শিলিগুড়ির সেবক রোডের একটি হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ বহুবার জানানো সত্ত্বেও পুলিশ-প্রশাসন ও পুরসভা কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন তা নিয়ে ব্যবসায়ী মহলেই নানা রহস্য দানা বাঁধছে। ব্যবসায়ীদের অনেকের অভিযোগ, একশ্রেণির প্রভাবশালী নেতা-কর্তার সঙ্গে যোগাযোগের সুবাদেই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। মহানন্দাপাড়ার চানাপট্টির এক ব্যবসায়ী প্রদীপ্ত সরকারের বিরুদ্ধেও বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও পুরসভা ব্যবস্থা না-নেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। দু’টি ক্ষেত্রেই পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের যোগসাজশের আশঙ্কা করেছেন অভিযোগকারীরা। ওই ব্যবসায়ীর আমেরিকা প্রবাসী এক আত্মীয়া সর্বাণী মুখোপাধ্যায় সেখান থেকে বারবার পুরসভায় অভিযোগ করেও সাড়া পাচ্ছেন না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের অভিযোগ পৌঁছেছে। তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেবক রোডের ওই হোটেলের মালিকপক্ষের তরফে কাজল সরকার বলেন, “অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ ঠিক নয়। পুর কর্তৃপক্ষ দেখে কিছু থাকলে ভেঙে দিতে পারেন। ছাদের ছাউনি তৈরির জন্য পুরসভায় আবেদন করা হয়েছে। তারা অনুমোদন দিলে ভাল হয়। যে কংক্রিটের স্তম্ভ তৈরির অভিযোগ হচ্ছে সেগুলি পুরনো।”
ওই ভবনের অন্য ব্যবসায়ীদের দাবি, ওই বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি কংক্রিটের স্তম্ভ নতুুন তৈরি করেছেন। প্রায়ই নানা ভাবে অবৈধ নির্মাণ চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যান্য দোকানদার রতনলাল শর্মা, কুশ মিত্তাল, সঞ্জয় বনশালরা এই অভিযোগ জানাল। সঞ্জয়বাবু বলেন, “অবৈধ নির্মাণ হলেই তা বন্ধ করতে পুলিশকে জানানো হয়েছে। কোনও ক্ষেত্রেই তারা সদর্থক ভুমিকা নেননি। অবৈধ নির্মাণের জেরে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় তাদেরই নিতে হবে।” পুরসভার পূর্ত বিভাগের মেয়র পারিষদ সুজয় ঘটকেরও মত, “এ ক্ষেত্রে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” ওই ভবনের অবৈধ নির্মাণ নিয়ে সরব হন ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কমল অগ্রবাল।
মেয়র হোটেল-সহ শহরের একাধিক অবৈধ নির্মাণ নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই নানা অভিযোগ উঠে আসছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরসভা ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলে অভিযোগ। চানাপট্টি, বিধান রোড, বর্ধমান রোড, শেঠ শ্রীলাল মার্কেটে অবৈধ নির্মাণ নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছেন না কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষত, চানাপট্টির অবৈধ নির্মাণ নিয়ে সম্প্রতি স্থানীয় কংগ্রেস কাউন্সিলর রুমা নাথকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার ওঠে নির্মাতার বিরুদ্ধে। পুলিশে অভিযোগও জানান রুমাদেবী। বিষয়টি নিয়ে তিনিও ক্ষুব্ধ। প্রদীপ্তবাবু বলেন, “কী বলব! বিধি মেনে কাজ করছি। কেউ অভিযোগ করলে কী বলার থাকতে পারে!”
মেয়র অবশ্য এ দিনও জানিয়েছেন, দ্রুত এ ব্যাপারে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। মেয়র হোটেল এবং চানাপট্টির নির্মাণ কাজ দুটিই ২ নম্বর বরো এলাকার মধ্যে পড়ে। ওই বরো কমিটির চেয়ারম্যান গৌরী দত্ত বলেন, “অভিযোগ উঠলে দ্রুত দেখে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তাতে পুরবোর্ডের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ থাকবে।” |