শ্বশুরবাড়িতে আগুন দিল জামাই, স্ত্রী-সহ নিহত ছয়
স্ত্রী বর্তমান। তিনটি মেয়েও রয়েছে। তাও শ্যালিকাকে বিয়ে করার সাধ জেগেছিল তাহের আলির। তা নিয়েই শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে অশান্তির সূত্রপাত। তারই জেরে মঙ্গলবার রাতে তাহের শ্বশুরবাড়িতে হামলা চালান বলে অভিযোগ। পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন। পুড়ে মৃত্যু হয় তাহেরের স্ত্রী, শাশুড়ি-সহ শ্বশুরবাড়ির ৬ জনের। মৃতদের মধ্যে দেড় বছরের এক শিশুও আছে। তাহেরের শ্যালিকা-সহ ৫ জন হাসপাতালে চিকিত্‌সাধীন।
ক’দিন আগেই পারাবারিক বিবাদের জেরে স্ত্রী- ছেলে- বৌদি-ভাইপোকে খুন করে বাড়িতে আগুন ধরিয়েছিলেন কলকাতা সংলগ্ন আগরপাড়ার যুবক নেপাল দাস। এ বার ঘটনাস্থল পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত তাহের আলি পলাতক। তবে তাহেরের মা খুসমন বিবি-সহ পরিবারের ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে চার জনের বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তাহেরের ট্রাক্টর ও মোবাইল ফোন। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ওই ট্রাক্টরে চেপেই পরিচিত কয়েকজনকে নিয়ে মঙ্গলবার রাতে শ্বশুরবাড়িতে এসে অগ্নিকাণ্ড বাধায় গুণধর জামাই। জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
তাহেরের বাড়ি দাসপুরের বালিপোতায়। পেশায় গাড়ির চালক তাহেরের সঙ্গে প্রায় আট বছর আগে কেশপুর থানার বাগাগেড়িয়া গ্রামের মিনারা বিবির বিয়ে হয়। এই দম্পতির তিন মেয়ে। বয়স যথাযক্রমে ছয়, চার ও দেড় বছর।
অগ্নিকাণ্ডের পরে। —নিজস্ব চিত্র।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বছর খানেক আগে থেকে মিনারার বোন তোতা খাতুনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে তত্‌পর হন তাহের। বছর পনেরোর তোতাকে বিয়েরও প্রস্তাব দেন তিনি। মিনারা ও তাঁর বাড়ির লোকজন তা মানেননি। অশান্তির জেরে মেয়েদের নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে আসেন মিনারা।
মঙ্গলবার রাত বারোটা নাগাদ ট্রাক্টরে চেপে বাগাগেড়িয়ায় আসেন তাহের। সঙ্গে আরও কয়েক জন ছিলেন। বাড়ির অদূরে পাকা রাস্তায় ট্রাক্টর দাঁড় করিয়ে হেঁটে শ্বশুরবাড়ির কাছে আসেন তাহের ও তাঁর সঙ্গীরা। গরমকাল হওয়ায় সকলে দালানে ঘুমোচ্ছিলেন। দালানের তিন দিকে বাঁশের বেড়া। জানা গিয়েছে, ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বশুরবাড়ির সকলের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন তাহেররা। মুহূর্তে আগুন ছড়ায়। ইতিমধ্যে ট্রাক্টরে চেপে দলবল নিয়ে চম্পট দেন তাহের। ঘটনাস্থলেই মারা যায় দেড় বছরের রেশমা খাতুন। সে মিনারার ভাইয়ের মেয়ে। বাকি অগ্নিদ্বগ্ধদের উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিক্যালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে মারা যান মিনারা (২৯), তাঁর মা হাসেনা বিবি (৪৮), মিনারার ভাই শেখ রেজাউল (২৬) ও রেজাউলের স্ত্রী মোনিহারা বিবি (২২)। মিনারার খুড়তুতো ভাই শেখ আসাদুল (২২) বুধবার দুপুরে কলকাতার হাসপাতালে মারা যান। মিনারার তিন মেয়ে মুসকান, রুসকান ও রুবিনা, বোন তোতা এবং কাকিমা আসপিয়া বিবি হাসপাতালে চিকিত্‌সাধীন।
বাড়ির দালানে পড়েছিল পোড়া টেবিল ফ্যানটা। আশপাশে ছড়িয়েছিটিয়ে কাপড় চোপড়, চামড়ার টুকরো। দালানে প্রতিবেশীর ভিড়। সকলের চোখেই জল। গোটা ঘটনায় সকলে বিস্মিতও। মিনারার খুড়তোতো ভাই শেখ আসরাফুল আলি বলেন, “জামাইবাবু বাড়িতে আগুন দিয়ে সকলকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল। সত্যি যে তা করবে বুঝিনি।” আগুন লেগেছে শুনে ছুটে গিয়েছিলেন প্রতিবেশী মঞ্জুর হোসেন। তাঁর আক্ষেপ, “আগুন নেভানোর অনেক চেষ্টা করেছি। তা-ও সকলকে বাঁচাতে পারলাম না।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.