুর বিরুদ্ধে ১০ লক্ষ টাকার মানহানির মামলাটাও খারিজ করে দিয়েছেন বিচারক।
বিপ্লববাবুর আইনজীবী সুনীল সরকার বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে মামলা লড়তে হয়েছে। বহু সাক্ষীকে আদালতে আনতে বহু সময় লেগেছে। কয়েকজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি পর্যন্ত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আমরা জিতেছি।” আর মৃতার স্বামী পেশায় শিক্ষক বিপ্লববাবু বলেন, “ওই প্রবীণ চিকিৎসকের নার্সিংহোমে থাকাকালীন স্ত্রী ‘সেপটিসেমিয়া’য় আক্রান্ত হয়। উনি সঠিক চিকিৎসা না করে স্ত্রীকে বিমানে স্ত্রীকে কলকাতায় অন্য নার্সিংহোমে পাঠান। সেখানে সব ধরা পড়ে। তার পরে স্ত্রী মারা যান। আশা না ছেড়ে আইনি লড়াই চালিয়ে গিয়েছি।”
ঠিক চিকিৎসা বা গাফিলতির বিষয়টি মানতে নারাজ প্রবীণ চিকিৎসক কৃষ্ণচন্দ্রবাবু। তিনি বলেন, “আমি চিকিৎসা করিনি এটা ভেবে খুবই অপমানিত বোধ করছি। এখান থেকে কলকাতা যাওয়ার অনেকদিন পরে পূবালীদেবী মারা যান। এখানে তাঁর সুস্থ সন্তানও হয়। আরও বিশিষ্ট চিকিৎসকেরা তাঁকে দেখেছিলেন। অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো হয়েছিল। কোথাও কিছু ছিল না। জ্বর নিয়ে উনি ভর্তি হয়েছিল। তা যাই হোক, আদালতের নির্দেশের কপি হাতে পাইনি।” তবে অবশ্যই হাইকোর্টে নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিল করব বলে প্রবীণ চিকিৎসক জানিয়েছেন।
আদালত সূত্রের খবর, এই মামলাকে শিলিগুড়ি জুড়ে হইচই হওয়ায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর নির্দেশে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রশান্ত শূর তদন্ত কমিশন গঠন করেন। ওই সংক্রান্ত মামলায় তখন আদালতের নির্দেশে হাজিরা দিতে হয়েছিল সেই সময়কার স্থানীয় বিধায়ক তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য থেকে শুরু একাধিক চিকিৎসককে। গত বছরের ২ অগস্ট মামলা সওয়াল জবাব শেষ হয়। তার পরে প্রায় নয় মাস আইন, চিকিৎসাশাস্ত্রের নানা খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখার পর বিচারক ১০০ পাতার ওই রায় দিয়েছেন।
মামলার আইনজীবী সুনীলবাবু জানিয়েছেন, ১৯৯১ সালের জুন মাসে গর্ভবতী হওয়ার পর থেকে পূবালীদেবী কৃষ্ণ চন্দ্র মিত্রের অধীনে ছিলেন। ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর সামান্য জ্বর নিয়ে পূবালীদেবী হাসপাতালে ভর্তি হন। ১৯৯২ সালের ১ জানুয়ারি পুত্র সন্তান প্রসব করেন। এর পরে তাঁর জ্বর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। প্রখমে ওই চিকিৎসক নিজে পরে শহরে আরও কয়েকজন বিশিষ্ট চিকিৎসককে ডেকে রোগীকে দেখান। নানা পরীক্ষাও করেন।
শেষ অবধি ৯ জানুয়ারি বিমানে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। ১৩ জানুয়ারি সেখানকার চিকিৎসক সেপটিসেমিয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেন। টানা চেষ্টার পরেও ২১ জানুয়ারি পূবালীদেবী মারা যান। সেই সময় তাঁর ছেলের বয়স ২১ দিন ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে বিপ্লববাবু আদালতের দ্বারস্থ হন। বিপ্লববাবু জানান, পূবালী সেনগুপ্ত স্মৃতি সংস্থা শহরের একটি অন্যতম পরিচিত নাম। আদালতের নির্দেশ টাকা পেলে তা দুঃস্থ শিশুদের কল্যাণে খরচ করব। হাইকোর্টে মামলা হলেও আমি সেই মামলা লড়ব। |