বিক্ষোভ-ভাঙচুর চলছেই, তালা পড়ছে লগ্নি সংস্থায়
সারদা কেলেঙ্কারি সামনে আসার পর বেশ কয়েকটা দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু এজেন্ট বা আমানতকারীদের কাছে এখনও আশার একবিন্দু আলো পৌঁছয়নি। তাই দুই মেদিনীপুরে কোথাও সারদার আমানতকারী আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন তো কোথাও এজেন্টদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ হচ্ছে। বিক্ষোভ-ভাঙচুর চলছে অন্য অর্থ লগ্নি সংস্থার অফিসেও। বুধবার দুপুরে চন্দ্রকোনার জাড়ায় বাড়িতেই বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন সারদার এক আমানতকারী। অরুণ দাস নামে ওই ব্যক্তি পৈতৃক জমি বিক্রি করে ৪০ হাজার টাকা সারদা-য় জমা রেখেছিলেন। সাত বছরে টাকা তিন গুণে ফেরত দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। পেশায় দিনমজুর অরুণবাবু ভেবেছিলেন মেয়ের বিয়ে দেবেন ওই টাকায়। অরুণবাবুর স্ত্রী কল্পনা দাসের অভিযোগ, “স্থানীয় এজেন্ট সমীর সাঁতরার আশ্বাসে টাকা রেখেছিলাম। সারদার এই অবস্থার কথা জেনে সমীরবাবুর কাছে টাকা চাইতে গেলে তিনি হুমকি দেন।” এরপরেই হতাশায় বিষ খান অরুণবাবু। বৃহস্পতিবার কল্পনাদেবী সারদা-র কর্ণধার সুদীপ্ত সেন, দেবযানী মুখোপাধ্যায়-সহ সমীর সাঁতরার বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়া, বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণার একাধিক ধারায় অভিযোগ করেছেন। এ দিকে বৃহস্পতিবার সকালে ঘাটাল থানার পুলিশ সারদার এক কর্মী সুরজিত্‌ মণ্ডল ও এজেন্ট প্রশান্ত পানকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে দু’টি গাড়ি। এদিনই ধৃতদের ঘাটাল আদালতে তোলা হলে বিচারক প্রশান্ত পানকে ১৪ দিন জেল হাজত এবং সুরজিত্‌ মণ্ডলকে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
মেচেদায় এমপিএস অফিসে তালা।
বৃহস্পতিবার সকালে টাকা চেয়ে মোহনপুরের নীলপুরা গ্রামে তৃণমূলের শিক্ষা সেলের ব্লক কমিটির সদস্য প্রবীর পাহাড়ীর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান বিলধারিয়া ও ওড়িশার বালেশ্বরের খয়েরদা থেকে আসা সারদার আমানতকারীরা। সরকার টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছেএই আশ্বাসে তাঁরা ফিরে যান। সারদার এজেন্ট হিসাবে উঠে এসেছে এলাকার আর এক তৃণমূল নেতার নাম। তিনি নীলদা অঞ্চল কমিটির সভাপতি ভাগবত প্রধান। প্রবীরবাবুর কথাতেই এজেন্ট হয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন ভাগবতবাবু। প্রবীরবাবু অবশ্য বলেন, “আমি নই, দাদা সারদা করেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।”
এ দিকে, সারদা ছাড়া অন্য অর্থলগ্নি সংস্থাগুলিতেও গণ্ডগোল চলছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মেচেদা বাজারে ৪১ নম্বর নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে এমপিএস গোষ্ঠীর অফিসের সামনে উত্তেজিত লোকজন ভাঙচুর চালান। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবারই এক আমানতকারী এমপিএস গোষ্ঠী টাকা ফেরত দিচ্ছে না বলে কোলাঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। এদিন আমানতকারীরা উত্তেজিত হয়ে মেচেদা অফিসে চড়াও হন এবং টাকা ফেরত চান। কর্মীরা তাতে রাজি না হলে উত্তেজনা বাড়ে। এই সময় কর্মীরা অফিসে তালা ঝুলিয়ে বেরিয়ে যান। পরে আরও আমানতকারীরা জড়ো হন সেখানে। অফিস বন্ধ দেখে সামনে থাকা বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও ডাকবাক্স ভাঙচুর করেন তাঁরা। আমানতকারী রাজীব ঘড়া বলেন, “আমি দেড় লক্ষ টাকা জমা দিয়েছিলাম। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও টাকা ফেরত পাচ্ছি না। এ দিন অফিসে গিয়ে দেখি তালা বন্ধ হয়ে রয়েছে।”
ঝাড়গ্রামে রোজ ভ্যালীর সামনে লাইন। —নিজস্ব চিত্র।
এ দিনই একদল আমানতকারী কাঁথি শহরের শেরপুরে ‘টাওয়ার ইনফোটেক লিমিটেড’ নামে একটি অর্থ লগ্নি সংস্থার অফিসে ভিড় করেন। একসঙ্গে এত জন আমানতকারীকে টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভবপর নয় জানিয়ে কর্মীরা অফিস বন্ধ করে দিলে আমানতকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ও অফিস ভাঙচুরের চেষ্টা করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
বৃহস্পতিবার দাসপুরের রাধাকান্তপুরে ‘রিয়েল বন্ড’ নামে একটি অর্থ লগ্নি সংস্থার এক কর্তা প্রণব মাঝির বাড়িতে ঘেরাও করেন আমানতকারী, এজেন্টরা। তাঁরা প্রণববাবুর বাড়িতে ভাঙচুরও চালান। উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতে প্রণববাবুর আত্মীয়েরা এগিয়ে এলে শুরু হয় বচসা। পরে তা হাতাহাতিতে পৌঁছয়। ঘটনায় দু’পক্ষের তিন জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে এক আমানতকারী টিঙ্কু কর্মকার গুরুতর জখম হয়ে দাসপুর হাসপাতালে ভর্তি। দাসপুর থানার ওসি ননীগোপাল দত্ত বলেন, “বেশ কয়েকমাস আগেই সংস্থাটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রণব মাঝি সংস্থার ডিরেক্টর পদে ছিলেন। তাঁর খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।”
এটিএম গ্রুপের ঝাড়গ্রাম শাখার চার কর্মীকে এ দিন গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মেয়াদ উত্তীর্ণের পরেও টাকা না- মেলায় আমানতকারীরা থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন। এই সংস্থার লালগড় অফিসে তালা ঝুলেছে। সঙ্গে নোটিস, ১৫ দিনের আগে কোনও আর্থিক লেনদেন হবে না সংস্থায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.