ভোগান্তি রোগিণীর
সাপে কাটার চিকিৎসা-বিধি শিকেয়
সাপে কামড়ানো রোগীর যথাযথ চিকিৎসা করতে ঘটা করে ‘স্নেকবাইট প্রোটোকল’ তৈরি করেছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু ২০১৩ সালে দাঁড়িয়ে সম্প্রতি হুগলির মীরা দাসকে নিয়ে দু’দিন যা টানাপোড়েন চলেছে, তাতে স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশই স্বীকার করছেন, এই ‘প্রোটোকল’ সম্পূর্ণ প্রহসনে পরিণত হয়েছে।
হুগলির সিঙ্গুরের হাতিশালা গ্রামের বাসিন্দা, বছর বাহান্নর মীরা দাসকে সাপে কামড়ানোর ঘটনায় দুই সরকারি হাসপাতালে দু’দুবার সরকারি প্রোটোকল লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তার জেরে প্রায় প্রাণ হারাতে বসেছিলেন মীরাদেবী। শুধু তা-ই নয়, সাপে কামড়ানোর ওষুধ ‘অ্যান্টি স্নেক ভেনাম সেরাম’ (এভিএস) প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্তর থেকে মজুত রাখা বাধ্যতামূলক। সেখানে এই ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে, কলকাতার নামী সরকারি হাসপাতালে অনেক সময়ে এই ওষুধ থাকছে না। তখন হাজার-হাজার টাকার এই জীবনদায়ী ওষুধ রোগী বাইরে থেকে কিনতে না-পারলে মৃত্যু অবধারিত।
রাজ্যে সাপের কামড়ের চিকিৎসা নিয়ে সচেতনতা অভিযান চালানো একটি সংস্থা মীরাদেবীর তরফে স্বাস্থ্য দফতরে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। তাতে বলা হয়েছে গত ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় মীরাদেবীকে সাপে কামড়ায়। সাপটি নির্বিষ ছিল। সেটা বারবার জানানো সত্ত্বেও সিঙ্গুর গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জোর করে তাঁকে এভিএস দিয়ে দেন বলে অভিযোগ। এভিএস দেওয়ার পরেই মীরাদেবীর জ্ঞান চলে যায় এবং খিঁচুনি হতে থাকে। তখন তাঁকে কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয়।
সেখানে পৌঁছেও আর এক কাণ্ড। শম্ভুনাথের চিকিৎসকেরা আবার উল্টে মীরাদেবীকে এভিএস দেওয়ার জন্য জোর করতে থাকেন বলে অভিযোগ ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও মীরাদেবীর পরিজনদের। মীরাদেবীর আত্মীয় তথা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য বিশাল সাঁতরার দাবি, “শম্ভুনাথের ডাক্তারবাবুরা বলতে থাকেন, এভিএস নাকি দিতেই হবে! হাসপাতালে ওই ওষুধ ছিল না। তাই বাইরের দোকান থেকে ১০ ভায়াল এভিএস সাড়ে ছ’হাজার টাকায় আমাদের কেনানো হয়। কিন্তু কেনার পরে সেটা রোগীকে দেওয়া হয়নি। পুরোটাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জমা নিয়ে নেন। ২৯ তারিখ রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।”
সিঙ্গুর গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তাঁদের যুক্তি, “আমরা কী করব? স্বাস্থ্য দফতরের প্রোটোকলে বলা আছে, সাপে কামড়ানোর রোগী এলেই বিষধর কী নির্বিষ সাপ, তা বিচার না-করেই এভিএস দিয়ে দিতে হবে।” শম্ভুনাথের ডাক্তারদেরও একই কথা। তাঁদের বাড়তি সংযোজন, “এভিএস দিতেই হবে, এ দিকে গত এক মাস ধরে আমাদের হাসপাতালে এভিএস সরবরাহ করছে না নির্দিষ্ট সংস্থা। তাই সেটা বাইরে থেকে কিনতে বলব না তো কী করব?”
সত্যি কি এমনই লেখা আছে প্রোটোকলে? প্রোটোকলের মূল রচয়িতা তথা স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাসের বক্তব্য, “আমরা বলেছি, কতগুলি লক্ষণ দেখে বুঝতে হবে কোন কেসে এভিএস দেওয়া যাবে। এখনও সব ডাক্তারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়নি বলে হয়তো কিছু সমস্যা হচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যে সবাই বুঝে যাবে।” আর শম্ভুনাথ কেন এভিএস কেনাল? স্বাস্থ্যকর্তাদের জবাব, “শম্ভুনাথ যে ওষুধ পাচ্ছে না, সেটা ঠিক সময়ে জানায়নি। তা হলে এটা হত না।”
এখন প্রশ্ন, শম্ভুনাথে ওষুধ কেনানো হল, কিন্তু রোগীকে দেওয়া হল না। তা হলে সেই এভিএস গেল কোথায়? অসিতবাবুর জবাব, “সেটা তদন্তসাপেক্ষ।”
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে বছরে সব চেয়ে বেশি মানুষের সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় এ রাজ্যেই। ২০১১-য় সারা ভারতে সাপের কামড়ে মারা গিয়েছিলেন ১৪৪০ জন, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা ছিলেন ৩৮০ জন। স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ এবং সাপে কামড়ানোর চিকিৎসা নিয়ে সচেতনতা অভিযান চালানো সংস্থাগুলির আশঙ্কা, এ রকম পরিস্থিতিতে প্রোটোকল সম্পর্কে স্বাস্থ্য দফতরের উদাসীনতা আরও অসংখ্য মৃত্যুকে ত্বরাণ্বিত করতে পারে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.